জেএনইউ-তে এবিভিপি’র হিংসা
ABVP violence in JNU_0

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো একবার এবিভিপি’র গুন্ডামি চলল। ২২ আগস্ট, এবিভিপি নামধারী গুন্ডারা অ্যাড ব্লকের স্কলারশিপ অ্যান্ড প্রজেক্ট (এসঅ্যান্ডপি) বিভাগে ঢুকে কর্মরত কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান সংক্রান্ত ফাইলগুলো এলোপাথারি ছুড়তে শুরু করে, কম্পিউটার ভাঙচুর করে এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ফর্মগুলো দলামোচড়া করে ছিঁড়ে ফেলে কাগজের টুকরোয় পরিণত করে! আরও বদমায়েশীর ব্যাপার হল, এবিভিপি এই অভিযোগের বিরোধিতা করে বলেছে যে তারা মোটেই এসব করেনি, তারা কেবল ছাত্রদের স্কলারশিপ দাবি করতে গিয়েছিল। কিন্তু এভাবে তারা যতই নিজেদের অপকর্ম অস্বীকার করার অপচেষ্টা চালাক, নথিপত্র নষ্ট করে ফেলাটা এবিভিপি’র ছাত্র-বিরোধী মনোভাবকে প্রকাশ করে দিল। বোঝা যাচ্ছে যে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি যাতে দিতে না হয় তার জন্যে জেএনইউ প্রশাসনের সঙ্গে এদের গোপন যোগসাজশ রয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি বিভাগের কর্মীদের বৃত্তি অনুমোদন করার ক্ষমতা নেই। ফেলোশিপ অনুমোদন তো ভাইস চ্যান্সেলর এবং ফিনান্স অফিসারের দায়িত্ব। এসঅ্যান্ডপি সেকশনে দু’বছর আগে ছিল ১৮ জন কর্মী, এখন মাত্র ৬ জন। ফেলোশিপ দ্রুত বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কর্মী সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন, কর্মীর অভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রমকারী কর্মীদের হয়রানি ও তাদের ওপর হামলা তো সমাধান নয়! সাধারণ কর্মীদের উপর এবিভিপি’র হামলা আসলে জেএনইউ’র ক্ষমতাধারী মাথাদের আড়াল করার নাটক। সংসদে শ্রী আব্দুল ওয়াহাবের উত্থাপিত একটি প্রশ্নের উত্তরে, এটি প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, জেএনইউ’কে প্রদত্ত অনুদান ক্রমাগত হ্রাস করা হয়েছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে অনুদান বাবদ মঞ্জুর করা হয়েছে মাত্র ৭ কোটি টাকা, যেখানে তাদের ২০১৭-১৮ সালে শুধু পরিকাঠামো খাতে মঞ্জুর করা হয়েছিল ৩০ কোটি টাকা। অনুদান কেন এতো হ্রাস করা হল, কেন্দ্রীয় সরকার কেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান দিচ্ছে না, এবিভিপি কেন্দ্রীয় সরকারকে কেন সেই প্রশ্ন করছে না? জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ করবে না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থের ব্যবস্থা নিজেদের করে নিতে বলা হয়েছে। আর এই সরকারি অর্থ বরাদ্দ ছাঁটার অর্থ হল ছাত্রদের স্কলারশিপ হ্রাস এবং ফি বৃদ্ধি! এবিভিপি কেন এই অনুদান হ্রাস তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করছেনা? উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার পতন কেবল জেএনইউ’তে নয়, জাতীয় স্তরেও দৃশ্যমান সিইউইটি এবং নেট পরীক্ষা পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ইউজিসি এবং এনটিএ। সিইউইটি-ইউজি পরীক্ষা এখন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে, কারণ প্রতিটি শিফটে বারবার একই সমস্যা উদ্ভুত হয়েছে আর তারফলে পরীক্ষা বাতিল কিংবা স্থগিত হয়েছে। নেট পরীক্ষা বারবার পেছোচ্ছে। এমনকি জেএনইউ’র পিএইচডি প্রবেশিকা পরীক্ষার কোনো খবর নেই, যা এনটিএ’র পরিচালনায় হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে অযোগ্য লোকেদের বসানোর ফলে এক চিরস্থায়ী অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-36