‘দিল্লী নগর আশ্রয় উন্নতি বোর্ড’এর রুলসে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, ২০১৫ সালের আগে থেকে যারা বস্তিগুলিতে বসবাস করছেন তাঁদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে কোনওরকম উচ্ছেদ করা যাবে না। তথাপি বস্তির শ্রমজীবীদের উচ্ছেদ করাটা দিল্লী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘ডিডিএ’র নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বড়লোকের স্বার্থে ‘উন্নয়ন’ নীতিতে যত খুশি জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই জমি গ্রাস চলছে যখন জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ও পরিবেশ-প্রকৃতি ক্ষয়ের কারণে জমি অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। গ্রাম থেকে শহরে জমি ও জীবিকা থেকে শ্রমিক শ্রেণীর উচ্ছেদ, কোনওরকম পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই, অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে।
শহর ও আধাশহর গঞ্জে প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এইসব জায়গায় আবাসের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। দিল্লীতে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনের সময় খুব প্রতিশ্রুতি দেয় ‘জাঁহা ঝুগ্গি, ওঁহা মকান’ শ্লোগান তুলে। কিন্তু তা আর কখনই বাস্তবায়িত হয় না।
রাজধানী দিল্লীতে বস্তিবাসীদের অধিকার সংগঠিত করতে এআইসিসিটিইউ ও আইসা সহ কিছু গণসংগঠন ও নাগরিক সংগঠন ধারাবাহিক লড়াই গড়ে তুলেছে। জাহাঙ্গিরপুরি ও ধোবিঘাট বস্তিতে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করে বুলডোজার থামিয়ে দেওয়া গেছিল। গত ৬ সেপ্টেম্বর যন্তরমন্তরের রাস্তায় এক যৌথ প্রতিবাদে সামিল হয় বিভিন্ন বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন, গণসংগঠন ও নাগরিক সংগঠন। গত কয়েকমাসে মোদী সরকারের বুলডোজার রাজ রাজধানি শহরের যে সমস্ত শ্রমিক বস্তিতে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে সেই সমস্ত জায়গা থেকে মানুষেরা এসেছিলেন। ধোবিঘাট ঝুগ্গি অধিকার মঞ্চের কনভেনর বিবি আখতারি বলেন, ভোটের আগে ‘জাঁহা ঝুগ্গি, ওঁহা মকান’ বলা হয়েছিল আর এখন মকান তো দূরের কথা মাথা গোঁজার একটা ঝুপড়িও রাখতে দিচ্ছে না, জল বন্ধ করে দিচ্ছে, লাইট বন্ধ করে দিচ্ছে, বুলডোজার চালিয়ে সব গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; আমরা বিগত তিন বছর ধরে আদালতে শুনানি দিয়ে যাচ্ছি, প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সরকারের কানে যাচ্ছে না।
যন্তরমন্তরের এই যৌথ প্রতিবাদসভা থেকে আহ্বান রাখা হয় সমস্ত বিপন্ন বস্তিবাসী মানুষকে সংগঠিত করে বুলডোজার রাজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার।