“ওই নূতনের কেতন ওড়ে...”

ketan-flies
পার্টি কংগ্রেসে ছাত্র-যুবরা

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একাদশ পার্টি কংগ্রেস তার রাজনৈতিক ব্যাপ্তিতে বিগত সমস্ত পরিধীকেই ছাড়িয়ে গেছে। পাটনায় এক অভূতপূর্ব আয়োজন ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক মহলেও যথেষ্ট আলোচিত বিষয়। প্রতিনিধি অধিবেশন ছাড়াও গান্ধী ময়দানের সমাবেশ, আন্তর্জাতিক সংহতির কনভেনশন, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ‘সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’ কনভেনশন থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মেধাজীবী-সমাজকর্মী-আন্দোলনের প্রতিনিধিদের এক সমন্বয় স্থল হয়ে উঠেছিল এই কংগ্রেস।

পার্টি গঠনের অর্ধশতক অতিক্রম করে ধারে ও ভারে একাদশ কংগ্রেস জানান দিল, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিধিতে সিপিআই(এমএল) তার সম্পূর্ণ শক্তি নিয়েই ফ্যাসিবাদ রক্ষায় জানকবুল লড়াই করতে প্রস্তুত। এই পার্টি কংগ্রেস এটাও জানান দিল কৃষকের কাস্তে আর শ্রমিকের হাতুরী হয়ে ব্যারিকেডের সামনের সারিতে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত আছে নবীন প্রজন্মও। শহীদদের স্বপ্নের ভারত গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে নবীন প্রজন্মের অংশগ্রহণ আরেকটা বড় পাওনা।

প্রায় সতেরোশো প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষকের মধ্যে নবীন প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিল নতুন দরজা খুলে দিল যেন। সংখ্যাগত পরিসংখ্যানে প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষকের প্রায় ৯.২ শতাংশ ছিলেন নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।

নতুনের প্রতিনিধিত্ব মানেই নতুন ধারণা আর নতুন জোয়ার। যা ছাই থেকে আবারও ফিনিক্স হয়ে উঠতে পারে। প্রতিনিধি অধিবেশনেও তার ছাপ স্পষ্ট দেখা গেলো। নবীন প্রজন্মের বহু প্রতিনিধিরা তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করলেন এবং কংগ্রেসের পরিচালনায় বড় ভূমিকা পালনেও তাঁদের অবদান কম অসীম। লিঙ্গ সাম্য, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ মতামত আদান-প্রদানের যে ময়দান, তাতে নবীন প্রজন্মের অংশগ্রহণকে কুর্ণিশ জানাচ্ছিলেন বিদেশ থেকে আগত অতিথিরাও। অনুবাদকের ভূমিকাতেও তাঁরাই ছিলেন সামনের সারিতে।

মাসাধিক কাল ব্যাপী পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত পরিশ্রম করে গেছেন। এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীরও প্রধান খুঁটিও ছিলেন নবীন প্রজন্মের সাথীরাই। বিহারের গ্রাম-শহরের ছাত্র-যুব সাথীরা প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন যাতে আয়োজনে কোনও ত্রুটি না থাকে। এতো বৃহৎ ব্যবস্থাপণায় ত্রুটির লেশমাত্র অনুভব হতে দেননি তাঁরা। শুধুমাত্র কংগ্রেস নয়, ১৫ জানুয়ারী গান্ধী ময়দানে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতও ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জও সাথীরা নিয়েছেন উৎসাহের সঙ্গেই, এবং সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন সেই কাজ। ফলে কংগ্রেসের মঞ্চে তাঁদের সম্মান জানানোর কসুর করেনি পার্টিও। শেষ দিন মঞ্চে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকদের ডেকে সংবর্ধনা দেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

বিহারের বুকেই পার্টির বারোজন বিধায়কের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই ছাত্র-যুব আন্দোলনের অগ্রণী নেতৃত্ব। সেই মাটিতেও নব গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতেও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইসা’র সাধারণ সম্পাদক ও পালিগঞ্জের বিধায়ক সন্দীপ সৌরভ, আরওয়াইএ’র সাধারণ সম্পাদক নীরজ কুমার, ছাত্র আন্দোলন থেকে শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী হয়ে ওঠা শ্বেতা, আইসার প্রাক্তণ সর্বভারতীয় সভাপতি ইন্দ্রেশ মৈখুরী, যুব আন্দোলনের মুখ নবীন কুমাররা এবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন আইসার প্রাক্তণ সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুচেতা দে, আরওয়াইএ’র সভাপতি ও অগিগাঁও বিধানসভার বিধায়ক মনোজ মঞ্জিল, আইসার প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক অভুদ্যয়, যুব নেতা রাজু যাদব প্রমুখরা। নতুনের জয়ধ্বনিও এইবারের পার্টি কংগ্রেসের সম্পদ।

- নীলাশিস বসু

খণ্ড-30
সংখ্যা-4