৭ মে ২০২৩ এমসিসি’র নিরসা অফিসে সিপিআই(এমএল) ও এমসিসি একটা বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এমএল) পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড জনার্দন প্রসাদ। বৈঠকে সিপিআই(এমএল) এবং এমসিসি’র অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঐ বৈঠকে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি পাশ হয়।
১) মোদী সরকারের ফ্যাসিবাদী হামলা দেশ এবং জনগণের জীবনে প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন অর্থনৈতিক এবং কর্পোরেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাচ্ছে। অবাধ বেসরকারিকরণ এবং শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার খর্ব করাটা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। শ্রমজীবী জনগণ, বিশেষভাবে উপজাতি সম্প্রদায়ের ওপরই কর্পোরেট লুট ও উচ্ছেদের ধাক্কাটা এসে পড়ছে। তাঁদের ওপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানিয়ে মহিলা কুস্তিগিররা এফআইআর করেছিলেন। এসত্ত্বেও বিজেপি অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ সরণ সিংকে মদত দিয়ে চলেছে এবং তা বিজেপির নারী-বিরোধী চরিত্রকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। বৈঠক মহিলা কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
২) মোদী সরকার সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সেগুলোকে দুর্বল করতে এবং এইভাবে রাষ্ট্রের লাগামহীন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লেগেছে। বিচারবিভাগ এবং তার সাথে নির্বাচন কমিশনের ওপর অসঙ্গত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিরোধীপক্ষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলোর অধিকারকে খর্ব করতে ইডি ও এনআইএ’র অপব্যবহার ঘটানো হচ্ছে। ঝাড়খণ্ড এই স্বেচ্ছাচারের সাক্ষ্য বহন করছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্ট্যানস্বামীর প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার পর অন্যান্য আন্দোলন কর্মীদের ওপর নিয়মিতভাবেই হামলা নামছে।
৩) বিজেপি ঝাড়খন্ডে তাদের নোংরা খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছে। দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি সরকার তার থেকে পিছিয়ে এসেছে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজে প্রদেয় মজুরি অনেক কম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদরা এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপি-আজসু আইনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং রাজ্যপালের কার্যালয়ের অপব্যবহার ঘটিয়ে খতিয়ান ভিত্তিক পরিকল্পনা নীতি, স্থানীয়ভিত্তিক নীতি এবং সংরক্ষণ নীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এরফলে যুবকদের ভবিষ্যৎ নিষ্প্রভ হয়ে পড়ছে, যে যুব সম্প্রদায়কে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে।
৪) মোদী সরকারের প্রতারণার বিরুদ্ধে সোরেন সরকার ও জেএমএম’এর নীরবতা অত্যন্ত হতাশজনক হয়েই দেখা দিচ্ছে। শুধু বিধানসভা এবং বিধায়কদের ওপর ভর করেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় ভিত্তিক কর্মনীতি তৈরির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যাবে না। শক্তিশালী রাস্তার আন্দোলনই এখন সময়ের দাবি যা বিজেপির দুমুখো নীতির উন্মোচন ঘটাবে এবং স্থানীয় উন্নয়নের ওপর ভর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মোদী সরকারকে বাধ্য করবে। উপরে উল্লেখিত নীতমালাগুলোকে নবম তফশিলের কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হলে তা রাস্তার এক দৃঢ় আন্দোলন হয়েই উঠবে যা একটু আগে দেওয়া লক্ষ্যের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারবে। হেমন্ত সোরেন সরকার এবং জেএমএম তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে বাধ্য হবে।
৫) কর্মসংস্থান এবং খতিয়ান ভিত্তিক বাসস্থানের ইস্যু দুটি এবং তার সাথে সংরক্ষণের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ইস্যুগুলোকে ধরে আন্দোলন শুরু করাটা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। এমসিসি এবং সিপিআই(এমএল) সব সময়েই ঝাড়খন্ডের জনগণের সংগ্রামের সামনের সারিতে থেকেছে। যুব জাগরণের কর্মসূচি রূপে ২৪ থেকে ৩১ মে ২০২৩ এক যৌথ প্রচারাভিযান শুরু হবে এবং স্থানীয় স্তরের প্রতিবাদগুলিকে সংগঠিত করা হবে।