খবরা-খবর
নিয়োগের দাবিতে নাছোড় লড়াই
for recruitment

‘ওরা’ বসে আছে। হাতে হাত রেখে। কলকাতা ময়দানে গান্ধীমূর্তির পাশে, কেউ বা মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তিকে ঘিরে। ওরা এসেছে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিম জেলা থেকে। শুধু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিই নয়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি — জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দুই দিনাজপুরের শহর ও শহরতলীর মুখগুলোকেও আপনি দেখতে পাবেন। গোটা রাজ্য থেকে ওরা এসেছে। ওরা একটা মিথ্যা প্রচারকে সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে — তরুণ প্রজন্ম আন্দোলন করতে জানে, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে নিতে জানে এবং পারে। কোন দমন-পীড়ন ওদের দমিয়ে দিতে পারে না। অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ওরা সম্মিলিত ভাবে জানিয়ে দিল ন্যায়সংগত আন্দোলন চলবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ন্যায্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে লড়াই জারি থাকবে।

সরকারি নিয়োগে দুর্নীতির কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ওদেরই বন্ধু, অতনু মিস্ত্রি, রাঘো সিং, সুমন চক্রবর্তীরা। মৃত্যুর আগে ওরা বলেছিল, দাবি আদায়ে লড়াই চালিয়ে যেতে। লড়াই ওরা চালিয়ে যাবে শেষ যোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত।

আন্দোলন কবে শুরু হল

দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত হয়ে যোগ্য মেধাবী টেট পাস প্রার্থীরা আন্দোলন করছে ২০১৬ সাল থেকে। লড়াইটা দুর্নীতির কারণে বঞ্চনার বিরুদ্ধে। ইন্টারভিউ দেওয়া বা না দেওয়ার জন্য নয়। এই প্রচার আসলে সরকারি চক্রান্ত আর মিডিয়ার একাংশের কারসাজি। ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত যত নিয়োগ হয়েছে সবক্ষেত্রেই চলেছে লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা, হয়েছে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি — তা সে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ হোক বা কর্মশিক্ষা, শারীর শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ বা এসএসসি গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি বা রাজ্য গ্রুপ-ডি থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়ারী কর্মী বা কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগ, যাই হোক না কেন সর্বত্র লাগামছাড়া দুর্নীতি। এযাবৎকালে সরকারি নিয়োগে যে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি হয়েছে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে প্রাইমারি নিয়োগে দুর্নীতি। চূড়ান্ত পর্যায়ের এই দুর্নীতির শিকার ‘প্রাইমারি নট ইনক্লুডেড’ নতুন এক শব্দ।

আসলে এখানে শুধু ২০১৪ সালের আবেদনকারীরাই নেই, ২০১২ সালে অর্থাৎ প্রথম টেট পরীক্ষায় যারা পাস করতে পারেনি, ওই একই সালের আবেদনের ভিত্তিতে পাওয়া এডমিট কার্ড অর্থাৎ ২০১২ সালের এডমিট কার্ডেই পরীক্ষা দেয় ২০১৪ সালের আবেদনকারীদের সাথে। রেজাল্ট বেরোয় ২০১৬ সালে। যারা টেট পরীক্ষায় অর্থাৎ শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতায় পাস করে তারাই আজকের ‘প্রাইমারি নট ইনক্লুডেড ২০১৪’। সরকার ঘোষণা করে এই টেট পাশ ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে ৪২,০০০ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। যথারীতি নিয়োগ শুরু হয় কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে কোন মেরিট প্যানেল লিস্ট প্রকাশ করা হয়নি। প্রত্যেক ক্যান্ডিডেট তার রোল নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে কেবলমাত্র জানতে পারে সংশ্লিষ্ট ক্যান্ডিডেট কোয়ালিফায়েড অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবে অথবা নট কোয়ালিফায়েড অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে না।

​  fight for recruitment_2

২০১১ সাল থেকে যতগুলো নিয়োগ সরকার করেছে তার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে এবং সেটা দুর্নীতি করে নিয়োগ করার জন্যই। প্রায় সবক্ষেত্রেই মেরিট প্যানেল প্রকাশ করা হয়নি, অর্থাৎ মোট কতজন চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ করছে, তাদের নাম, তাদের আগের ব্যক্তি কে? পরের ব্যক্তি কে? কত নম্বর পেয়ে কেউ সিলেক্ট হয়েছে? আর যে সিলেক্ট হতে পারেনি সে কত নম্বর পেয়েছে? জেনারেলের জন্য কত কাট-অফ পর্যন্ত নামা হয়েছে? ক্যাটাগরির ক্যান্ডিডেটদের জন্য কত কাট-অফ রাখা হয়েছে অর্থাৎ একটা মেরিট প্যানেল প্রকাশিত হলে যে যে বিষয়গুলো সিলেক্ট নট-সিলেক্ট সমস্ত ক্যান্ডিডেটদের কাছে পরিষ্কার হতে পারত সেরকম কিছুই করা হয়নি। এমনকি অনুপস্থিত এবং নন জয়নিং সিটগুলো পরে কী হল। কাদের নিয়োগ দেওয়া হলো, সেই সব সাধারণ বিষয়গুলোও আরটিআই করার পরও সরকার পক্ষ থেকে জানানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি। এমনকি কারা কারা ওয়েটিং ক্যান্ডিডেট হিসেবে আছে তারও কোনো লিস্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ করেনি আর এখনতো আরো পরিষ্কার হয়ে গেছে ইন্টারভিউয়ের নম্বর পেন্সিলে দেওয়া হয়েছিল। কেন দেওয়া হয়েছিল এটা বোঝার ক্ষমতা আশা করি সকলের আছে। এটাও আজ প্রমাণিত হয়ে গেছে সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পাওয়া যায়, এমনকি ১৭ বছর বয়সীকেও চাকরিতে জয়েন করানোর নিদর্শন আছে। যাই হোক ২০১৪ অর্থাৎ দ্বিতীয় টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় ২৩ লক্ষ ছেলেমেয়ে। ২০১৬ সালে যখন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হল তখন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অবাক হয়ে টিভির পর্দায় শুনল দক্ষিণ ২৪ পরগণার চেয়ারপার্সন সুরঞ্জনা দাসের অডিও ভয়েস — এটা মাথায় রাখবেন, চাকরি কিন্তু পেয়েছে দলের ছেলেরাই। দেখলো ব্রাত্য বসুর মজাদার ভাষণ — দলের ছেলেদেরই চাকরি দিয়েছি, কিন্তু কিভাবে দিয়েছি সেটা বলবোনা। দল করো চাকরি পাবে বা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু স্বগর্বে বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করলেন, প্রাইমারিতে ১২ জনকে চাকরি দিয়েছি, যদিও পরে অর্থাৎ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে জয়েন করে ঘোষণা করল ১২ জন নয়, ৬৮ জনকে চাকরি দিয়েছি। আসলে চাকরিটা দলের লোককেও দেয়নি। দিয়েছে বড় লোক বাপের অযোগ্য ছেলেমেয়েদের — ‘টাকা দাও, চাকরি নাও’ সকলের জন্য সমান দর, তাতে তুমি কোন দল করো দেখা হবে না। প্রথম দিকে রেট ছিল ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা, পরে সেটা বেড়ে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হয়। মুড়ি মুড়কির মতো পয়সার বিনিময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা এমএলএ-এমপি এবং নেতাকে কোটা দেওয়া হয়েছে আর সেই সমস্ত এমএলএ-এমপি এবং নেতাদের এজেন্টরা বুথে বুথে ঘুরে পয়সাওয়ালা বাপের অযোগ্য ছেলেমেয়েদের খুঁজে খুঁজে বের করে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে। এ এক অকল্পনীয় দুর্নীতি এবং তা হয়েছে খুল্লাম খুল্লা। যোগ্য ছেলেমেয়েদের ইন্টারভিউ নেওয়া হল কিন্তু টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হল অযোগ্য ছেলেমেয়েদের। শুরু হল আন্দোলন।

