কুমারঘাটে মন্ত্রীপুত্রের ভাড়া করা বাড়িতে সংগঠিত গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর প্রতি ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মন্ত্রী ভগবান দাসকে সাময়িকভাবে নিলম্বিত করতে হবে
১৯ অক্টোবর সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি এক প্রেস বিবৃতিতে জানান — ঊনকোটি জেলার কুমারঘাটে মন্ত্রী ভগবান দাসের পুত্রের ভাড়া করা বাড়িতে ১৫ বছরের এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়। মন্ত্রীপুত্র ও ঘনিষ্ঠ একাধিক ৪/৫ জন এই গণধর্ষণ কাণ্ডের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা একটি তিনতলা বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে। পরে পুলিশ ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে। জবানবন্দিতেই উঠে আসে অভিযুক্তদের নাম। এক্ষেত্রে মন্ত্রীপুত্রের নাম মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে বলে খবরে প্রকাশ। কিন্তু পুলিশ মন্ত্রীপুত্রকে গ্রেপ্তার করছে না। গণধর্ষণে ব্যবহৃত ভাড়া করা বাড়িটিকে সিল করেছে ও একটি গাড়ি হেফাজতে নিয়েছে। গাড়ির চালক, একজন মহিলা ও একজন মূল অভিযুক্ত সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু শাসক দল বিজেপি ও পুলিশ কর্তৃক মূল অভিযুক্তকে আড়াল করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে মূল অভিযুক্ত নাকি দিল্লীতে আত্মগোপন করেছে বলে সংবাদ। অথচ পুলিশ নিশ্চুপ। কারণ রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান দাস নিজের পুত্রকে বাঁচানোর জন্য দলীয় ও প্রশাসনিক ক্ষমতাকে খোলাখুলিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু নিজের মন্ত্রীসভার সদস্যের পুত্রের এই গণধর্ষণ কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠার পর থেকে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অদ্ভুতভাবে নীরব। মুখ খুলছেন না। এটাই মুখ্যমন্ত্রীর সুশাসনের আসল নমুনা। সুশাসন তাই আজ দু-শাসনের নামান্তর। তাই কুমারঘাট মহকুমার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। মূল অভিযুক্তদের ও মন্ত্রীপুত্রের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
বিজেপি’র শাসনকালে এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ গত সাড়ে চার বছরে রাজ্যে ৪৬০টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৩৬৩ জন মেয়ে আজও নিখোঁজ রয়েছে। রাজ্য মহিলা কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। কন্যা ও নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আইনের শাসন বিপন্ন। বিজেপি মুখে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’এর কথা বলে। কাজে ঠিক তার উল্টো। যেমনটা আমরা উত্তরপ্রদেশে যোগীর রাজ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১৯-এ উন্নাও ধর্ষণকান্ডে ও আক্রান্তের পিতা, মাসি সহ তিনজন স্বাক্ষীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত বিধায়ক কুলদীপ সিং সিঙ্গার, সম্প্রতি উত্তরাখন্ডে আমরা বিজেপির নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী বিনোদ আর্যের পুত্র পুলকিৎ আর্য কর্তৃক অঙ্কিতা গণধর্ষণ ও হত্যার সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করা ও গুজরাটের বিলকিস বানুর গণধর্ষণকারীদের মাঝপথে কারাদণ্ড মুকুব করার বেলায় দেখেছি। গত বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্য আইনমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ গোমতী ডেয়ারি চেয়ারম্যান কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। কিন্তু আইনমন্ত্রী তা ধামাচাপা দিতে বলপ্রয়োগ করেন। যাতে করে বিজেপির নারীদের প্রতি মধ্যযুগীয় পিতৃতান্ত্রিক, মনুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণিত হয়।
তাই আমাদের দাবি কুমারঘাট গণধর্ষণ কান্ডে আক্রান্ত কিশোরী ও তাঁর পরিবারকে ন্যায়বিচার দিতে নিরপেক্ষ, চাপমুক্ত ও সুষ্ঠু তদন্তের সুযোগ দিতে হবে। তারজন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মন্ত্রী ভগবান দাসকে সাময়িকভাবে নিলম্বিত করতে হবে। এই প্রশ্নে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে নীরবতা ভেঙে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূল অভিযুক্ত সহ মন্ত্রীপুত্র ঘনিষ্ঠ সব অভিযুক্তদের আর দেরী না করে গ্রেপ্তার করতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অবাধ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর ভার্মা কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ধর্ষিতা কিশোরীর উপযুক্তভাবে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজ একমাত্র সুশাসনেই সম্ভব। একথা ২০১২-তে নির্ভয়া কাণ্ডের পরে গঠিত ভার্মা কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভার্মা তাঁর রিপোর্ট প্রকাশ ও সুপারিশ করতে গিয়ে বলেছিলেন।