৩০ মার্চ রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে হাওড়া জেলার শিবপুর কাজীপাড়া পিএম বস্তি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বারা চালিত বজরং দল রামসেবা সমিতি এবং জেলার বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশের নির্ধারিত রুট পাল্টিয়ে কাজীপাড়ার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রার নামে লাঠি, তরবারি, লোহার রড এমনকি বুলডোজার নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে।
রমজান মাস চলায় রোজা ভাঙার সময় যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা রোজা ভাঙছে সেই সময় এই শোভাযাত্রার নামে মিছিল এবং সেখান থেকে উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আরএসএস-এর সুনির্দিষ্ট প্ল্যানিং এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার ফলে ৩০ ও ৩১ মার্চ ২ দিন ধরে হাওড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি হুগলি জেলার রিষড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আগুন ছড়াতে থাকে। ঘটনার পরের দিনই সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি কাজীপাড়া শিবপুর বস্তি সহ বিভিন্ন এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে এবং স্থানীয় এলাকার মানুষজনের সাথে কথা বলতে যান। তাঁর তথ্য এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ক্ষণিকের উত্তেজনা বসে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং অত্যন্ত সুনিপুণভাবে জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে জেলার পরিবেশকে কলুষিত করার একটি সুচিন্তিত প্ল্যানিং যা বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মস্তিষ্কপ্রসূত। এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের বিপরীতে জেলায় শান্তি শৃঙ্খলা এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য সিপিআই(এমএল) লিবারেশন হাওড়া জেলা কমিটি ৩ এপ্রিল সারা জেলা ব্যাপী সম্প্রীতি দিবস পালনের ডাক দেয়। ৩ এপ্রিল হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং, সভা এবং সম্প্রীতির কর্মসূচি নেওয়া হয়।
বালি গ্রামাঞ্চলের সাথীরা জেলায় সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরতে এবং বিজেপি আরএসএস-কে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার আহ্বান নিয়ে পথসভা পরিচালনা করেন। একই সাথে বালি বেলুড় লোকাল কমিটির উদ্যোগে সন্ধ্যায় বালি বাজারে পথসভার আয়োজন করা হয়। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এআইসিসিটিইউ রাজ্য সম্পাদক কমরেড বাসুদেব বসু। এছাড়াও মধ্য হাওড়া লোকাল কমিটির উদ্যোগে হালদারপাড়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের বিরুদ্ধে শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে পথসভা অনুষ্ঠিত হয় সেইখানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্তসহ স্থানীয় সাথীরা। আড়ুপাড়া কামারডাঙ্গা লোকাল কমিটির উদ্যোগে কামারডাঙ্গার বস্তি অঞ্চলে পোস্টারিং হয় এবং এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মুহূর্তে সম্প্রীতি এবং সৌহার্দের বার্তা তুলে ধরা হয়। ৩ এপ্রিলই সকালে চার দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিতে পার্টির জেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল হাওড়া পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে যায়। কিন্তু মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে রাজ্য সরকারের দেওয়া ছুটির কারণে কমিশনার দপ্তরে সেই দিন কোনো পদস্থ কর্তা উপস্থিত ছিলেন না। পার্টি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্তের সাথে ডিসিপি হেডকোয়ার্টারের ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় এবং ডেপুটেশনের পরবর্তী দিন স্থির হয়। ইতিমধ্যে সংঘর্ষের এলাকাগুলোতে প্রশাসন কর্তৃক ১৪৪ ধারা জারি থাকায় জেলার সংগঠিত প্রতিনিধি টিম এলাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি টিম ওই এলাকায় গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং পরবর্তী সময় জেলা শাসকের কাছে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। হাওড়া জেলায় বারবারই আরএসএস-বিজেপি শিবিরের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি এবং সংঘর্ষের আবহাওয়া তৈরির প্রচেষ্টা থেকেছে। এর মোকাবিলায় পার্টির হাওড়া জেলা কমিটি সহ সমস্ত গণসংগঠন এবং গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সামাজিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিরোধের পাল্টা মজবুত ব্যারিকেড তৈরির জন্য পার্টি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।