ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও প্রসারে আদিবাসী মহিলাদের ভূমিকা
traditional knowledge

(জাতিসঙ্ঘ ৯ আগস্টকে ‘বিশ্বের আদিবাসী জনগণের আন্তর্জাতিক দিবস’ বা জনপ্রিয় ভাষায় ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে ২০০৭ সালে, যদিও জাতিসঙ্ঘের উদ‍্যোগে আন্তর্জাতিক স্তরে আদিবাসী জনগোষ্ঠিগুলির সম্মেলন শুরু হয়েছিল ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। এ’বছর জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব আদিবাসী দিবসে চর্চার মূল বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছে ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও প্রসারে আদিবাসী মহিলাদের ভূমিকা’। এই বিষয়বস্তুর ওপর চর্চার পটভূমি হিসেবে পড়ুন জাতিসঙ্ঘ প্রকাশিত প্রচারপত্রটির ভাষান্তর।)

আদিবাসী নারীরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মেরুদন্ড। বংশ পরম্পরায় ঐতিহ্যগত জ্ঞানের সংরক্ষণ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাঁরা। প্রাকৃতিক সম্পদের তত্ত্বাবধান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের রক্ষণাবেক্ষণে তাঁরা যৌথভাবে ও সম্প্রদায়গতভাবে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। অনেক আদিবাসী মহিলা ভূমি ও এলাকা রক্ষায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের সম্মিলিত অধিকারের পক্ষে ওকালতি করছেন।

আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত জ্ঞানের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, “আধুনিক বিজ্ঞানের বয়স অনেক কম। আধুনিক বিজ্ঞান বিকাশের অনেক আগে থেকে আদিবাসীরাই বিকশিত করেছে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা জানার উপায় এবং বেঁচে থাকার অর্থ, উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ।” আদিবাসীদের উপর প্রস্তুত বিশেষ প্রতিবেদনটি ‘বৈজ্ঞানিক জ্ঞান’ শব্দটির ব‍্যাখ‍্যায় ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে সমসাময়িক ও গতিশীল হিসেবে এবং অন্যান্য ধরনের জ্ঞানের সমান মূল্যের বলে বর্ণনা করেছে।

জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) এবং অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞান পরিষদ (আইসিএসইউ)-এর যৌথ সহযোগিতায় প্রস্তুত আন্তর্জাতিক পরামর্শমালায় বলা হয়েছে, “প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়ার ইতিহাসে থাকা জনগণের জানাবোঝা, অনুশীলন, উপস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মধ‍্যে দিয়ে ক্রমপ্রসারিত জ্ঞানই হল ঐতিহ‍্যগত জ্ঞান। বোধ, ব‍্যাখ‍্যা ও অর্থসৃষ্টির এই সুপরিশীলিত ধারা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ‍্য অঙ্গ, যে সংস্কৃতির জটিল বুনটে গাঁথা থাকে ভাষা, নামকরণ ও শ্রেণীবিন‍্যাস ব‍্যবস্থা, সম্পদ ব‍্যবহারের প্রায়োগিক রূপ, আচারবিচার, আধ্যাত্মিকতা ও বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি।”

যাই হোক, আদিবাসী মহিলারা তাঁদের সম্প্রদায়ে উপার্জনকারী, তত্ত্বাবধায়ক, জ্ঞান রক্ষাকারী, নেতা এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, তাঁরা প্রায়শই লিঙ্গ, শ্রেণী, জাতিগত এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে বহুস্তরীয় বৈষম্যের শিকার হন। তাঁদের স্বনিয়ন্ত্রণ, স্বশাসন এবং সম্পদ ও পাবারিক ভূসম্পত্তির ওপর তাঁদের অধিকার বহু শতাব্দী ধরে লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে।

সামান‍্য মাত্রায় হলেও কিছু উল্লেখযোগ‍্য অগ্রগতি ঘটেছে কিছু সম্প্রদায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে। স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে অনেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এবং তাঁদের জমি, তাঁদের সংস্কৃতি ও তাঁদের সম্প্রদায়কে রক্ষায় সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন। তবে, প্রকৃত বাস্তবতা হল, আদিবাসী মহিলারা একদমই কম প্রতিনিধিত্বে আছেন, তাঁদের হয়ে অন‍্যদের নেওয়া সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় তাঁদেরই, এবং বহুবিধ বৈষম‍্য ও সহিংসতার শিকার বারবার তাঁদেরই হতে হয়।

খণ্ড-29
সংখ্যা-31