ওড়িশার নবরঙ্গপুর জেলার বুর্জা পঞ্চায়েতে ২৫টি আদিবাসী পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল, ভুট্টাখেত ধ্বংস করে দিল ‘বন সুরক্ষা কমিটি’।
ওড়িশার নবরংপুর জেলার উমরকোট ব্লকের বুর্জা পঞ্চায়েতের অধীনে কোপাসাভটা, সারিয়াভটা এবং লখটিপাখনা গ্রামের একশ’রও বেশি আদিবাসী পরিবার প্রায় ৩০ একর জমিতে ভুট্টাচাষ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
‘বন সুরক্ষা সমিতি’ গত ১৩ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে হঠাৎ এসে এই আদিবাসী পরিবারগুলির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং গরু, মহিষের দঙ্গল নামিয়ে তাঁদের ভুট্টা ফসল নষ্ট করে দেয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে মধুসূদন এই অমানবিক ও অসাংবিধানিক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই হামলায় যাদের ঘরবাড়ি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই ২৫টি আদিবাসী পরিবারকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বুর্জা পঞ্চায়েতের কোপাসাভটা গ্রামের আদিবাসীরা একমাস আগে উমরকোট থানায় বন সুরক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে ওরা আদিবাসী পরিবারগুলোকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার এবং অন্যথায় ফসল নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ উভয় পক্ষকে ডেকে বন সুরক্ষা কমিটিকে বিরত থাকতে বলেছিল। কিন্তু বন সুরক্ষা কমিটি আদিবাসীদের ওপর এই হামলা নামাল।
বিভিন্ন জায়গাতেই ‘বন সুরক্ষা কমিটি’ আসলে স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠি ও বনের অফিসারদের আঁতাতে তৈরি হওয়া অত্যাচারি সংস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০০৬’র বনাধিকার আইন অনুযায়ী বনের জমি ও গৌণ বনজ সম্পদের ওপর আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বন সুরক্ষার নামে কমিটিগুলি আসলে আদিবাসীদের বিতাড়িত করার কাজ করছে। আমাদের রাজ্যে বাঁকুড়া বা উত্তরের তরাই-ডুয়ার্সের আদিবাসীরা বন সুরক্ষা কমিটিতে আদিবাসী ও বনগ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নতুন ‘বন সংরক্ষণ বিধি’ আনতে চলেছে যা বনাধিকার আইনকে এড়িয়ে গিয়ে বনাঞ্চলের আদিবাসীদের অধিকারকে চরম খর্ব করবে। এই নতুন বিধির খবরে উৎসাহিত হয়েই কি উড়িষ্যাতে আদিবাসীদের ওপর এরকম হামলা চলল? উড়িষ্যায় বিজেপির জোটসঙ্গীর সরকার। আদিবাসী স্বার্থের চরম প্রতিপন্থী এই নতুন বন সংরক্ষণ বিধিটিতে দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি যেন স্বাক্ষর না করেন সেই দাবি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন তুলেছে।