গ্রামীণ ভারতের মেহনতিদের; বিশেষত কৃষিশ্রমিকদের আজকের মূল সংকট বছরভর কাজ পাওয়া নিয়ে। বাজারদর সাপেক্ষে মজুরির নিয়মিত ও যথাযথ বৃদ্ধি না থাকার কারণেও আজ জীবন-জীবিকা বিপন্ন। বাড়ছে ঋণগ্রস্ততা, আত্মহত্যার প্রবণতা!
২১ শতকের শুরুতে গ্রামীণ কাজের মূল ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে ১০০ দিনের সরকারি প্রকল্প। অথচ ২০১৪-তে ক্ষমতায় বসেই মোদী সরকার নানান অজুহাতে, ধীর মতলবে বন্ধ করতে চাইছে ১০০ দিনের প্রকল্প। এরাজ্যের সরকারি দলের পঞ্চায়েত স্তরের কর্তাদের ১০০ দিনের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে গত ডিসেম্বর থেকেই প্রকল্পে টাকা পাঠানো আটকেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মমতা কেন্দ্রকে দোষ দিয়েই দায়-দায়িত্ব সারতে চাইছেন।
এই পরিস্থিতিতে বিপন্ন, ঋণগ্রস্ত গ্রামীণ শ্রমিকদের নিয়ে গত ৮ জুন চুঁচুড়া জেলা সদরে সফল বিক্ষোভ-ডেপুটেশন কর্মসূচি সংগঠিত করে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি। পরবর্তীতে চলে গণসংযোগ সহ সদস্য সংগ্রহ অভিযান। জেলার আয়ারলা নেতৃত্বের অধিকাংশই আন্তরিক প্রচেষ্টায় নিজেদের জনসংযোগে যুক্ত করেছেন। আছেন অন্যান্য সংগঠকরাও।
এআইএআরএলএ’র হুগলি জেলা নেতৃত্ব এবছরের মে মাসের বৈঠক থেকে স্থির করে প্রথম পর্বে তিন মাসের গণসংযোগ ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষে অগস্ট মাসে সংগঠিত হবে ৭ম জেলা সম্মেলন। স্থির হয়, গণসংযোগ ও গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এই দিশাতে গত ২৮ আগস্ট বলাগড় ব্লকের কামারপাড়া গণমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জেলা সম্মেলন। সময়টা অনুকূল ছিল না। চাষের কাজ ছাড়াও ভারী বর্ষণ বাধা হয়ে ওঠে। ঐদিন সকাল থেকেই ধনেখালি, পোলবা, পাণ্ডুয়া ব্লকে চলতে থাকে বৃষ্টি। সাংগঠনিক বিস্তারকে মাথায় রেখে সম্মেলনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল বলাগড় ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, কামারপাড়া। লাগাতার গণসংযোগ ও আন্দোলনমুখিনতা প্রতিকূলতা অতিক্রমে সহায়তা করে। জেলায় কাজের চারটি মূল ব্লক — পোলবা দাদপুর, বলাগড়, ধনেখালি, পাণ্ডুয়া থেকে ট্রাকে চেপে সংগঠিতভাবে উপস্থিত হন প্রতিনিধিরা। এছাড়াও জাঙ্গিপাড়া ও মগরা ব্লক থেকেও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভালো সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন পোলবার সারাংপুরের আন্দোলনকারীরা, সাথী অঞ্জলি মুর্মু, কাকলি সরেন, মিনু মুর্মুদের নেতৃত্বে। সাথী শৈলেন মাজির নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ধনেখালি ব্লকের সংগঠকরা। পাণ্ডুয়ার ইলছোবা থেকে উপস্থিত ছিলেন ঐ গ্রামে সম্প্রতি সংগঠিত সফল মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনের সংগঠকরা সাথী বিনয় দাসের নেতৃত্বে। বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের আন্দোলনে পা মেলানো বিভিন্ন গ্রামের সাথীরা এখন যুক্ত হচ্ছেন কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতিতে জেলা নেতা সেখ আনারুলের নেতৃত্বে। এসেছিলেন তাঁরাও। বলাগড়ের ঋণমুক্তি আন্দোলনের পঙ্কজ বিশ্বাস, জাঙ্গিপাড়ার ঋণমুক্তি আন্দোলন সংগঠক সুজাতা রায়, বিকাশ রায় সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে।
ওপরের ছবি নতুন জেলা কমিটির
মূল শ্লোগান ছিল, গরিব বিরোধী বুলডোজার রাজনীতি রুখে দাও। পতাকা উত্তোলন করেন বর্ষীয়ান সংগঠক সাথী দুলাল লোহার। মাল্যদান করেন রাজ্য পর্যবেক্ষক ও সমিতির রাজ্য সভাপতি সজল পাল সহ নেতৃবৃন্দ।
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, কাজ ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে সোচ্চার হন বিভিন্ন বক্তা। উঠে আসে জেলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বর্গা উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, জবকার্ডের দাবিতে আন্দোলন, শৌচাগারের দাবিতে আন্দোলন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন, ঋণমুক্তি আন্দোলন, আদিবাসী অধিকার আন্দোলন, বকেয়া মজুরি ও কাজের দাবিতে আন্দোলন, বাস্তুপাট্টার আন্দোলন প্রসঙ্গ। সজল পাল তাঁর বক্তব্যে এই আন্দোলনগুলি আরও বড় আকারে সংগঠিত করার আহ্বান জানান।
এআইকেএম জেলা সম্পাদক মুকুল কুমার মনে করিয়ে দেন মোদীর রাজত্বকালে দলিত ছাত্র হত্যা এবং বিলকিস বানো পরিঘটনায় অপরাধীদের কিভাবে বিজেপি ছেড়ে দিয়েছে, সেই প্রসঙ্গ। বক্তব্য রাখেন প্রদীপ সরকার, সৌরভ রায় এবং শোভা ব্যানার্জী।
সভা পরিচালনা করেন সাথী শৈলেন মাজি, আনারুল সেখ, গোপাল রায়, পাগান মুর্মু, সুকুরমনি মাণ্ডি, বিনয় দাস, মিনু মাণ্ডিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী। সম্মেলন শেষে ২৩ জনের জেলা কমিটি ও ১১ জনের কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। পুনরায় জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন নিরঞ্জন বাগ।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ ও ১৪-১৫ নভেম্বর জেলার চন্দননগর রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত হতে চলা জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার শপথগ্রহণ করেন নতুন কমিটি সহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা।
সম্মেলন সফল করতে আগের দিন থেকেই হাজির ছিলেন আইসা জেলা সংগঠক সাথী তুষার দাস সহ ইলছোবার আইসা সাথীরা। কামারপাড়ার সংগঠক সাথী পঙ্কজ টুডু ও তাঁর সাথীরা, মহীপালপুরের সংগঠকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সফল হয় সম্মেলন।