মানব উন্নয়ন সূচকের গঠনে তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত : জন্মের সময়ে প্রত্যাশিত গড় আয়ু (একসপেকটেড লাইফ এক্সপেকট্যান্সি এ্যাট বার্থ), শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় (প্রত্যাশিত গড় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সময়কাল, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গড় সময়কাল) ও মাথাপিছু জাতীয় আয় (ক্রয়মূল্যের সমতার ভিত্তিতে)। কিন্তু ওই সূচক লিঙ্গ বৈষম্য বা আয় বৈষম্যকে প্রকাশ করে না। তাই মানব উন্নয়ন সূচক রিপোর্ট বৈষম্যকে গুরুত্ব দিয়ে ইনইকোয়ালিটি এ্যাডজাস্টেড মানব উন্নয়ন সূচকও প্রকাশ করা হয়। আর্থিক বৈষম্য যে দেশে যত বেশি সে দেশে মানব উন্নয়ন সূচক ততটা কমে যায়। ভারতের বৈষম্যের সহগ ২৪.৪ যা চিন (১৪.৮), বাংলাদেশ (২৩.১) ও নেপাল (২৪.৩)এর থেকে বেশি। ফলে বৈষম্যকে ধরে সূচক তৈরি করলে ভারতের মানব উন্নয়ন সূচকের ২৫% হ্রাস ঘটে। চিনের ক্ষেত্রে তা ১৫.২%, সারা বিশ্বে ১৯.৪%। ভারতের বৈষম্য কতটা তা আয়ের বণ্টন দেখলেই বোঝা যায়। দেশের ১% ধনাঢ্য ব্যক্তি দেশের মোট আয়ের ২১.৭% আয় করে, নিম্নতম আয়ের বন্ধনীতে থাকা ৪০% মানুষ মোট আয়ের ১৯.৮% উপার্জন করে। অর্থাৎ ১% ধনীতমদের গড় আয়ের তুলনায় ৪০% দরিদ্রতমদের গড় আয় ৪৪ ভাগের এক ভাগ। চিনের ক্ষেত্রে ওই অনুপাত ৩২। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই অনুপাত আরো কম, ৩০; ভূটান (৩২) ও নেপাল (২৭) সব কটি দেশই ভারতের থেকে তুলনামূলক উন্নত অবস্থানে আছে।
ভারতের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয় পাকিস্তান ও আফগানিস্থান ব্যতিরেকে দক্ষিণ এশিয়ার (ও চিনের) অন্য সব দেশের গড় আয়ু থেকে কম। ভারতবাসীর গড় আয়ু যেখানে ৬৭.২ বছর, বাংলাদেশের ৭২.৪ বছর, চিনের ৭৮.২ বছর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় থাকার প্রত্যাশিত গড়ও ওই পাকিস্তান ও আফগানিস্থান ছাড়া অন্য সব দেশের থেকে কম।
লিঙ্গ বৈষম্য সূচকের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ১২২তম। ফলে শাসক বিজেপি বলতে চাইছে যে, মোদি জামানায় নারীদের মর্যাদা দেওযা হচ্ছে। খুঁটিয়ে দেখলে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। ২০১৮ সালেও ভারত ১২২তম স্থানে ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ভারতের অতি অল্প বয়সের নারীদের (১৫-১৯) ১০০০ জন প্রতি ১৩.২ জন শিশু জন্মাত, ২০২১ সালে তা বেড়ে ১৭.২ হয়েছে। সংসদে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৩.৪%, যা ভূটান, নেপাল, বাংলাদেশ এমনকি পাকিস্তানের থেকেও বেশ কম। কর্মীবাহিনীতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ২০১৮ সালে ২৩.৬% থেকে কমে ১৯.৪%এ দাঁড়িয়েছে। যা নেপাল (৭৮.৭%), ভূটান (৫১.৬%) বাংলাদেশ (৩৪.৯%) ও পাকিস্তান (২০.৭%) থেকে কম।
সামগ্রিকে আয় বৈষম্য ও লিঙ্গ বৈষম্যও ভারতের পক্ষে যথেষ্ট নৈরাশ্যব্যঞ্জক।