১৫ আগস্ট গড়িয়ার আজাদ হিন্দ পাঠাগারে “তারাপদ লাহিড়ী স্মারক বক্তৃতা”র আয়োজন করে নাকতলা-বাঁশদ্রোনী অঞ্চলের সাথিবন্ধুরা। মূল বক্তা ছিলেন মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র। এছাড়া বলেন, শ্রদ্ধেয় তারাপদ লাহিড়ীর কন্যা শ্রীমতী ভাস্বতী ঘোষাল এবং আরএসপি-র বর্ষীয়ান নেতা অশোক ঘোষ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অভিরূপা ভাদুড়ী।
স্বাধীনতাসংগ্রামী তারাপদ লাহিড়ী রাজসাহী জেলে বন্দী থাকাকালীন ওকালতি পরীক্ষা দেন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পেশায় আইনজীবী তারাপদ প্রথমে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কমিটি এবং অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৪০ সালে যখন আরএসপি তৈরি হয়, তিনি ছিলেন এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট অফ এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়া”। ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার তাঁর নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছিল কারাগার সংস্কার বিষয়ে। তার ভিত্তিতেই স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘কারাসংস্কার’। বক্তা সুজাত ভদ্র লাহিড়ি কমিশনের সুপারিশকে আন্ততর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অগ্রণী সুপারিশ বলে অভিহিত করেন। প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল, সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের জেলের ভেতরের প্রশাসনের অংশ বানানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। তাদের প্রশাসনের অংশ বানিয়ে জেলখানাকে অত্যাচারের জায়গা বানিয়ে ফেলে হয়। লাহিড়ী কমিশনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল, বন্দীদের মধ্যে শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক বিচারাধীন বন্দী’-র ক্যাটেগরি প্রণয়ন। সুজাত ভদ্র বলেন, লাহিড়ীর দেওয়া রাজনৈতিক বন্দীর সংজ্ঞাই মানবাধিকার আন্দোলনের দেওয়া আধুনিক সংজ্ঞার ভিত্তি এবং বামফ্রন্ট এই রাজনৈতিক বন্দীর ক্যাটেগরিকে আইন স্বীকৃতি দিয়েছিল আর টিএমসি সরকার আসার পর ২০১৩ সালে এই ক্যটেগরিটার কার্যত বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। লাহিড়ী কমিশন সমস্ত ধরনের সাধারণ বন্দীদের মানবিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার, ভদ্রস্থ পোশাক, সাহায্য, যোগাযোগ ইত্যাদির সুপারিশ করেছিল। সুজাত বলেন যে, আগে একজন কয়েদি মাসে ছয়টি ফোন করতে পারত, এখন টিএমসি সরকার সেটা কমিয়ে করেছে দুটো এবং রাজনৈতিক বন্দীদের আত্মীয় ছাড়া বন্ধুবান্ধবকেও জেলে গিয়ে দেখা করতে দেওয়া হয় না। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়া, মহিলা কয়েদিদের অধিকার রক্ষা করা, যারা জেলে রয়েছেন তাদের অবমাননা না করা, সমাজের সাধারণ মানুষের চোখে জেলখানা সম্পর্কে হীন ধারণার অবসান ঘটানো ইত্যাদি সব মিলিয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যে একজন অপরাধী যেন সুস্থ মানুষ হয়ে মুক্তি পান এবং জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারেন। একথা বলে সুজাত ভদ্র সভাঘরে উপস্থিত শ’খানেক শ্রোতার কাছে প্রশ্ন রাখেন, আমরা কি এই জেলখানাগুলি সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে অপরাধকারীকে সমাজের মাঝেই সংশোধনের রাস্তা খুঁজতে পারি না?
প্রতিবেদন: অবন্তী