করোনা মহামারীর ছোবলে বিগত দু’বছর নির্মাণ শ্রমিক সহ সমগ্র অসংগঠিত শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছিল ভয়ঙ্কর অভিঘাত। তারসাথে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করে দাঙ্গা লাগানো, আকাশছোঁয়া, মূল্যবৃদ্ধি ও কাজের বাজার কমে আসায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ৪টি শ্রমকোড এনে শ্রমিকদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিতে উদ্যত।
এমতাবস্থায় নির্মাণ শ্রমিকদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও দৃষ্টি নেই। ফলে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বাতাসে মিলিয়ে গেছে। শুধু আপনি কিভাবে মরেছেন সেই অনুযায়ী অনুদানের পরিমাণ ঠিক হবে। আর অবসর হলে পেনশন। তাও আদায় করতে জুতোর শুকতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিচ্ছে। দাবিবিহীন হয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিকরা প্রশ্ন তুলছে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রচিত কেন্দ্রীয় আইনবলে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য নির্মিত ক্ষেত্র থেকে ১ শতাংশ সেস আদায় করে তহবিল গঠন করা এবং সেখান থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া এবং ৫ শতাংশ দপ্তরের খরচে ব্যবহার করা। সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা বন্ধ করে কেবলমাত্র মৃত্যু ও অবসরে অর্থ ব্যয় করছেন। তাহলে সেস থেকে আদায়কৃত হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে? তা শ্রমিকদের কাছে পরিষ্কার নয়। সরকারের মনোভাব এমন যে বাংলায় নতুন করে আর নির্মাণ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে না অথবা সব নথিভুক্ত হয়ে গেছে। সরকারি দপ্তরের আধিকারিকরা একবার বড় বড় নির্মাণ স্থলগুলো পরিদর্শন করে আসুন তাহলে দেখতে পাবেন কত নির্মাণ শ্রমিক আজও অনথিভুক্ত হয়ে আছে। আর যারা নথিভুক্ত হয়ে আছেন তাদের মধ্যে অনকেই নানা কারণে সময়মতো পুনর্নবীকরণ না করতে পারায় বাতিল হয়ে যাচ্ছেন। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।
আর কাগজ খুললেই চোখে পড়ে কোনো না কোনো নির্মাণ শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় মারা গেলেন। সর্বভারতীয় যেকোন রির্পোটে চোখ বুলোলে দেখতে পাবেন সবচেয়ে বেশি কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা যায় এই শিল্পে। কিন্তু নির্মাণ কর্তৃপক্ষের শাস্তিদানের ছবি প্রায় দেখাই যায় না। মজুরির ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি বঞ্চনা। সরকারি ন্যূনতম মজুরি এ-জোন, বি-জোন হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। এ-জোনে একজন দক্ষ শ্রমিক ৪২৭ টাকা, বি-জোনে ৩৯৮ টাকা দৈনিক মজুরি। অদক্ষ শ্রমিকের অবস্থা অনুমেয়। আজকের দিনে বাজারদর অনুযায়ী ক্যালকুলেশন করলে দক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি দাড়ায় ১,০০০ টাকা। কিন্তু তা থেকে অনেক কম মজুরি ঘোষণা করেছে সরকার। নির্মাণ শ্রমিকদের বঞ্চনা এক সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে ব্যপক প্রচার করা, সংগঠিত করা, বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকারের কাছে গণডেপুটেশন দেওয়া দরকার। আওয়াজ উঠুক –
- কিশোর সরকার