গভীর উদ্বেগজনক বার্তা নিয়ে এল রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিকাল অর্গানাইজেশন। তারা জানাল, গত বছর ইউরোপ জুড়ে অস্বাভাবিক দাবদাহ বেশ কিছু দেশের তাপমাত্রার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ১৫,০০০ এর উপর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশগত অন্যান্য অস্বাভাবিকতার তুলনায় তীব্র দাবদহে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি।
"ইউরোপ একের পর এক তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে। তিনটি গ্রীষ্মকালীন মাসেই অন্তত একবার করে এই তাপপ্রবাহ এসেছে। ফলে গ্রীষ্মে স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা ৪,৬০০, জার্মানিতে ৪,৫০০, যুক্তরাজ্যে ২,৮০০ (এর মধ্যে ৬৫ বছরের ও তার ঊর্ধ্বে নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি), ফ্রান্সে ২,৮০০ এবং পোর্তুগালে ১,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় এই দু:সহ গরমে। বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন তার বাৎসরিক বিশ্ব জলবায়ু রিপোর্টে এই ছবি তুলে ধরেছে। ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হল বসুন্ধরা দিবস। সেদিনই প্রকাশিত এই রিপোর্ট আগামী দিনে ভয়ংকরতম এক ধ্বংসের চিত্রকে সামনে মেলে ধরল।
গত বছর ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চল অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কবলে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এই প্রথম যুক্তরাজ্যে পারদ চড়ল ৪০ ডিগ্রির উপরে। ১৮৮৭’র পর এই প্রথম আয়ারল্যান্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সবচেয়ে শীতলতম দেশ সুইডেনে গত বছর ৩৭ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে। উল্লিখিত সংস্থা জানিয়েছে, ২০২২’এ বিশ্বের তাপমাত্রার গড় হার প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়েছে।
রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, গোটা দুনিয়া জুড়ে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ৯ কোটি ৫ লক্ষ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছেন। রিপোর্ট জানিয়েছে, “বেশির ভাগ মানুষ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে নিজেদের আগের বাসস্থান ত্যাগ করে সেই দেশেরই অন্যত্র আশ্রয় খুঁজেছে, আবার বেশ কিছু মানুষ আন্তর্জাতিক সীমানা পার হয়ে নিরাপদ জায়গায় পাড়ি দিয়েছে।”
ভারতেও এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসে তাপপ্রবাহ লক্ষ্য করা যায় কয়েকটি রাজ্যে। এবার মেঘালয়, ত্রিপুরায় বিভিন্ন জায়গায় তাপপ্রবাহের কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। ন’টি রাজ্যে উচ্চ তাপমাত্রা সহ তাপপ্রবাহের আশঙ্কা আছে বলে সতর্ক করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। দ্য ল্যান্সেট পত্রিকার একটা রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ১৭ বছরে ভারতে গরমের কারণে মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ! আমাদের দেশে শ্রমিকদের ৬৬ শতাংশ প্রবল দাবদহের মধ্যেও খোলা জায়গায় কাজ করতে বাধ্য হন। ফলে শারীরিক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর সংখ্যাও ঊর্ধমুখী। আরেকটি রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র তাপপ্রবাহের কারণে ভারতে আভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমেছে ৫.৪ শতাংশ — জি’২০ দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ। গত বছরের তুলনায় এ বারের তাপপ্রবাহ তীব্রতর। ফলে, কৃষির সংকট গত বারের চেয়েও এবার ভয়াবহ হতে চলেছে। শুধু ভারতেই নয়, গোটা দুনিয়াতেই বিশ্ব উষ্ণায়নের ধ্বংসাত্মক কুপ্রভাব পড়েছে কৃষির উপর। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব হল, ২০২১ সালে গোটা দুনিয়ায় প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তার কবলে আর তাঁদের মধ্যে ৯২ কোটিরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য অনিশ্চয়তার শিকার।
জলবায়ুর যে বদল, যে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা বিরাট বিপদের ইঙ্গিতবাহী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই বিপদকে মোকাবিলা করতে রাষ্ট্র, সরকার, সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
- অতনু চক্রবর্তী