১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে, ৭ জন মুসলমানকে হত্যা এবং গর্ভবতী বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে, কারণ গুজরাট সরকার তাদের সাজা মাফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম বিরোধী গণহত্যার সময় উক্ত অপরাধ সংগঠিত হয় (এই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল ছিল)। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট দিনটিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের “অমৃত কাল” বলে উদযাপন করতে বলছে। এই দিনে উক্ত অপরাধীদের মুক্ত করার জন্য গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তি কী? ক্ষমা ও মুক্তি কি মুসলমানদের ধর্ষণ ও হত্যার পুরস্কার? এই ভিত্তিতেই কী ২০০২ সালের গণহত্যায় নিহত বা ধর্ষিত মুসলমানদের বিচারের জন্য লড়াই করা নারীদের একজন, তিস্তা শীতলবাদকে কেন কারাগারে বন্দী করা হলো? কারণ, তিনি জাকিয়া জাফরিকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে সাহায্য করেছিলেন এবং সেদিনের সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশকে দোষী প্রমাণ করার আশা করেছিলেন যারা ক্ষমতার লোভে নিজেদের দায়িত্ব বর্জন করে গণহত্যা সংগঠিত করতে সহযোগিতা করেছিল। সাম্প্রদায়িক খুনি এবং ধর্ষকদের শাস্তি দেওয়া আজকের ভারতে সর্বোপরি একটি স্খালন, নিয়ম নয়। সাম্প্রদায়িক খুনি ও ধর্ষকদের সাজা মাফ করা এবং গলায় মালা পরিয়ে তাদের মুক্তি উদযাপন করা, ধর্ষক আর গুন্ডারাজের শাসন জারি করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কী! আজকে হিন্দু-আধিপত্যবাদীদের কাছে প্রকাশ্যে মুসলিমদের গণহত্যা ও ধর্ষণের ডাক দেওয়ার ব্যাপারটা জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরণের অপরাধমূলক কাজের জন্য সরকার বা আইনের হাতে শাস্তিমূলক পরিণতির সম্ভাবনা আজকের দিনে বিরল। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্ত করার সিদ্ধান্ত এই ধরনের পুরুষ এবং তাদের চ্যালাদের সাম্প্রদায়িক উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত অপরাধ করতে আরো উৎসাহিত করবে।
ভারতে, “গোদি মিডিয়া” সঞ্চালকরা (মোদী সরকার এবং বিজেপির পক্ষে প্রচারকারী) নারীবাদী কর্মী এবং নারী আন্দোলনের সংগঠনগুলিকে “ধর্ষকদের প্রতি নরম” বলে অভিযুক্ত করে থাকে, কারণ আমরা ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি। এই ক্ষেত্রে, বিলকিস নিজেই বলেছিলেন যে তিনি মৃত্যুদণ্ড দাবি করবেন না, কারো তিনি নীতিগতভাবে মৃত্যুদন্ডকে ধর্ষণের সমাধান বলে মনে করেন না। আজ যখন বিলকিসের গণধর্ষণকারীরা মাত্র কয়েক বছর জেল খাটার পর মুক্তি পাচ্ছে, এমনকি তাদের যাবজ্জীবন সাজাও হচ্ছে না, গোদী-মিডিয়ার সঞ্চালকদের মুখে ণতালা কেন? কেন তারা বিলকিসের ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কী মন্তব্য করার ফুরসৎ পাবে কি? আমাদের কি এটা বিশ্বাস করতে হবে যে বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতার ইন্ধন ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
#IndiaAt75 ভারতের মেয়েদের জন্য চরম হতাশার দিন হয়ে উঠেছে, কারণ ক্ষমতাসীন বিজেপি এই দিনটিকে বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্ত করার দিন হিসাবে বেছে নিয়েছে।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি
রতি রাও, সভাপতি,
মীনা তিওয়ারি, সাধারণ সম্পাদক,
কবিতা কৃষ্ণান, সম্পাদক