বিবৃতি
দলিত অধ্যাপক সুধাকর সরদারের ওপর আরএসএসের আক্রমণকে ধিক্কার
Professor Sudhakar Sardar

সুধাকর সরদার একজন আম্বেদকরপন্থী, দলিত অন্দোলনের সাথে যুক্ত অধ্যাপক, কলকাতায় অবস্থিত বি এড কলেজ জগদীশচন্দ্র বসু কলেজে অধ্যাপনা করেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মন্দিরবাজারে এক সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে গেছিলেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর। আরএসএস কর্মীরা তাঁকে নির্মমভাবে মেরেছে। আরএসএসের হামলাটা ছিল আসলে ঐ সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ওপরেই। ওদের আক্রোশ দলিত সমাজের মাথাচাড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে। এবং এই হামলা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, ঠাণ্ডা মাথায়। একটি ভবনের দোতলায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কবিতা-গান-নাচের আসরে চার-পাঁচ জন আরএসএস কর্মী ঢুকে পড়ে সুধাকর সরদারকে মারতে মারতে নীচে টেনে নিয়ে আসে। বাইরে আরএসএসের আরও বড় ঠ্যাঙাড়েবাহিনী অপেক্ষা করছিল। নির্মমভাবে মারা হয় অধ্যাপক সুধাকর সরদারকে। সুধাকর আম্বেদকরের শিক্ষা তুলে ধরে এইসব এলাকায় অনেকদিন ধরেই সামাজিক কাজ করছেন। এলাকায় একটি বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে বুদ্ধমেলা শুরু হয়েছে। প্রাচীন ধর্মরাজ মেলা বা নতুন চালু হওয়া এই বুদ্ধমেলা প্রান্তিক নিপীড়িত মানুষের সামাজিক ঐক্যের পরিসর বাড়ায়। আরএসএস এই ঐক্য ভাঙতে চায়। সেই সংঘাতের পথ বেয়েই এই হামলা। সাংস্কৃতিক কর্মসূচীতে সুধাকর সরদারের বক্তব্য রাখার কথা ছিল। আরএসএস এই কর্মসূচী আটকাতে হুমকি দিতে শুরু করে। প্রথমে যে সভাঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল তা বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপরও নতুন হল ভাড়া নিয়ে যখন কর্মসূচী হচ্ছে দেখে, তখন আরএসএস হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাংস্কৃতিক কর্মসূচীতে আসা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আরএসএসের এই হামলায় আতঙ্কগ্রস্ত হয় পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অধ্যাপক সুধাকর সরদার ২৫ সেপ্টেম্বর দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে জানান, “হিন্দু ধর্মের আচারবিচার সম্পর্কে আমার যুক্তিবাদী অবস্থানের কারণেই এই আক্রমণ। কিছু আরএসএস কর্মী আমাকে আগেও হুমকি দিয়েছে, কিন্তু আমি ভয় পাইনি।” ঘটনার পরদিন বিভিন্ন দলিত আন্দোলন, সংখ্যালঘু সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা মন্দিরবাজার থানায় বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন দেওয়ার পর একজন দুস্কৃতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, বাকিরা পলাতক বলে জানায় পুলিশ। নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী সন্ত্রাসী আরএসএস কর্মকর্তারা অবশ্য পুলিশের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অত্যন্ত দ্রুত হারে বাড়ছে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-38