গত ২৮ আগস্ট, ২০২২ যাদবপুরের প্রতাপগড় স্কুলে সম্পন্ন হল সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির অস্টম কলকাতা জেলা সম্মেলন। শহিদদের উদ্দ্যেশ্যে মাল্যদান ও নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়। সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন কবিতা চৌধুরী, স্নিগ্ধা বসু ও ছবি দাস। আইপোয়ার রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাজল দত্ত। গণ-সংস্কৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে কমরেড নীতিশ রায় গান করেন ও বক্তব্য রাখেন। এআইসিসিটিইউএর পক্ষ থেকে কমরেড সুশান বক্তব্য রাখেন। বিদায়ী সভাপতি ইন্দ্রাণী দত্ত সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ইতিহাস ও বর্তমানে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, শিক্ষা, কাজ ও সমানাধিকারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয় মনে করান। খসড়া পাঠের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। খসড়ার উপর মত প্রকাশ করেন সম্মেলনে আগত সাধারণ সদস্যরা। সংগঠনের মধ্যে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ-সাম্য প্রসঙ্গে সমকালীন নারীবাদী আন্দোলন নিয়ে পড়াশোনা ও চর্চা চালানোর গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন সৌমী জানা। নির্মাণ শ্রমিক শিখা তুলে ধরেন গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও বিশেষত মেয়েদের হয়রানীর কথা। মোদী সরকার যে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে চলছে অন্যদিকে পুরুষশাসিত সমাজ-ব্যবস্থাকে ধুয়ো দিয়ে মেয়েদের ঘর বন্দী করার পরিকল্পনা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা বলেন কমরেড শিখা। গৃহ-শ্রমিক রাণী হালদার ও শুক্লা হালদারের কথায় উঠে আসে গৃহ-শ্রমিকদের নিত্যদিনের দুর্দশা, অন্যায্য মজুরি কাঠামো ও কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত হয়রানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা ও সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। মোদী-রাজে মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের উপর নেমে এসেছে কঠোর আক্রমণ। এই আক্রমণের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন গরিব ও প্রান্তিক মেয়েরা। কখনো মুসলিম মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে, কখনো গরিব ও প্রতিবাদী মেয়েদের ঘরবাড়ির উপর বুলডোজার চালিয়ে বা জেলে বন্দী করে অত্যাচার চালাচ্ছে বিজেপির সরকারগুলি। নারীর স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার উপর সামগ্রিক এই আক্রমণকে রুখতে আইপোয়ার সংগঠনকে আরো মজবুত করার কথা বলেন সম্প্রীতি। রুপান্তরকামী নারীর লড়াইকে আইপোয়ার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্তভাবে যুক্ত করার গুরুত্বের কথাও বলেন সম্প্রীতি। পর্যবেক্ষক কাজল দত্ত বলেন, মেয়েদের ঘরের ভিতর ও বাহির – দ্বি-মুখী লড়াইয়ের কথা। সমাজের পশ্চাৎগামী মানসিকতার বিরুদ্ধে নিজের স্বাধীনতার লক্ষে মেয়েদের লড়াই করতে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। জবাবী ভাষণে, বিদায়ী জেলা সম্পাদিকা মমতা ঘোষ, সম্মেলনে আলোচিত বিষয়গুলির প্রয়োজনীয়তাকে চিহ্নিত করে আগামীতে সমিতির কর্মসূচিকে গড়ে তোলার আহ্বান রাখেন। নতুন জেলা কমিটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জেলা সম্মেলন সম্পন্ন হয়। নব্য জেলা কমিটির সদস্যরা কমরেড চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরীকে সম্পাদক পদে ও কমরেড মমতা ঘোষকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করে।