মমতার শাসনতন্ত্র ডেকে আনছে গৈরিক বাহিনীকে
goyrik-militia

রাজ্য সরকারি কর্মী আন্দোলন এবার নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছাল। রাজ্যব্যাপী সফল ধর্মঘট, পেন-ডাউনের মাধ্যমে একদিনের অভূতপূর্ব রাজ্যব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি, আর এবার দিল্লিতে গিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে দু’দিনের অবস্থান বিক্ষোভ ও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান চলমান এই আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেল, নিয়ে এলো সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতে। বকেয়া ডিএ, সমস্ত সরকারি শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ, অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ — এই দাবির ভিত্তিতেই জারি রয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের এই দীর্ঘস্থায়ী লড়াই।

চরম উদ্ধত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই জাগ্রত কর্মচারী আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে শুধুমাত্র প্রশাসনিক দমনেরই আশ্রয় নেননি, “চোর ডাকাত” বলে সমগ্র সরকারি কমর্চারীদেরই চরম অপমানে লাঞ্ছিত করেছেন, যার বিরুদ্ধে কর্মচারীদের অভূতপূর্ব প্রতিবাদের ধরণগুলো সামনে এলো। বেশ কিছুদিন আগে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের তরফ থেকে তাদের কুকুরের সাথে তুলনা রাজ্যের সমগ্র মানুষকে বিস্মিত ও স্তম্ভিত করে দেয়। কতটা নীচে নামলে মুখ দিয়ে নিঃসৃত হতে পারে এমন শব্দবন্ধ! তার আগে আমরা দেখলাম, ধর্মঘটে অংশ নেওয়ায় হাজার হাজার কর্মীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শনো নোটিশ ধরানো হয়েছে, পাঠানো হয়েছে যথেচ্ছ বদলির নোটিশ। ধর্মঘট করার আইনি অধিকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের থাকলেও ধর্মঘটকে ভাঙতে বা ডায়াস নন, চাকুরির জীবন থেকে একদিন কেটে নেওয়া প্রভৃতি দমনমূলক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারকে নিতে দেখা গেল। মোদীর শ্রম কোড-কে এইভাবে কার্যকর করল মমতা সরকার। যে কর্মীদের ছাড়া রাজ্য সরকারের একটা পা-ও নড়বে না, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন নজিরবিহীন আক্রমণ কল্পনাই করা যায় না।

এর মূলে রয়েছে গণতন্ত্রের প্রতি মনোভাব। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথগুলোও মমতা সরকার কোনোদিনই বরদাস্ত করল না। আগেও দেখা গেছে, শ্রমিক কর্মচারীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে, কেন্দ্রের আর্থিক-শিল্প নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মঘট ডাকলে তার তুমুল বিরোধিতা করে ধর্মঘটকে ভাঙতে তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাঁর সরকার ধর্মঘটে শ্রমদিবস নষ্ট একেবারেই বরদাস্ত করবে না। মমতার জমানায় ধর্মঘটে শ্রমদিবস নষ্টের পরিমাণ শূন্যে ঠেকলোও, সরকারি তথ্যই বলছে যে এর বিপরীতে লকআউট জনিত কারণে এ রাজ্যে শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে ১০০ শতাংশ! বুঝতে অসুবিধা হয়না, মমতা সরকারের শিল্প-শ্রম-নীতি কোন লক্ষ্যে পরিচালিত।

মোদী জমানার চরিত্রলক্ষণ হল গণতন্ত্রকে সার্বিকভাবে কন্ঠরুদ্ধ করা। যে কোনে স্বৈরশাসক গণতন্ত্রকে অবজ্ঞা অবহেলা ও তার টুঁটি চেপে ধরেই নিজ নিজ শাসনতন্ত্রকে পরিচালনা করে। মোদীর বিরুদ্ধে অর্থবহ রাজনৈতিক বিকল্প বা জোট গড়ে তুলতে হলে, গৈরিক বাহিনীকে পরাস্ত করতে হলে গণতন্ত্রের প্রসার ও সেই অস্ত্রে জনগণকে সজ্জিত করাটা একান্ত প্রয়োজনীয়। শাসন ক্ষমতায় আসীন অ-বিজেপি সরকারগুলোকে এ প্রশ্নে স্পষ্ট পার্থক্য রেখা টানতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যে মমতা সরকারের গণতন্ত্রের প্রশ্ন, স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের বিপ্রতীপে যে নৈরাজ্য চলছে, তা সংঘ পরিবারকে ক্রমেই জায়গা করে দিচ্ছে। রামনবমীর মিছিলে সেই তান্ডব থেকে এরই প্রমাণ মেলে। রাজ্যের জাগ্রত ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনগুলো যে দাবির ভিত্তিতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তা দমন করে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির পথকেই তৈরি করছে মমতা সরকার।

বাংলার ইতিহাস এজন্য মমতাকে কোনেদিনই ক্ষমা করবে না।

খণ্ড-30
সংখ্যা-10