ভারতে এখন উচ্ছেদ-যুদ্ধ চলছে। বুলডোজার, যা কি না বিজেপির যোগী শাসনের সবচেয়ে গর্বের প্রতীক (এবং ভক্তদের শব্দভাণ্ডারে ন্যায়বিচারের সমার্থক), এখন সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। শহরগুলিতে বস্তি ও কলোনিতে বসবাসকারী দরিদ্ররা, গ্রামে গ্রামে অনথিভুক্ত বসতবাড়ির জমিতে বসবাসকারী দরিদ্ররা এবং মুসলিমরা এই উচ্ছেদ যুদ্ধের সবচেয়ে সাধারণ নিশানা।
মতাদর্শগতভাবে ভিন্ন মত পোষণকারী এবং রাজনৈতিক বিরোধীরাও নিজেদের এই হামলার নিশানায় দেখতে পাচ্ছেন। প্রতিহিংসার ছোবলে লোকসভা থেকে ডিসকোয়ালিফায়েড হওয়ার পর আজ রাহুল গান্ধী তার সাংসদ কোয়ার্টারের চাবি সরকারে হাতে তুলে দিলেন। আর এই হামলা নিশানার তালিকায় ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু ও সক্রিয় পণ্ডিতদের একজন, ৯০ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেনও রয়েছেন।
১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কার পাওয়ার পর বাজপেয়ী সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করে। কিন্তু অধ্যাপক সেন এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্রয়োজনে বল প্রয়োগের হুমকি সহ, একটি উচ্ছেদের নোটিশ পেয়েছেন। ভারতের প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত ভালবাসা এবং প্রতাশা নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন তা আজ ক্ষমতাসীন সংঘ-বিজেপি সংগঠনের দ্বারা অন্যান্য উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মতোই পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে অধ্যাপক সেন ১৯৪৩ সালে তাঁর পিতা আশুতোষ সেনের কাছে ইজারা দেয়া ১.২৫ একর জমির ১৩ ডেসিমাল জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। কর্তৃপক্ষের এই দাবি অধ্যাপক সেন নথিপত্রসহ প্রমাণ দাখিল করে খারিজ করেছেন। তথাপি সর্বশেষ উচ্ছেদের নোটিশে অধ্যাপক সেনকে ৬ মে’র মধ্যে বাড়ি খালি করতে বলা হয়েছে। ক্ষমতা-মাতাল প্রতিহিংসা-চালিত ঘৃণা-ভরা শাসন যে কত নীচে নামতে পারে তার সীমা পরিসীমা নেই।
দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈচিত্র্যের যৌগিক সংস্কৃতিকে এবং নাগরিক অধিকার, কল্যাণ ও স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্যই ‘আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’কে এই মূল্য চোকাতে হচ্ছে।
প্রফেসর সেন, লজ্জায় আমাদের মাথা নত হয়ে যাচ্ছে, এই নিপীড়নের রাজত্বের বিরুদ্ধে আপনার সাথে আমরা পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করছি।
- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, ২৩ এপ্রিল, সোশাল মিডিয়া পোস্ট থেকে অনূদিত, শিরোনাম আমাদের )