দুর্নীতির বাহানায় পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিকের হকের মজুরি আটকে রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, আর এরাজ্যের বিজেপি সভাপতি বলছে গ্রামের মানুষের মধ্যে না কী একশ দিনের কাজের চাহিদা তেমন আর নেই। এই প্রসঙ্গে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি গত ২ মে এক বিবৃতি জারি করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ধিক্কার জানিয়েছে। তাঁরা সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিজেপির এই মানুষকে বোকা বানানোর শয়তানি রাজনীতিকে ধিক্কার জানাতে। বিবৃতিতে ‘সুকান্তবাবু’কে ধিক্কার জানিয়ে গ্রামীণ শ্রমিকেরা বলেছেন,
কাজটাই তো তুলে দিচ্ছেন, বন্ধ রেখে। তো, মানুষ কাজের চাহিদা জানাবে কোনো ভরসায়!
গ্রামে কাজ নেই, কারণ কৃষি ধুঁকছে। ধুঁকছে সরকারের নীতির কারণে।
কৃষিতে সরকারি বিনিয়োগের অভাবে এবং মোদী সরকার কৃষিজাত পণ্যে বাজারদামের গ্যারান্টি আইন না করার কারণে কৃষি ধুঁকছে। ফলে গ্রামে কাজ নেই।
গরিব, মেহনতি মানুষ ১০০ দিনের কাজের উপর ভরসা করে এ ক’বছর টিঁকে ছিল।
এখন আইন মোতাবেক ১০০ দিন কাজের সেই অধিকারও কেড়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘আদানি কোম্পানির দাস’ মোদী সরকার। ১০০ দিনের বদলে মোদী টাকা বরাদ্দ করেছে মাত্র ১৭ দিনের। কাজের আইন এমনভাবে বদলে দিয়েছে, (দিনে ২ বার ডিজিটাল হাজিরা, মাটি কাটার নিয়ম এমনভাবে বদল যাতে বেশি কাজ না করানো যায় ইত্যাদি) যাতে কাজ কমে যায়।
আইন মোতাবেক যে মজুরি ১৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে, সেই মজুরি পশ্চিমবঙ্গে আপনারা বকেয়া রেখেছেন ১৫ মাস। এই রাজ্যে গরিবদের নতুন এনআরইজিএ কাজও আপনারা বন্ধ রেখেছেন ১৫ মাস!
আপনারা এটাও ভুলে যান যে এই কাজ আপনার বা মোদীর পয়সায় চলে না। চলে জনগণের ট্যাক্সের পয়সায়!
এরাজ্যে, এ রাজ্যই বা বলি কেন, সারা দেশেই ১০০ দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতি চলছে। পশ্চিমবঙ্গে হয়তো বেশিই চলছে। আমরা প্রত্যেক দুর্নীতিগ্রস্তের শাস্তি চাই। সরকারি প্রকল্পে পাইপয়সার হিসাব চাই। তা সুনিশ্চিত করুন।
কিন্তু কাজ বন্ধ হবে কেন?
এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত তো গরিব মানুষ। এই প্রকল্পে যারা দুর্নীতি করেছে তেমন ক’জন দুর্নীতিগ্রস্তকে জেলে পুরেছে মোদী সরকার?
তা না করে দুর্নীতির বাহানায় আইনের ২৭ ধারা প্রয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গে কাজটাই তুলে দিচ্ছেন আপনারা! চাইছিলেন অনেক দিন থেকেই। নরেন্দ্র মোদী তো সেই ১৪ সালে দিল্লীর ক্ষমতায় বসেই আওয়াজ তোলেন যে ১০০ দিনের কাজ আসলে অপচয়! এই আইন তুলে দিতে হবে!
মনে পরে সুকান্তবাবু?
কাজ বন্ধ হলে ক্ষতি কার? মেহনতি মানুষের। গ্রামের গরিবদের।
গরিবদের আইনি অধিকার কেড়ে নিতে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মোদী সরকারের এই জঘন্য ষড়যন্ত্রকে আড়াল করতে আপনি, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, এখন সাংবাদিক বৈঠকে বলছেন, ১০০ দিনের কাজের চাহিদাই নেই?
অধ্যাপক মশাই, এবার আদানি-আম্বানিদের সেবাদাসত্ব একটু কম করে একবার একটু মাটিতে নেমে গ্রামের কর্মহীন মেহনতি মানুষটাকে জিজ্ঞাসা করুন, ১০০ দিনের কাজ তার কতটা দরকার! জিজ্ঞাসা করুন দেশগ্রামে কাজের অভাবে অসংখ্য মেহনতি, এমনকি ছোট ছোট ছেলেরাও বাইরের রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে কিনা? উত্তরটা পেয়ে যাবেন!
১০০ দিনের কাজের আইন ধীরে ধীরে কেড়ে নিতে চাইছেন! আজ নাহোক কাল, উত্তর নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন।
সুকান্তবাবু, সাধারণ মানুষকে বোকা ভাববেন না, যে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মানুষকে আণ্ডার এস্টিমেট করবেন না। মানুষ সব বোঝে।
একারণেই গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ সারা ভারত জুড়ে কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির নেতৃত্বে কোনায় কোনায় আওয়াজ উঠেছে, “১০০ দিনের কাজ ফিরিয়ে দাও; ১০০ নয়, এবার ২০০ দিনের কাজ দাও; ৬০০ টাকা মজুরি দাও”।