স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’ যখন জাপানের হিরোশিমায়, ঠিক সেই দিন, ১৯ মে আরবিআই বাজার থেকে ২,০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করল। আর, সাথে সাথে ফিরে এল দেশে নোট বন্দির জুজু! ঠিক সাড়ে ছ’বছর আগে, ৮ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আচমকাই দেশের সমস্ত ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোট বাতিল করে দিয়ে দেশবাসীকে, দেশের অর্থনীতিকে বিরাট এক সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, যার অভিঘাত আজও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। ডি-মনিটাইজেশন বা আম জনতার পরিভাষায় যা নোটবন্দি হিসাবেই পরিচিতি পেল।
৮ নভেম্বর ২০১৬’র ঠিক দু’দিন পর নোটবন্দির সূতিকাগারে জন্ম নিল ২,০০০’র গোলাপী নোট। কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে মোদীর প্রচারিত এই নোটবন্দির উদ্দেশ্যকে তখন কতই না মনের মাধুরী মিশিয়ে গোদী মিডিয়া প্রচার করেছিল। বলা হয়েছিল, নতুন এই ২,০০০ টাকা নোটের ভেতর নাকি এমন এক চিপ রয়েছে যা অবৈধভাবে গচ্ছিত রাখলে প্রশাসন ঠিক তার হদিশ খুঁজে পাবে! এই নোট কালো টাকার বয়ে চলা স্রোতকে, জাল নোটকে ঠেকাবে। এদিকে, ক’দিন আগে মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন জানিয়েছেন, “৮০ শতাংশ গোলাপী নোটই কালো টাকা মজুত রাখতে কাজে লাগানো হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা”! এই নোট এবার বদলাতে পরিচয়পত্র বা প্রমাণপত্রের কোনো প্রয়োজন না থাকায় কালো টাকার মালিকদের আর নোটগুলো ‘সাদা’ করতে কোনো বাধাই থাকল না। ঠিক সাড়ে ছ’বছর পর সেই নোটকে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সময় আরবিআই বুঝল, এই নোট লেনদেনের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারল না — প্রথম প্রচলনের সময়েই যে কথা অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন। আরবিআই জানিয়েছে, ৩১ মার্চ ২০১৮-তে বাজারে ২,০০০ টাকার নোট ছিল ৬.৭৩ লক্ষ কোটি আর সেটাই তখন ছিল সর্বোচ্চ, যা মোট প্রচলিত সমস্ত নোটের ৩৭.৩ শতাংশ। ধাপে ধাপে তা কমে আসে আর ৩১ মার্চ ২০২৩-এ এসে দাঁড়ায় ৩.৬২ লক্ষ কোটিতে, যা মোট প্রচলিত নোটের মাত্র ১০.৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ থেকেই আরবিআই এই ২,০০০ টাকার নোট ছাপানো বন্ধ করে দেয়।
দেশবাসী দেখেছেন, রাতারাতি মোদী নোট বাতিল করে গোটা দেশকে কী চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদীদের উচিত শিক্ষা দেওয়া, কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, নগদ লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়া — বারবার গোলপোস্ট বদল করা হয় নোটবন্দিকে যুক্তিসম্মত হিসাবে প্রচার করতে। কিন্তু দেখা গেল, নগদ লেনদেন কমল না, উল্টে নোটবাতিলের পর তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কালো টাকা উদ্ধার হল না, ডিজিটাল অর্থনীতিও দূর অস্ত! আর উচিত শিক্ষা তো দূরে থাক, গণতান্ত্রিক আলাপ আলোচনা ছাড়াই চালু করে দেওয়া হল জিএসটি, অতিমারী ঠেকাতে হঠাৎ মোদীর ঘোষিত দেশব্যাপী লকডাউন — একের পর এক সর্বনাশা ধ্বংসাত্মক নীতি গোটা দেশকে নিয়ে গেছে খাদের কিনারে।
কর্নাটক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ ভারত বিজেপির মুখে উপর এঁটেছে তালা। আগামী দিনগুলোতে আসন্ন কয়েকটি রাজ্যের মানুষ এই ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে কী রায় দেয়, তার অপেক্ষায় গোটা ভারতবাসী।