এখন প্রবল শীতেও গ্রামবাংলা উত্তপ্ত! আবাস তালিকা নিয়ে চলছে তুমুল আলোড়ন। রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় — শোনা যাচ্ছে কেন্দ্র রাজ্য চাপান উতোর। কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারই গরিব মানুষের বাস্তু ও আবাসের অধিকার হরণের জন্য দায়ী। জনকল্যানমুখী যতটুকু ছিটেফোঁটা প্রকল্প রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার তাতে বরাদ্দ লাগাতার কমিয়ে চলেছে। বাস্তুহীনদের বাস্তু দেওয়ার কোনো কথাই আর শোনা যায় না। এরাজ্যে আবাসের যে তালিকা তৈরি হয়েছিলো তার মাত্র সিকিভাগ অনুমোদিত হয়েছে। নানারকম অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে গরিবদের বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে। যেমন এখন একটি পরিবারে একটাই জবকার্ড, অথচ পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে বসবাস করছেন৷ কিন্তু ঐ জবকার্ডে মাত্র একবারই আবাসের সুযোগ পাওয়া যাবে। এরফলে বহু সংখ্যক গরিবরা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। তালিকা তৈরি বা সমীক্ষা করার প্রশ্নে রাজ্য সরকার চুড়ান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি ও তোলাবাজি করেছে এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো পঞ্চায়েতে জনগণের অংশগ্রহণ, গ্রামসভা বৈঠক করে আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা তৈরি করার আইনি নির্দেশিকা লাটে তোলা হল কেন? এর পরিবর্তে কায়েম করা হচ্ছে এক ধরনের পুলিশী রাজ! ঘরের তালিকায় তদন্ত করবে পুলিশ! রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। মূল কথা হলো আবাস তালিকার সরেজমিন তদন্তের নামে বিস্তর জলঘোলা হওয়ার পর চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করলো কে? দোতলা বাড়ি পাকা ঘর, শাসক দলের লোকেদের নাম রয়েছে। অথচ যারা পাটকাঠির বেড়া, টালি বা টিনের ছাদের নীচে বাস করছে তাদের নাম কাটা গেছে বা আদৌ নামই নেই! এমনটা হল কেন?
এই প্রশ্ন তুলে ধরে গত ৬ জানুয়ারি নদীয়া ধুবুলিয়ার সোনাতলা মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভসভায় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, পঞ্চায়েত প্রধান সই করে তালিকা পাঠিয়েছে! ব্লকের আধিকারিক সেটাকেই চুড়ান্ত করেছে। তাই পঞ্চায়েতকেই যাবতীয় অনিয়মের দায় নিতে হবে। পেছনে রয়েছে শাসক দলের মাতব্বররা! নিয়ম বিধি অনুযায়ী গ্রাম সংসদ সভা হয়নি। গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে সাধারণ সভায় রেজ্যুলিউশন করা হয়নি! এসব হলে দুর্নীতি অনিয়ম কিছুটা হলেও কম হতো। কিন্তু সবটাই হয়েছে কাগজে কলমে। লোকচক্ষুর অন্তরালে! তাই প্রধানকেই জবাবদিহি করতে হবে। আমরা পঞ্চায়েতে যাবো। আওয়াজ তুলবো জনগণের পঞ্চায়েত ফিরিয়ে দাও। এখন আবাস দুর্নীতি নিয়ে গলাবাজী করছে বিজেপি। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টদের সেই সুযোগ করে দিলো কে? তাই সভা থেকে স্লোগান উঠলো গ্রামের মানুষ জোট বাঁধো। গণতন্ত্র রক্ষায় গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলো।
ধুবুলিয়ার নওপাড়া অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে সংগঠিত হয়েছে লাগাতার প্রচার অভিযান। চরমহতপুর গ্রামে প্রচারসভায় উঠে এসেছে চরের জমির লড়াইয়ের কথা। এই জমির অধিকার রক্ষা আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১৪ সালে তৃণমূল আশ্রিত সমাজ বিরোধীদের হাতে খুন হয়ে যান কমরেড ইউসুফ মোল্লা। ন’বছর হয়ে গেলো, প্রায় ৪০০ বিঘা চরের সেই জমি আজও অনাবাদী পড়ে রয়েছে। এতগুলো বছর ধরে খাস জমি চিহ্নিত করে বিলিবণ্টন করার কোন প্রচেষ্টা তৃণমূল সরকার করেনি। জমির আন্দোলনের শক্তি তথা নকশালপন্থীরা যাতে এগিয়ে যেতে না পারে, ওরা সেই চক্রান্ত করছে। কিন্তু না, জমির অধিকারের লড়াই সিপিআই(এমএল) চালিয়ে যাবে। দ্রুতই সংগঠিত হবে মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ। প্রচারসভা থেকে নেতৃবৃন্দ সেই ঘোষণা করলেন। তারা আরও বলেন, আবাস দুর্নীতি তৃণমূলের রাজত্বে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। পঞ্চায়েতে জনগণের অধিকারকে শেষ করে দিয়েছে। আবাসের দাবিতে দলে দলে বঞ্চিত মানুষেরা পঞ্চায়েতে বা ব্লক দপ্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হচ্ছে তৃণমূলের সংস্কার মূলক প্রকল্পগুলি কতটা শূন্যগর্ভ! গরিব মানুষের সংকট কতখানি তীব্র।
এছাড়াও পাথরাদহ, কালীনগর গ্রামে পৃথক ভাবে প্রচারসভা সংগঠিত হয়। ১০০ দিনের কাজ, মান্ডিগুলিতে ধানকেনায় চাষীদের বঞ্চনার প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হয়। ব্যাপক মানুষ সভাগুলিতে অংশ নেন, সহমর্মিতা জানান। প্রচার সভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন অমিত মন্ডল, ঠান্ডু শেখ, কলম বিশ্বাস, সন্ত ভট্টাচার্য, সালেমা বিবি, আনসারুল হক, কৃষ্ণ প্রামানিক ও জয়তু দেশমুখ। সঞ্চালনা সইদুল মোল্লা।