খবরা-খবর
ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ : ১৫ মার্চ “ইসলামফোবিয়া প্রতিরোধ দিবস”
islamophobia

১৫ মার্চ দিনটিকে বিশ্বজুড়ে “ইসলামফোবিয়া প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছে ইউনাইটেড নেশনসের সাধরণ সভায়।

“ইসলামফোবিয়া হল মুসলমানদের প্রতি ভয়, সন্দেহ ও ঘৃণা যা বিভিন্ন রকম উসকানি, শত্রুতা ও অসহিষ্ণুতার দিকে চালিত করে। অনলাইন বা অফলাইনে মুসলমান বা না-মুসলমানদের বিরুদ্ধে বহুবিধ হুমকি, হেনস্থা, প্ররোচনা, ত্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক, মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তা কাঠামোবদ্ধ ও সাংস্কৃতিক রেসিজমে পরিণত হয়, মুসলমান পরিচয়ের সমস্ত চিহ্ন বা রূপকে তা আক্রমণের নিশানা বানায়।” ইসলামফোবিয়া অর্থাৎ ইসলামাতঙ্কের এই সংজ্ঞা দিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস।

১৫ মার্চ দিনটিকে ইসলামাতঙ্ক প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গত বছর গৃহীত হয়েছিল। এবছর এই উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনায় এই প্রশ্নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে। মুসলমানদের ওপর ক্রমবর্ধমান দ্বেষ, ভেদ ও হিংসার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সকলে।

১৫ মার্চ জাতিসঙ্ঘের আলোচনাসভার সহযোগি সংগঠক রাষ্ট্র ছিল পাকিস্তান। সভায় পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওল ভুট্টো জারদারি বলেন, ইসলাম শান্তি, সহিষ্ণুতা ও বহুত্বের ধর্ম। ইসলামফোবিয়া নতুন বিষয় নয়, তবে বর্তমানে তা এক বিষাদময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ৯/১১ ট্র্যাজেডির পর থেকে দুনিয়াজুড়ে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস অতিমারির মাত্রা নিয়েছে। মুসলমান সম্প্রদায়গুলিকে হিংসাত্বক ও বিপজ্জনক এক ধর্ম-বিশ্বসাসের ছাপ্পা দিয়ে একটি ব্যাখ্যান চালু করা ও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সভার সভাপতি সাবা কোরোসি বলেন, ইসলামাতঙ্ক আসলে ‘জেনোফোবিয়া’ অর্থাৎ অপর বা অচেনার প্রতি ভীতি থেকে উদ্ভূত হয় এবং তা বিভিন্নরূপ বৈষম্যমূলক অনুশীলনে প্রকাশিত হয়। যেমন, চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা, ঘৃণাভাষণ, গালাগাল এবং অন্য জনগণকে নিশানা বানানো। তিনি আরও বলেন, “এই ইসলামফোবিয়া বা অনুরূপ যে কোনও পরিঘটনাকে চ্যালেঞ্জ জানানো, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, ধর্মীয় বা বিশ্বাসগত বিভেদ বৈষম্যকে ধিক্কার জানানো আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।”

ইউএন সেক্রেটরি-জেনেরাল আন্তোনিও গুটেরেস বলেন, বিশ্ব জুড়ে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান, এই গ্রহের সব প্রান্ত থেকে আসা — “মানবতার বিপুল বৈচিত্র‍্যকে প্রকাশ করে”। অথচ প্রায়শই তাঁরা বিদ্বেষ ও সন্দেহের শিকার হন শুধুমাত্র তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে। এবং মুসলিম মহিলারা “তিনগুণ বৈষম্যের শিকার” হন লিঙ্গগত, জাতিগত ও ধর্মবিশ্বাসগত — এই তিন কারণে। জনগণের দুর্বল অংশকে নিশানা বানানো স্বেতাঙ্গ প্রভুত্ববাদী নয়া-নাৎসি মতাদর্শ ও জাত-জাতীয়তাবাদের বাড়বাড়ন্তের কারণে ঘৃণা-বিদ্বেষ হুহু করে বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, “বৈষম্য আমদের সকলকেই খাটো করে দেয়। এবং আমাদের সকলেরই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দররকার। এই মতান্ধতা আমরা চুপচাপ মেনে নিতে পারি না। ইন্টারনেটে এই বিদ্বেষ তো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। যে কোনও পরিসরেই ইসলামফোবিয়া তার কদর্য মাথা চাড়া দিলে আমাদের উচিৎ সরাসরি তার সাথে সংঘাতে যাওয়া”।

খণ্ড-30
সংখ্যা-10