সম্প্রতি মহিলাদের এক আলোচনা সভায় এই প্রতিবেদকের থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী এবং বিভিন্নভাবে জীবন সংগ্রামে লড়তে থাকা মহিলাদের সাথে পরিচয় হয়। আমি তার মধ্যে থেকে দু’একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। আমার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতাও সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাই।
একজন মহিলা বলেন, তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর নিজের সংসারে দুই ছেলেমেয়ে এবং নিজের মা বাবাকেও দেখতে হয়। স্বামী অন্য একজন মহিলাকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। তাঁর আয়ের সবটাই চলে যায় পরিবারের খরচ চালাতে। নিজের কথা ভাবার সময় নেই। হাড়ভাঙা খাটুনির পর বিশ্রামটুকুও জোটে না। তিনি চান তাঁর বাচ্চারা যেন সুস্থ জীবন পায়। তিনি এই আলোচনা সভায় ছুটে এসেছিলেন কিছু পাওয়ার আশায়।
এবার আসি অন্য আর এক মহিলার অভিজ্ঞতায়। তাঁর স্বামী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এই মহিলা দোকান করে সংসার চালান। নিজের মায়ের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আজ এতগুলো বছর পর তাঁর মা একা। কেন? কারণ ছেলেরা তাঁকে দেখে না। তাঁর নিজের ফিজিক্স নিয়ে অনার্স গ্র্যাজুয়েট হওয়া ছেলের প্রশ্ন, কেন সে তার অন্য বন্ধুদের মতো সুবিধা পায় না? কেন সে ইঞ্জিনিয়ায়িং পড়তে পারলো না? সেই নিয়ে সে মাকেই দোষারোপ করে। ছেলে এখন অবসাদগ্রস্ত। বিয়ের আগে হোক বা পরে, মেয়েদের নিজের মতো করে বাঁচার সুযোগ কোথায়? তাদের স্বাধীনতা কোথায়? শুধু সংসারের দায় কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে এক সময় জীবন ফুরিয়ে যায়। তবে এই মহিলাটি বলেন, “স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়”। কথাটা খুব দামী মনে হয়েছিল। সেই কথার রেশ টেনেই বলি, এই আলোচনা সভায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছিল। লিঙ্গ, পোশাক, মেয়েদের নিজস্ব জীবন-যাপন ইত্যাদি প্রসঙ্গে।
আলোচনা প্রসঙ্গে একজনের মন্তব্য, একজন রূপান্তরকামী নারী নাকি ‘হিজড়ে’ অর্থাৎ আন্তঃকামী সম্প্রদায়ের মানুষরা সমগোত্রীয়। কিন্তু আসলে তা নয়। রূপান্তরকামী নারী সবসময় নিজেকে একজন মহিলা হিসেবেই পরিচয় দিতে চান, কিন্তু ‘হিজড়ে’ মানুষরা নিজেদের একটি আলাদা তৃতীয় সম্প্রদায় তৈরি করতে চান। এছাড়া তাদের মধ্যে আরও বেশ কিছু পার্থক্য আছে। সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা যেতে পারে। এবার আসি একটি অন্য প্রশ্নে। ধূমপান কিন্তু পুরুষ নারী উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। কারণ এতে দুজনেরই প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। ফুসফুস তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ই। পোশাকের প্রশ্নও উঠেছিল। যদিও পোশাকের কোনো লিঙ্গ হয় না, তাও পুরুষ হোক বা নারী সকলের পোশাকই ভদ্রস্থ, মার্জিত ও রুচিশীল হওয়া প্রয়োজন। যদিও এব্যাপারে নিজের পছন্দ শেষ কথা এবং মনে রাখতে হবে পোশাক নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে।
এবার আসি নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথায়। সকলেরই কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য বা পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু আজ একজন সেলিব্রিটির সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করেও আমি বা আমরা আমাদের স্যালারি বা বেতন পাই না। কাজ বা শ্রমের মূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত। তিনি একজন নামজাদা মানুষ হওয়ার সুবাদে কেন কিছু তরুণ-তরুণীর শ্রমকে এইভাবে শোষণ করবেন? আমাদের ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে?
- অবন্তী