সপ্তাহের প্রথম দিন, গত ১৭ অক্টোবর ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা অনশন-বিক্ষোভ শুরু করেন। সল্টলেক করুণাময়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে বিক্ষোভকারীরা ধর্ণায় বসেন৷ তারা সাফ জানায়, নিয়োগপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেকার যুবক-যুবতীরা এসে ভীড় করেছে কলকাতার বুকে। বেকার সমস্যা সমাধানে বরাবরই সরকার ব্যর্থ। টেট-এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা দিনের পর দিন চাকরির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্দোলনের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর, আইসা এবং আরওয়াইএ-র পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল অবস্থান মঞ্চে যায় এবং সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। অনশনরত চাকরিপ্রার্থী পিয়ালি গুছাইত, নমিতা দাস অধিকারী, আমিনা সুলতানা, অচিন্ত্য ধারা বলেন নিজেদের সমস্যার কথা। এদের কারোর বাড়ি হাওড়া-হুগলি-চব্বিশ পরগণা, কারোর বর্ধমান, কেউ বা থাকেন অন্য কোথাও। অথচ, পরিবারের ছবি সকলেরই প্রায় এক। মহিলারা কেউ সন্তানদের ফেলে এসে অবস্থান করছে, কেউ আবার সন্তানদের কোলে নিয়ে শহরের বুকে রাত কাটাচ্ছে। আর্থিক অনটনের কারণে অনেকেই টিউশন পড়িয়ে দিন গুজরান করে। কেউ অস্থায়ী ক্ষেত্রে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালায়। দেশের অন্যান্য যুবদের মতো এদেরও দু’বেলা অন্নসংস্থান ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তাই আন্দোলনকারীরা সকলেই সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় শিক্ষকতার চাকরি চেয়ে অনশনে বসেন।
আন্দোলনে সামিল হওয়া সকল যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়াকে পূর্ণ সমর্থন জানায় আইসা-আরওয়াইএ।
পরদিন, অর্থাৎ ২০ অক্টোবর পুলিশবাহিনী রাতের অন্ধকারে এই বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করে। পুরুষ পুলিশেরা মহিলা আন্দোলনকারীদের মারধোর করে। অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক তাদের অনশন ভেঙে দিয়ে আন্দোলনকারীদের তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা হয়।
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে রাস্তায় নামে আইসা, আরওয়াইএ, পিডিএসএস, এপিডিআর সহ বিভিন্ন গণসংগঠন।
হাওড়া
মধ্যরাত্রে পুলিশী অভিযান ও আন্দোলনকারীদের রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তারের ঘটনার বিরুদ্ধে ২১ অক্টোবর হাওড়ার বাগনানে ও বালিতে জোড়া সভা ও পথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। বাগনানে আইসা, আয়ারলা এবং বালিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বালি-বেলুড় লোকাল কমিটি ও আইসা বালি-বেলুড় জোনালের যৌথ উদ্যোগে সংগঠিত হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি।
হাওড়ার রামরাজাতলা, আড়ুপাড়া, জগৎবল্লভপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে হয় পোস্টারিং।
হুগলী
চারিদিক দীপাবলির লাউডস্পিকারে মুখর, কোথাও কোথাও বড় করে পুজোপ্যান্ডেল উদ্বোধন চলছিল। তার মধ্যেও ২৩ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় হুগলিতে পথে নামলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তরপাড়া থানা এরিয়ার কমরেডরা। উৎসবের পরিবেশেও যথেষ্ট সংগঠিত, উজ্জীবিত আর মুখর মিছিল চললো ২নং কলোনি বাজার থেকে হিন্দমোটর ইঁটখোলা মোড়, ধর্মতলা বাসস্টপেজ দিয়ে জিটি রোড পরিক্রমা করে কোন্নগর বাটা থেকে ক্রাইপার রোড হয়ে মনসাতলা ও মাস্টারপাড়া পেরিয়ে আবারও পার্টি অফিস। সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে কয়েকদিন আগে গভীর রাতে অনশনরত যে টেট উত্তীর্ণ তরুণ-তরুণীদের তৃণমূল সরকারের পুলিশ জোর করে তুলে নিয়ে যায় কিম্বা গান্ধী মূর্তির নীচে বসে থেকে সব উৎসব তুচ্ছ করে যে এসএসসি চাকরীপ্রার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে প্রায় ৬০০ দিন কাটিয়ে ফেললো তারা আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরাই। এটা অনুভবে ছিল তাই নেমে পড়া গেল। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার।
শিলিগুড়ি
জমি, আবাস, বকেয়া মজুরির দাবিতে, শিলিগুড়ি শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যর্থ প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সল্টলেক করুনাময়ীতে অনশনকারীদের উপর পুলিশী হামলার বিরুদ্ধে, জিএন সাইবাবা সহ সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির দাবিতে আজ শিলিগুড়ি পোস্ট অফিসের সামনে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দুপুর ৩টে থেকে ৫টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এই গণঅবস্থানের উদ্যোক্তা সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও সারা ভারত গ্রামীণ ও কৃষিমজুর সমিতি। এই গণঅবস্থানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, রাজ্য কমিটি সদস্য বাসুদেব বসু, সারা ভারত কিষাণ মহাসভার দার্জিলিং জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, সারা ভারত গ্রামীণ ও কৃষিমজুর সমিতির পক্ষে শ্যামল ভৌমিক, তিস্তা মহানন্দা ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা কৃষ্ণপদ সিংহ প্রমুখ। সভায় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন মীরা চতুর্বেদী ও গৌতম চক্রবর্তী। গণঅবস্থান থেকে আগামী ১৪-১৫ নভেম্বর ২০২২ হুগলীর চন্দননগরে সারা ভারত গ্রামীণ শ্রমিক ও কৃষি মজুর সমিতির ৭ম সর্বভারতীয় সম্মেলন সফল করে তোলার আহ্বান জানানো হয়।