ভদ্রেশ্বর তেলিনিপাড়ায় গঠিত হল এআইএসএ’র ইউনিট। যুগ্ম-সম্পাদিকা হলেন গুলশন আরা ও সাবানা খাতুন, সভাপতি শাহিন খাতুন।
২০২০-তে কোভিড লকডাউনের মধ্যেই হুগলি শিল্পাঞ্চলের নর্থ শ্যামনগর ও গোঁদলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক কোয়ার্টার মহল্লাগুলোকে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর ল্যাবরেটরি বানিয়েছিল আরএসএস-বিজেপি। লকেট চ্যাটার্জী, অর্জুন সিং’রা বিজেপির গুন্ডাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসাবে একের পর এক সংখ্যালঘু শ্রমিক বসতি ভেঙে-চুরে, জ্বালিয়ে ছারখার করেছিল। আজ সেই ডিগবাজি বিশারদ দাঙ্গাবাজ অর্জুন ফের তৃণমূলে। এই তৃণমূল নাকি সংখ্যালঘুদের দরদী? উচ্চারণ করতেও লজ্জা হয় না মমতা ব্যানার্জির। অর্জুন সিংদের মত নামানুষরা গাছের এডাল থেকে ওডাল লাফাতে পারে। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষ তার ঘামের জাত পাল্টায় না, তাতে কেবল মানুষের গন্ধটাই পাওয়া যায়। দাঙ্গার আগুনে সেদিন বইখাতা সহ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের এডমিট কার্ড পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল তরান্নুম, সাহানা, তমান্নাদের, ভবিষ্যতের সবচেয়ে প্রথম ভিতটাই নড়ে গিয়েছিল। তাদের মহল্লার মানুষের পাশে দাঁড়াতে সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এআইএসএ, এআইসিসিটিইউ ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন।
লকডাউনের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। আইসা’র সাথীরা তারমধ্যেই পুলিশ, টিকিট চেকারদের সঙ্গে এই কামরা থেকে ঐ কামরায় লুকোচুরি খেলতে খেলতে বর্ধমান পৌঁছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে পৌঁছে বার করে এনেছিল ডুপ্লিকেট এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, যাতে ওরা পরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে। যদিও কোভিড পরিস্থিতির জটিলতা বাড়ায় সে পরীক্ষা আর হয়নি। এরপরে তাদের শিক্ষাসামগ্রী খাতা, পেন, ব্যাগ, জুতো, মহল্লার ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের জন্যেই সাধ্যমত কিছু পোষাক পরিধান নিয়ে মহল্লায় নেমেছিল আইসা’র গোটা রাজ্য কমিটি। একবার সাহায্যের আবেদন করতেই গোটা রাজ্য থেকে আর্থিক সহযোগিতার অকুণ্ঠ হাত বাড়িয়েছিলেন সেদিন অজস্র কমরেড, বন্ধু ও সাধারণ মানুষ। শুধু কিছু জিনিসপত্রের সাহায্য নয়, দাঙ্গা পীড়িত মানুষের ন্যায়বিচারের দাবিতে সেদিন ভদ্রেশ্বর থানা, চন্দননগর এসডিও কোথায় না দৌড়েছিলেন শ্রমিক সংগঠনের সাথীরা। তৃণমূলের কোনো বড়-মেজো-সেজো নেতাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। সেদিন তৃণমূলের একটা পার্টি অফিসও অবশ্য দাঙ্গাবাজ বাহিনীর হাতে ভাঙা পড়েছিল, কিন্তু কর্মীরা ছিল কোথায়? নিজের গা বাঁচাচ্ছিল নাকি আরো বড় কিছু পাওয়ার আশায় অর্জুন সিংয়ের মতোই পদ্মফুল খুঁজছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর লেখা রয়েছে আক্রান্ত মানুষের মনে। তাই আইসার হুগলি জেলার সংগঠক সৌরভ ইউনিট গঠনের সভায় আরও সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানাতেই ভরে উঠলো ঘর, ছড়িয়ে গেল বিশ্বাসের আর ভালোবাসার সুবাস। কথা হয়ে গেল নভেম্বরে ক্ষেতমজুরদের সর্বভারতীয় সম্মেলনে যতজন সম্ভব একসাথে ভলান্টিয়ার হওয়ার। মিটিং শেষ করে বেরোনোর সময়ে চমকে দিয়ে কমরেড রেশম, তবাস্যুমরা বলল, “দাদা একবার লাল সালাম হো যায়ে”। পাড়া মুখর করে ‘লাল সালাম’ শ্লোগানে মুষ্টিবদ্ধ হল এক ঝাঁক হাত।