ধনেখালি, বলাগড়, পোলবা দাদপুর ব্লক
গণসংযোগ অভিযান অন্তর্বস্তুতে জনমুখী কোনো সংগঠনের শিকড়ে ফেরার অভিযান। পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে, পরিস্থিতিকে বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিতে।
পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। গ্রামীণ দরিদ্ররা, তপশিলি জাতি-আদিবাসী, মেহনতিরা এই রাজ্যে সাম্প্রতিক অতীতেও বারবার জীবন-জীবিকা-গণতন্ত্রের স্বার্থে, উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে সুস্পষ্ট রায় দিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁদের এই জীবনযুদ্ধের সাথে সুগভীর সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হতে হবে আমাদের। সে চেষ্টা পার্টি নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে। গণসম্পর্ক অভিযান তারই এক আন্তরিক প্রচেষ্টা।
আগামী ৬/৮ মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। সাধারণ মানুষ কি এবারও অবাধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত থাকবেন? গত শতকের ৮০’র দশক থেকেই এখানে গ্রাম বাংলার মানুষের বৃহদাংশ বিরোধী মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন।
কীভাবে এই শ্বাসরোধকারী গ্রামীণ জীবনের মধ্যেই আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব?
৩/৪ মাস আগেও ধনেখালিতে আমাদের সাথীরা ভাবতেই পারছিলেন না, চলমান অগণতান্ত্রিক পরিবেশে কিভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ঘটানো সম্ভব! বিগত মে মাস থেকে ‘গ্রামে চলো, পাড়ায় চলো, ঘরে-ঘরে চলো’ অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে আজ তাঁরা অন্তত কয়েকটি পকেট দেখতে পাচ্ছেন, যেখান থেকে আগামীর যুদ্ধকে কেন্দ্রীভূত করা যায়। এখানেই গণসংযোগের প্রাপ্তি।
এখনও পর্যন্ত ধনেখালিতে কমবেশি ৫ হাজার সদস্য সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। সংগ্রহে নেমেছেন ২৫/২৬ জন। এদের মধ্যে কেউ ২/৩ দিন, কেউবা ৮/১০ দিন, কেউ কেউ আরও বেশি ১৫/১৬ দিন। নামা হয়েছে ৫টি পয়েন্ট থেকে। ৩ মাস অতিবাহিত ইতিমধ্যে। ঋণমুক্তি, ১০০ দিনের কাজ, বর্গা উচ্ছেদ, আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের নিরবচ্ছিন্ন স্থানীয় গণআন্দোলনগুলি সংগঠিত করে; পার্টি ব্রাঞ্চ থেকে লোকাল কমিটি ব্যবস্থা, এরিয়া কমিটি ব্যবস্থার বৈঠক, বিভিন্ন গণসংগঠনের কমিটির বৈঠকগুলি নিয়মিত করার সাথে সাথে এই তিনমাসে ২০/২১ দিন সংগঠিত করা হয়েছে ‘পাড়ায় চলো’ কর্মসূচি। গণসংযোগের মূল লক্ষ্য গ্রামীণ মেহনতি, তপশিলি জাতি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষেরা। এঁদের মধ্যে কাজ কেন্দ্রীভূত করেই ধনেখালিতে সংগঠকরা রাজনৈতিকভাবে উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। সংশ্লিষ্ট গণসংগঠনের নেতৃত্ব ছাড়াও পার্টি ব্রাঞ্চ ব্যবস্থাও আন্তরিকভাবেই এগিয়ে যেতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই পর্যায়ে নেতৃত্বে আছেন শৈলেন মাজি, সত্যজিৎ মালিক, শ্যামাপদ শীটরা। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন রূপা শীট, অমিয় দাস, শ্রাবনী মালিক, সোমা রায়, সজল দে, জয়দেব বাগ, সম্রাট মাহেলি প্রমুখ।
