কমরেড আনন্দ মোহন মৈত্র


কমরেড আনন্দ মোহন মৈত্র, সকলের প্রিয় আনন্দদা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে ও পরিবারের লোকজন বারাসাত হাসপাতালে ১ জানুয়ারি ২০২৩ রাতে ভর্তি করায়। পরের দিন চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন। সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়ার সময়ই জানা যায় আনন্দদা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন ২ জানুয়ারি ২০২৩, ৭৭ বছর বয়সে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পার্টি কমরেডরা উপস্থিত হন এবং বারাসাত হাসপাতাল চত্ত্বরেই লাল পতাকা ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

গত জুলাই মাসে তিনি তাঁর স্ত্রী এবং রাজনৈতিক সহকর্মী কমরেড বাসন্তী মৈত্রকে হারান। ছোট ছেলেও অকালে প্রয়াত হয়। এত বড় দুটো মানসিক আঘাত তাকে রোগ-প্রতিরোধে অশক্ত করে তুলেছিল।

কমরেড আনন্দ মৈত্র প্রতিরক্ষা শিল্পের আর্টিজান ট্রেনিং স্কুল থেকে পাশ করে শিল্প শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়েছিলেন। কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দেন। পরে তিনি উপলব্ধি করেন যে শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণির মুক্তি নেই, তাই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আকর্ষিত হন এবং পার্টি সদস্য হন এবং পার্টির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। পার্টির প্রতি আনন্দদার ছিল অগাধ আস্থা। ইউনিয়নের মধ্যে ফ্র্যাকশনাল কাজে পার্টি মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার সাথে সাথে পার্টি গঠনের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। শিল্প পার্টি গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও কারখানার বাইরেও পার্টি কর্মসূচিতে হোক বা পার্টির কোনও দায়িত্ব পালনে কোনও দ্বিধা ছিল না। তা দিল্লীর কর্মসূচিতে হোক বা পার্টির ৫ম কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক বা এআইসিসিটিইউ গঠন পর্বে মূখ্য ভূমিকা পালন করাই হোক। কলকাতা বা স্থানীয় এলাকায় পার্টি কর্মসূচিতে অংশ নিতেন সবসময়ই। তিনি ‘লালঝান্ডা’ পত্রিকা ছাপাবার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ত্যাগ স্বীকারেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, একবার স্ত্রী’র গয়না বিক্রি করে টাকা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

মানুষ হিসেবেও একজন সহজ সরল নিঃস্বার্থ দরদী মানুষ ছিলেন। কারও কোন বিপদে বা যেকোনও অসুবিধায় নিঃস্বার্থ ভাবে এগিয়ে যেতেন, এতে অনেক সময় নিজে অসুবিধার মধ্যেও পরতেন।

কমরেড চাকরি থেকে অবসরের পরে স্থানীয় পার্টি কাঠামোতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামিল হতে থকেন। শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও পার্টির প্রতি আস্থা ও ভালোবাসায় কোনও খাদ ছিল না। পার্টির মতাদর্শে দৃঢ় এবং আপোশহীন কমরেডকে হারানো পার্টির কাছে বড় ধাক্কা।

কমরেড আনন্দদা আমাদের মধ্যে অমর হয়ে থাকবেন।

খণ্ড-30
সংখ্যা-1