প্রতিশ্রুতি ও জুমলা

নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন এবং ভোটের কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করলেন, ২০১৪ সালের টেট পাসদের থেকে ২০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। ১৬,৫০০ এখনই নিয়োগ হবে আর বাকিটা অর্থাৎ ৩,৫০০ ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে। সেখানেও সমানতালে চলল দুর্নীতি। আবারও ২০১৪ সালের টেট পাশরা ইন্টারভিউ দিল, আবারও অযোগ্যরা টাকার বিনিময়ে পেল চাকরি। এই ১৬,৫০০ কাকে নিয়োগ দেওয়া হল, কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হল — দেবা ন জানন্তি। কেউ জানে না। পরে আরটিআই মারফৎ জানা গেল ১৬,৫০০ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে আরো কম। ৩,৯২৯টি আসনে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি (আসলে নিয়োগ দেওয়া হয়নি নয়, এমএলএ-এমপি নেতাদের এজেন্টরা যোগ্য পয়সাওয়ালা অযোগ্য ক্যান্ডিডেট জোগাড় করতে পারেনি)। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এবং ১৬,৫০০ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩,৫০০ এবং ৩,৯২৯ এই সিটের যোগ্য দাবিদার ২০১৪ সালের ‘প্রাইমারি নট ইনক্লুডেড’রা। তারা আজও চাকরি পায়নি তাদের একটাই অপরাধ শত চেষ্টা করেও এদের বাদ দেওয়া যায়নি (কিছু কিছু ছেলেমেয়ের মেধা এমন পর্যায়ে থাকে যাদের কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যায় না তাই দেখা যাচ্ছে এই ছেলেমেয়েদের প্রায় সবাই একাধিক সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করে বসে আছে।) তারা টেট পাস করেছে কিন্তু টাকা দিতে পারেনি।

fight for recruitment

লড়তে লড়তে তাদের হাতে এসেছে অনেক তথ্য প্রমাণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছুটে গেছে আদালতে, দুর্নীতির যে সমস্ত অকাট্য প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে তার কয়েকটি হল,

  • (১) ১৭ বছর বয়সীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
  • ((২) আজ পর্যন্ত কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ের নিয়োগের কোনো প্যানেল প্রকাশিত হয়নি।
  • ৩) সংরক্ষণ নীতিকে কোনোরকম মান্যতা দেওয়া হয়নি।
  • (৪) উড পেন্সিলে ইন্টারভিউয়ের নাম্বার দেওয়া হয়েছে।
  • (৫) সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে।
  • (৬) কোনোদিন পরীক্ষায় বসেইনি এমন ব্যক্তি/ব্যক্তিরা বা জাল ডিএলএড সার্টিফিকেটধারীদেরও চাকরি দেওয়া হয়েছে।
  • (৭) হাইকোর্টের নির্দেশে ৩৯৫ জনের মতো প্রাথমিক পর্যায়ে চাকরি গেছে (যদিও সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে)।
  • (৮) প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি এখন জেলে।

তাই, নন-ইনক্লুডেডরা আজ দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত। দুর্নীতি যদি একটু কম হত, এরা সবাই আজ চাকরি করত এবং ৩,৫০০ ও ৩৯,২৯টি সিটের এরাই আসল হকদার। এই হকের লড়াই লড়তে গিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বারবার আক্রান্ত, অপমানিত ও পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। অবশেষে শহীদ মিনার ময়দানে কোর্টের পারমিশন নিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির সামনে তাদের অবস্থান শুরু করে। অবস্থান চলাকালীন বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিদের সাথে তারা সমস্যা সমাধানের জন্য বারবার আবেদন জানায়। কিন্তু সরকার বা পর্ষদের পক্ষ থেকে সমাধান তো দুর অস্ত তাদের আন্দোলনকে কোনোরকম মান্যতা দিতেই রাজি হয়নি। পরিবর্তে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৩,৫০০ প্লাস ৩,৯২৯’র সাথে আরো কিছু সিট যোগ করে ১১,০০০ সিটে নিয়োগের কথা ঘোষণা করে এবং ২০১৭ অর্থাৎ টেটের তৃতীয় ব্যাচের সাথে তাদের ও ইন্টারভিউয়ের জন্য আবেদন করতে বলে, এটা আসলে সরকার তার নিজের মুখ রক্ষার জন্য আবারও প্রতারণার ফাঁদ পাতলো। ২০১৪ নট ইনক্লুডেড’এর সামনে এবং সুকৌশলে ২০১৭ ব্যাচের সাথে তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ে দাঁড় করিয়ে দিল। ২০১৭ এখনো এই দুর্নীতির তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি। কারণ তারা এখনো একবারও ইন্টারভিউ দেয়নি, তাদের টেট পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোয় ২০২২’র জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ২০১৪ তাদের অভিজ্ঞতায় বুঝেছে আবার ইন্টারভিউ, আবার প্রতারণা (ন্যাড়া কবার বেলতলায় যাবে)। তাছাড়া ২০১৪ ও ২০১৭’র মধ্যে তথাকথিত একাডেমিক কোয়ালিফিকেশনের কারণে ২০১৭, ২০১৪’র চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে এবং ২০১৪ সালে যারা আবেদন করেছিল তাদের প্রায় সকলের বয়স ৪০ অথবা ৪০ প্লাস। তাই এটা তাদের কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই এবং তাদের এই পরিণতির জন্য দায়ী সরকারের দুর্নীতি এবং সরকারের নিয়োগ বিমুখিণতা। তাই এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। যখন বিভিন্নভাবে সরকার তাদের চাকরি পাওয়ার সমস্ত রাস্তাই বন্ধ করে দিতে চাইল তখন তারা বাধ্য হয়ে করুণাময়ীতে শুরু করল অনশন কর্মসূচি। তারপর রাতের অন্ধকারে পুলিশ কিভাবে তাদের আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল, তা সকলের কাছে পরিষ্কার। এই দুর্নীতির দায়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জেলে, প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতিও জেলে, আর জেলে যাওয়ার কথাতো দুর্নীতির অন্যতম পান্ডা শুভেন্দু অধিকারীর। জেলে যাওয়ার কথা শঙ্কুদেব পান্ডা, বিশ্বজিৎ কুন্ডু সহ তৃণমূলের (দলছুট) বড় বড় নেতাদের। তার পরিবর্তে এই স্বৈরাচারী শাসক তার দুর্নীতিকে চাপা দিতে আজ পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করে জেলে পাঠাচ্ছে পশ্চিমবাংলার গরিব বাড়ির মেধাবী যোগ্য ছেলেমেয়েদের। দুর্নীতি করে এই সমস্ত বেকার ছেলেমেয়েদের জীবনের স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করেছে এই সরকার। নিয়োগ বন্ধ রেখে তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে আট আটটা বছর। তারা আশা করেছিল এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু সরকার তাদের ন্যায্য দাবির কোনো মান্যতা তো দিতেই চায়নি, কোনো রকম আলোচনায় না গিয়ে স্বৈরাচারী শাসকের মতো নখ দাঁত বার করে তাদের ন্যায্য চাকরি ফিরে পাওয়ার সমস্ত আশাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর কত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে তবে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে! এগুলোতো আত্মহত্যা নয়! এগুলো খুন, ঠান্ডা মাথায় খুন, আর সরকার এই খুন করছে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, ক্ষমতায় টিঁকে থাকার জন্য। এই সরকার আর দুর্নীতি, একে অপরের পরিপূরকে পরিণত হয়েছে। তাই আজ আর বসে থাকা নয়। এই অমানবিক নির্লজ্জ সরকারের বিরুদ্ধে আসুন সকলে গর্জে উঠি — আন্দোলনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। সম্মিলিত কন্ঠে আওয়াজ তুলি “দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের অবিলম্বে নিয়োগ দাও। বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দাও”।

- সজল দে

খণ্ড-29
সংখ্যা-42