জেলায় এই কাজে আন্তরিক রাজনৈতিক তাগিদ অনুভব হয় বর্ধমান জেলা লাগোয়া বলাগড় ব্লকের কর্মীদের মধ্যেও। ইতিমধ্যে সেখানে অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন কমবেশি ২৫/২৬ জন। এঁদের অধিকাংশ নবাগত। গুপ্তিপাড়া, কামারপাড়া, মহীপালপুর, বাকুলিয়া, এক্তারপুরের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে চলছে এই অভিযান। এখানে মহিলা সংগঠকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অধিকাংশই আদিবাসী সমাজভুক্ত আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাঁদের সাথে আমাদের সংযোগ স্থাপন হয়েছিল। কেউ বা ঋণমুক্তি আন্দোলনের ফসল। গণসংযোগ অভিযান এখানে মেহনতি জনগণের মধ্যে পার্টিকে যেমন পরিচিতই করছে, তেমনি পার্টি ব্যবস্থার বিকাশেও এই অভিযান উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে। কৃষিমজুর সমিতির জেলা সংগঠক সেখ আনারুলের নেতৃত্বে পরিচালিত এই নিবিড় অভিযানের অন্যতম সহযোদ্ধা কমরেড হেনা সুলতানা, শোভা ব্যানার্জীরা। দিগড়ে গ্রামে ৪ দিন অভিযান চলে। ৬০ পরিবারের ২৫০ জন সদস্যভুক্ত হন। অভিযানে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ ছিল ১৮ জনের। এই প্রক্রিয়াতেই মুখ্যত গরিব কৃষকদের গ্রাম কুলগাছিতে বাড়ি বাড়ি সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়। এক্তারপুর ডুমুরপাড়ের ৩২ মেহনতি পরিবারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সংগঠন। এভাবেই মালঞ্চ কিংবা বৈরি বা ইলামপুর কিংবা সায়রা বা বাতনা — মেহনতি পরিবারের দুয়ারে কড়া নেড়েছে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির সদস্যভুক্তি এখনও পর্যন্ত তিন হাজার। কৃষক সমিতির জন্য এক হাজার। ভালো একটি অংশকে বোঝানো সম্ভব হয়েছে যে আজকের পরিস্থিতিতে কৃষিমজুর, মেহনতিদের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষায় কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির মতো শ্রেণী সংগঠনের প্রয়োজন কতটা গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াতেই সামনে এসেছেন বৈদ্যনাথ হেমব্রম, পঙ্কজ বিশ্বাস, বালক হাঁসদা, পঙ্কজ টুডুর মতো মেহনতি পরিবার থেকে উঠে আসা সংগঠকরা। এই মাসের শেষে, আগামী ২৮ আগস্ট এখানে কামারপাড়ায় আয়ারলা জেলা সম্মেলন হতে যাচ্ছে। গত ৮ আগস্ট বলাগড় ব্লকদপ্তর ও ভূমিদপ্তরে আয়ারলা সংগঠিত করল বিক্ষোভ-ডেপুটেশন কর্মসূচি। গণসংযোগ অভিযানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা মেহনতিদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নগুলি নিয়ে; ১০০ দিনের কাজ, বকেয়া মজুরি, আবাস যোজনা কিংবা বাস্তু পাট্টা দাবি করে। বর্গা অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
পোলবা-দাদপুর ব্লকে এই অভিযান একটু দেরিতে শুরু হলেও এখানকার দায়িত্বশীল নেতৃত্ব এখন গণসংযোগকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করছেন। আয়ারলা রাজ্য কমিটি সদস্য গোপাল রায় এবং পাগান মুর্মুর উদ্যোগে এগিয়ে চলেছে অভিযান। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন শুভাশিস চ্যাটার্জী, তপন বটব্যাল, সাধন মাল, অজিত শেঠ, রবীন রায় সহ সংগঠক ও কর্মীরা। পার্টির জেলা কমিটি সদস্য ভিয়েত ব্যানার্জী আমনান অঞ্চলের বরুনানপাড়া এলাকায় গণসংযোগ অভিযানে একাধিক বার অংশগ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে এখানে ২ হাজারের বেশি সদস্য সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় গোস্বামী মালিপাড়া অঞ্চলের ৩/৪টি বুথে এবং বরুনানপাড়া এলাকার ৩টি বুথে আমাদের সংগঠন বিকল্প এক রাজনৈতিক কেন্দ্র রূপে জনমনে উপস্থাপিত হওয়ার প্রচেষ্টা জারি রেখেছে।
এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে কর্মহীনতা ও মূল্যবৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক সময়ে মমতা সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডারের রাজনীতি ক্রমশ বড় আকারেই গতিশীলতা হারাচ্ছে। বিশেষত ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। ঋণগ্রস্ততায় ত্রাহিত্রাহি রব তুলছেন মেহনতিরা।
জমির প্রশ্ন, বর্গা অধিকার রক্ষা, লিজচাষে অধিকার রক্ষা, আবাস যোজনা, ভিটের কাগজ, জমির কাগজ,স্বা স্থ্য, শিক্ষা — এসবই আজ মেহনতিদের জীবন-জীবিকার জ্বলন্ত প্রশ্ন। বাড়ছে ক্ষমতাবানদের জুলুমবাজি।
এমনই একটা সময় গ্রামের মধ্যে মেহনতিদের বিকল্প রাজনীতি তুলে ধরার সময়। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্রামে গ্রামে নিয়মিতভাবে ঝাণ্ডা কাঁধে আমাদের সংগঠকদের নিয়মিত চলাফেরা একদিকে জনমনে চেপে বসা ভয়ের বাতাবরণ কাটাতে যেমন সক্ষম হচ্ছে, তেমনি এক বিকল্প রাজনৈতিক কেন্দ্র রূপে আমাদের সংগঠন অত্যাচারিত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সহায়ক হচ্ছে।
শ্রেণীর রাজনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের মুখোমুখি। নিচতলায় আমাদের রাজনৈতিক সচলতা বিজেপির জমি দখলের সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
গণতন্ত্রের লড়াই এক সুপরিকল্পিত, লাগাতার লড়াই।
জনগণের জীবন-জীবিকার লড়াই এক কষ্টসাধ্য, প্রতিদিনকার লড়াই।
গণসংযোগ অভিযান সেই কাজেই আমাদের নিয়োজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- সজল অধিকারী
চাই আরও ঐক্যবদ্ধতা
২৮ জুলাই কলকাতার মিছিলে যোগ দিতে ট্রেনে উঠেছি বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। ট্রেনের মধ্যেই ‘তেভাগা নকশালবাড়ি চারু মজুমদার’ পুস্তিকাটির সঙ্গে দেশব্রতী পত্রিকাও বিক্রি করলাম খান কতক। কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে দাম মিটিয়ে দিলেন। একজন কমরেড পয়সা দিতে গড়িমসি করছিলেন। মিছিল শুরু হওয়ার আগে শিয়ালদহ স্টেশনে পয়সা চাইতেই কমরেডটি পকেট থেকে একগোছা নোট বার করে আমার হাতে দিলেন। তাঁকে বলা হয়, “বই আর পত্রিকার দাম মিলে ৩৫ টাকা। আপনি এতো টাকা দিচ্ছেন কেন?” কমরেড বললেন, “পত্রিকার দাম পরে দিচ্ছি। আগে এআইকেএমের সদস্য হওয়ার টাকাটা নিন।” আদিবাসী ঘর থেকে উঠে আসা এই কমরেডটি সবে কয়েক মাস আমাদের পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের গ্রামে সঙ্গে আমাদের এক পুরনো পার্টি সদস্য — মাত্র দুজনে মিলে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। পার্টি ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার এ এক অমূল্য নজির। পান্ডুয়া ব্লকে গণসংযোগ অভিযান যদিও রয়েছে খুবই প্রাথমিক স্তরে তবুও গতানুগতিকতার বৃত্তকে ভেঙ্গে এমন তরতাজা কর্মীদের উঠে আসা, নিঃসন্দেহে, অন্যদেরও প্রেরণা জোগায়। পান্ডুয়ায় ‘জনসংযোগ কর্মসূচি’ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ৩১ মে, করন্দা দিবসে। একটি গ্রামের আদিবাসী পল্লীতে সকাল থেকে ‘আয়ারলা’র সদস্য সংগ্রহ হয়। বিকেলে হয় পথসভা। অন্য দুই পঞ্চায়েতে, যেখানে আমাদের ভালো গণসমর্থন আছে, এমন দু’টি গ্রামেও প্রায় একই সময়ে এই কাজ চলতে থাকে। বাস্তবে একটি গ্রামে কেবল একদিনই কর্মীরা পথে নেমেছিলেন। পরে দীর্ঘসময় তাঁরা নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। তবুও ওই যে ৩০-৩২টি খেতমজুর পরিবারের কাছে তাঁরা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন, তারই অভিঘাতে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ওই গ্রামে খেতমজুর ধর্মঘট হয় এবং মজুরি বৃদ্ধি ঘটে। অন্য গ্রামটিতে একটানা কয়েকদিন কর্মীরা গ্রামীণ মেহনতিদের পাড়াগুলিতে পৌঁছে প্রথম পর্যায়ে ৫০০ সদস্য সংগ্রহ করেছেন। চাষের মরশুমের ব্যস্ততায় এই কাজ সাময়িক ব্যাহত হলেও, কর্মীরা এখন গ্রামটির বাকি অংশেও পৌঁছানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।
