ঔপনিবেশিক আমলে পরিবেশ আইনগুলি মূলত তৈরি হয়েছিল বেশি রাজস্ব অর্জন ও উচ্চশ্রেণির স্বার্থরক্ষার দিকে মাথায় রেখে। স্বাধীনতার পরেও প্রথমদিকে এই আইনগুলির খুব একটা বদল হয়নি। বিষয়টি বদলাতে শুরু করল ১৯৭২ সালের স্টকহোম কনফারেন্সের পর। এই কনফারেন্স পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার দিকে সরকার ও জনগণের দৃষ্টিকোণ বদলের চেষ্টা করে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেই ১৯৭২এ তৈরি করলেন ন্যাশানাল কাউন্সিল ফর এনভায়রনমেন্টাল পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিং। ১৯৭২ সালেই এলো ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশ্যান অ্যাক্ট। তৈরি হল চারটি নতুন সংস্থা — জাতীয় ও রাজ্যর বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত পরামর্শদাতা পর্ষদ, জাতীয় চিড়িয়াখানা পর্ষদ, বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ, জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ পর্ষদ।
সরকারের দিক থেকে যেমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হল, তেমনি গণআন্দোলনের মধ্যেও ঢুকে পড়ল পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। ১৯৭৩ সালে সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে শুরু হল বিখ্যাত চিপকো আন্দোলন। উত্তরাখণ্ডের চামোলি ও তেহরি গাড়োয়াল জেলায় মহিলারা গাছ কাটা রুখতে দল বেঁধে এগিয়ে এলেন ও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেন। ১৯৭৪ সালে এল জলদূষণ প্রতিরোধ আইন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮’র মধ্যে চারবার তা সংশোধিত হল। ১৯৭৮ সালে কেরালায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কুন্ঠিপুজা নদীর ওপর বাঁধ তৈরির কথা এলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হল। সাইলেন্ট ভ্যালি নামে এক বনাঞ্চলকে বাঁচানোই ছিল এই আন্দোলনের মূল দাবি।
১৯৮০ সালে তৈরি হল বনাঞ্চল সংরক্ষণ আইন।
১৯৮১ সালে এল বায়ুদূষণ প্রতিরোধী আইন।
১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী তখন দ্য ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এনভায়রনমেন্টাল পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিংকে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রকে রূপান্তর করা হল। তৈরি হল পরিবেশ ও বন মন্ত্রক।
১৯৮৫ সালে মেধা পাটেকর ও বাবা আমতের নেতৃত্বে শুরু হল নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। এই আন্দোলন নর্মদা নদীর ওপর বাঁধ তৈরির বিরোধিতা করে শুরু হলেও ক্রমশ বড় বাঁধের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করতে ও ভাবনায় বদল আনতে সহায়তা করল।
১৯৮৫ সালেই ঘটল ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা। ১৯৮৬ সালে সরকার তৈরি করল পরিবেশ সংরক্ষণ আইন। ১৯৮৮ সালে তৈরি হল জাতীয় বননীতি। ১৯৮৯ সালে এল ক্ষতিকর বর্জ পদার্থ সম্পর্কিত আইন।
১৯৯০’র দশকে ভাগীরথী নদীর ওপর তেহরি বাঁধ নির্মাণের সময় ব্যাপক মানুষের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শুরু হল আন্দোলন।
১৯৯১ সালে সমুদ্র তটভূমি রক্ষা সংক্রান্ত আইন এলো।
১৯৯২ সালে হয়েছিল রিও সামিট। তার নিদানগুলি মাথায় রেখে ১৯৯৫ সালে তৈরি হল ন্যাশানাল এনভায়রনমেন্ট ট্রাইব্যুনাল আইন। এই আইনের লক্ষ্য হল পরিবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনী ও প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদান।
১৯৯৮ সালে বায়োমেডিক্যাল বর্জ প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত নিয়মনীতি এল।
১৯৯৮ সালেই এল জাতীয় চিড়িয়াখানা নীতি।
১৯৯৯ সালে শহরাঞ্চলে কারখানা তৈরির নিয়মনীতি তৈরি হল।
২০০০ সালে পৌর অঞ্চলের কঠিন বর্জ পদার্থ (সলিড ওয়েস্ট) সংক্রান্ত আইন এল। এই বছরেই এল শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা। এই বছরে ওজন স্তরের সংরক্ষণ বিষয়ক নিয়মনীতিও চালু করা হল।
২০০১ সালে শক্তি সংরক্ষণ নীতি এল।
২০০২ সালে এল বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি অ্যাক্ট।
২০০৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে কিছু সংশোধন করে এই সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তি আরো বাড়ানো হল। ২০০৬ সালে আরেকবার এর সংশোধন করে শাস্তি আরো কঠোর করা হল। ২০০৬ সালে এল জনজাতি (সিডিউলড ট্রাইব) ও অন্যান্য বনবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষ আইন।
২০১০ সালে এল ন্যাশানাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট। ২০১১ সালে এল ইলেকট্রনিক বর্জ সংক্রান্ত নিয়মনীতি।
২০১৪ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রককে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মন্ত্রকে রূপান্তর করা হল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সংযুক্ত করে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হল।
২০১৬ সালে বনভূমির জমিকে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে অন্যান্য কাজে ব্যবহারের অধিকার দিয়ে পূর্ববর্তী আইনকে খানিকটা লঘু করা হল, যা পরিবেশ ও জনজাতি, বনবাসী মানুষদের জন্য বিপদজনক।
২০১৬ সালে প্লাস্টিক বর্জ সংক্রান্ত নিয়মনীতি এল। এই বছরেই বাড়ির রঙে লেড ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মে নিয়ন্ত্রণ আনা হল। পৌর অঞ্চলের কঠিন বর্জ পদার্থ (সলিড ওয়েস্ট) সংক্রান্ত আইনকে পৌর অঞ্চলের বাইরে সার্বিক করে তোলা হল এই বছরেই।
২০১৭ সালে এল জলাভূমি সংরক্ষণ সংক্রান্ত নিয়মনীতি।
২০২২ সালে এল বনভূমি সংরক্ষণ সংক্রান্ত নতুন নীতি। ১৯৮০ সালের নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হল।
- সৌভিক ঘোষাল