বর্তমানে দেশজুড়ে এবং রাজ্যব্যাপী গ্রামীণ গরিবদের জীবন-জীবিকা চিকিৎসা শিক্ষা সমস্ত দিক থেকেই সংকট বেড়ে চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্য সুরক্ষার নিশ্চিত করার কথা বললে ও বাস্তবে ভোজ্য তেল-ডাল-সব্জি ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করার পরিবর্তে রেশনে যেটুকু চাল আটা দেওয়া হত তারও বরাদ্দ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। গ্রামীন গরিবদের কাজের অধিকারের প্রশ্নে একমাত্র আইন এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত ন্যুনতম মজুরি দৈনিক ৪২৯ টাকা হলেও কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে দৈনিক ২৩৭ টাকা। তারপর বলা হচ্ছে দিনে দুবার ডিজিটাল রিপোর্ট মানে কাজের শুরুতে একবার এনড্রয়েড ফোন থেকে ছবি সহ অনলাইনে রির্পোট পাঠাতে হবে। আবার কাজ শেষ হওয়ার সময় রির্পোট পাঠাতে হবে। আরও জঘন্যতম ঘটনা হল, বিগত দেড় বছর রাজ্য সরকারের দুর্নীতির অজুহাতে পশ্চিমবঙ্গের গরিবদের কেন্দ্রীয় সরকার কাজ এবং বকেয়া মজুরির আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত গরিব মানুষকে পাকা বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনও সমস্ত গরিব মানুষ ঘর পেল না। এক্ষেত্রেও দুর্নীতির অজুহাতে গরিব মানুষকে বাস্তু ও ঘরের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বারবার কেন্দ্রীয় সমীক্ষক দল ঘুরে গেলেও কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত লোককেও সাজা দেওয়া হল না। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গরিবদের গ্যাসের রান্না খাওয়ার স্বপ্ন ঘুমের মধ্যেই থেকে গেল। এখন আবার আধার লিংক-এর নামে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক গরিব মানুষ থেকে ১০০০ টাকা জরিমানা আদায় করছে। তার উপর কাজের অভাব এবং দ্রব্যমুল্যবৃদ্ধির ফলে গরিবদের দুরবস্থা চরম মাত্রা নিয়েছে। এই অবস্থায় গরিব জনগণ দেশজুড়ে আন্দোলনে নামছে। আয়ারলার জাতীয় কমিটি আগামী ২৭ এপ্রিল ১০ দফা দাবিতে দেশজুড়ে ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ ডেপুটেশন ও রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি ঠিক করেছে ২৭ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে এই ১০ দফা দাবির সাথে সাথে রাজ্যে তৃণমুলের দুর্নীতি দলবাজি ও সংন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য গরিবদের দাবি যুক্ত করে লিফলেট প্রচার ডেপুটেশন বিক্ষোভ ও রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি পাঠানো হবে।
২৭ এপ্রিল গ্রামীণ শ্রমিক বিক্ষোভ কর্মসূচির ১০ দফা দাবিসনদ
১) বুলডোজার রাজ নিপাত যাক! দশকের পর দশক জুড়ে যারা যে জমিতে বাস করছেন, তার বাস্তুপাট্টা দিতে হবে (দীর্ঘদিনের বসবাসের জমির বাস্তুপাট্টা দিতে হবে)। অবিধিবদ্ধ সকল জনবসতির সম্পূর্ণ সার্ভে করতে হবে এবং নতুন করে বাসগৃহ আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিকল্প বন্দোবস্ত না করে কোনো বাসগৃহ উচ্ছেদ চলবে না। বাসগৃহের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
২) নূন্যতম মজুরির হারবৃদ্ধি করতে এবং এর কার্যকরী প্রয়োগে নির্দিষ্ট পরিকাঠামো সুনিশ্চিত কর। অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভারত সরকার ঘোষিত নূন্যতম মজুরি ৪২৯ টাকা এনআরইজিএর ন্যূনতম মজুরি হিসাবে ঘোষণা কর। কোনো রাজ্য সরকারই যাতে ৪২৯ টাকার কম মজুরি এনআরইজিএ তে না দিতে পারে, তা যে কোনো মূল্যে সুনিশ্চিত কর। এনআরইজিএ ডিজিটাল হাজিরা বন্ধ কর।
৩) ক্ষুধা সূচকে ভারতের শোচনীয় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য নিশ্চয়তা আইনকে শক্তিশালী কর। চাল, আটা, ডাল, তেল, সব্জি, চিনি, দুধ ইত্যাদি রেশন মাধ্যমে দিতে আইনি বন্দোবস্ত কর। এই সাংবিধানিক বিধির রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধ কর।
৪) ৬০ বছর ঊর্ধ্ব প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী মানুষ, মহিলাদের মাসিক ৩ হাজার টাকা পেনশন সুনিশ্চিত কর।
৫) প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সহায়তা বৃদ্ধি করে ৫ লক্ষ টাকা করতে হবে এবং এই যোজনার দালালি ও আমলাতান্ত্রিক লুট বন্ধ কর।
৬) সকল দলিত ও দরিদ্র শ্রমজীবীর সরকারের থেকে নেওয়া এবং মহাজনী ঋণ মকুব করতে হবে। বিনা সুদে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী সহ মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলির সুদের হার কমাও। বলপূর্বক ঋণ আদায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা কর।
৭) সকল দলিত ও দরিদ্র সহ বিপিএল পরিবারের করোনা সময়কালের বিদ্যুৎ বিল মকুব কর। এই ধরনের সকল পরিবারকে বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে হবে।
৮) মানুষ মারা মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর। খাদ্যশস্য, ঔষধ সহ চিকিৎসা ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর। দরিদ্র শ্রমিকদের জন্যও মহার্ঘ্য ভাতা চালু কর।
৯) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেসরকারিকরণ বন্ধ কর। দরিদ্র শ্রমজীবীদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান সুনিশ্চিত কর। সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য প্রতিটি স্তরে বৃত্তি প্রদান সুনিশ্চিত কর।
১০) দলিত, গরিব ও মহিলাদের উপর সামন্ত শক্তি সহ সামাজিক প্রাধান্যকারী শক্তির ক্রমবর্ধমান হামলা বন্ধ কর।
- সজল পাল