জেলার বলাগড় ও ধনেখালি ব্লকে গণসংযোগ অভিযানের চমৎকার সাফল্যের খবরে উজ্জীবিত হয়ে পান্ডুয়ার অপর তিনটি গ্রামে জুলাই মাসের মাঝামাঝি এই কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়া হয়। এরমধ্যে পাশাপাশি দুটি গ্রামে (যদিও দুটিই পৃথক পৃথক পঞ্চায়েতের অধীন) প্রতিটি গরিব পরিবারের কাছে পৌঁছানোর লাগাতার প্রচেষ্টা চলছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা প্রয়োজন। একদিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক অন্যদিকে কৃষিমজুর। এদের সমস্যা ও চাহিদাগুলির মধ্যে যেমন সাদৃশ্য আছে তেমন পার্থক্যও আছে যথেষ্ট। সে কারণেই একদিকে এআইকেএম অন্যদিকে আয়ারলা — দু’টি সংগঠনেরই সদস্য সংগ্রহ চলছে। কর্মীর সংখ্যাবেশি নয়। ফলে প্রচারের সময়, পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। জুলাই মাসে আয়ারলার কাজেবেশি জোর দিয়েও, মাঝে মধ্যে এআইকেএমের সদস্যও করা হয়েছে। দু’টি কাজকে মেলানো সহজ নয়। তবুও স্থির হয়েছে, আগস্ট মাস জুড়ে এআইকেএমের কাজকেই অগ্রাধিকারে রাখা হবে। এই বোঝাপড়ায় ফসল উঠছে মন্দ নয়। দুটি গ্রামে আয়ারলার সদস্য হয়েছেন ৯৭৫ জন এবং কৃষক সংগঠনের সদস্য হয়েছেন ৪০০’র কিছুবেশি। অপর গ্রামটিতে খেতমজুর সদস্য হয়েছেন ১৭০ জন।
মানুষের উৎসাহ : শাসক দলগুলির বিরুদ্ধে গণআক্রোশ
গঞ্জ লাগোয়া একটি গ্রামে একটি গরিব বস্তি। এই বস্তিবাসীরা বছর পঞ্চাশ আগে এক ধনী ব্যক্তির বেশ কয়েক বিঘে পতিত জমিতে বাস করতেন। পরে ওই ব্যক্তি তাদের লম্বা এক ফালি জায়গায় সার সার ইটের ‘খুপরি’ ঘর তৈরি করে দিয়ে বাকি জায়গার দখল নেয়। সেই সব ইটের ঘর(?) এখন বসবাসের অযোগ্য। তাদের আবাসন সমস্যা নিয়ে বিডিও’র কাছে দরবার করা হবে। এই খবর ছড়িয়ে যাচ্ছে লোকের মুখে মুখে। অন্য পাড়ার মানুষ এসেও আমাদের কর্মীদের ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে। তুলে ধরছেন তাঁদের সমস্যার কথা। গ্রামে আমাদেরও ঘর হবে তো? আমার বিধবা ভাতাটা কীভাবে পাব বল তো? কর্মীরা উত্তর দেওয়ার আগেই, পাড়ার মেয়েরা উচ্ছল হয়ে বলে দিচ্ছেন, “সবাই মিলে বিডিও অফিস চলো”। আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের এলাকা — এমন একটি গ্রামের একটি পাড়ায় অনেকদিন যাওয়া হয়নি। এবার সেখানে যেতেই, প্রায় গোটা পাড়ার গরিব মানুষ জড়ো হয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই গ্রামে টুকটাক বিজেপিও আছে। কিন্তু মানুষের চোখ মুখের ভাষা স্পষ্ট : পারবে, কেবল তোমরাই সব জঞ্জাল মুক্ত করতে।
প্রচেষ্টা চলছে। পান্ডুয়া ব্লকে আপাতত ১,৭০০ খেতমজুর সদস্য ও ৫০০ কৃষক সংগঠনের সদস্য হয়েছেন। শহরের কর্মীরাও গ্রামের কর্মীদের পাশে আসতে শুরু করেছেন। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করা, স্বৈরাচার ও দুর্নীতিকে রুখে দেওয়ার দিশাকে কর্মীবাহিনীর সামনে ঠিক ঠিক বোঝানো গেলে গণসংযোগ অভিযানে নিশ্চিত গতি আসবে আগের থেকে বড় মাত্রায়।
- মুকুল কুমার