কৃষক দাবিসনদ
Farmers Claim Certificate_0

সারা ভারত কিষাণ মহাসভার নবম রাজ্য সম্মেলন
৩০-৩১ আগস্ট, ২০২২;
আনন্দ হাইত নগর, বিমান বিশ্বাস সভাগৃহ, সুবিমল সেনগুপ্ত মঞ্চ, রবীন্দ্রভবন কৃষ্ণনগর

১) কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করো

সার, বীজ, কীটনাশক প্রভৃতি কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্য দামে সেগুলি গরিব মধ্য চাষিদের সরবরাহ করতে হবে। সারের কালোবাজারী কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বস্তার উপর ছাপা দাম থেকে বেশি দামে বিক্রি কঠোরভাবে বন্ধ করা ও একে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে।

২) ফসলের লাভজনক দর চাই

সমস্ত রকম ফসলের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য গ্যারান্টি আইন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার চালু করতে হবে। উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দামে সরকারকে ফসল কিনতে হবে। ২৪০০ টাকা কুইঃ দরে ধান ও ৮ হাজার টাকা কুইঃ দরে পাট কিনতে হবে। এ রাজ্যে আলু পাট প্রভৃতি ফসল সঠিক সরকারি দরে গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারকে প্রকৃত চাষিদের থেকে কিনতে হবে। স্বল্প খরচে ফসল সংরক্ষণের জন্য ব্লকে/পঞ্চায়েতে বহুমুখী হিমঘর তৈরি করতে হবে। সেগুলির নিয়ন্ত্রণে কৃষকের তদারকি চালু করতে হবে।

৩) চুক্তি চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করো

সরকারি উদ্যোগে গরিব চুক্তিচাষিদের নথিভূক্ত করে তাদের সমস্ত সরকারি সুযোগ দিতে হবে। জমির কাগজ নেই এমন চুক্তিচাষিদের থেকে সরকারকে ফসল কিনতে হবে, এদের সমবায় সমিতির সদস্য করতে হবে।

৪) ভূমি সংস্কারের উল্টোযাত্রা রোধ করো, কৃষকের জমির অধিকার চাই

গরিব কৃষকদের সমস্ত দখলীকৃত খাস জমির পাট্টা/পরচা দিতে হবে। খাস বেনামী জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিলিবণ্টন করতে হবে। খাস জমির তালিকা কৃষক সংগঠনগুলিকে দিতে হবে। বর্গা উচ্ছেদ কঠোরভাবে বন্ধ করো। নতুন বর্গারেকর্ড করার কাজ চালু রাখতে হবে। বাসস্থান সংক্রান্ত হোমেস্টেড এ্যাক্ট কার্যকরী রাখতে হবে। ব্লক ভূমিদপ্তরে দুর্নীতি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। জমির রেকর্ড, জরিপ ও নানাবিধ বিবাদ মীমাংসার কাজে দীর্ঘসূত্রিতা, দালালরাজ বন্ধ করতে হবে।

৫) সমবায়গুলি বাঁচাও

সমবায়গুলিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করতে হবে। সমবায়ের মাধ্যমে গরিব মধ্যচাষিদের কমদামে সার বীজ কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে। তাঁদের বিনা সূদে সহজ শর্তে কৃষিঋণ সরবরাহ করতে হবে। সমবায়ের মাধ্যমে ট্রাক্টর সহ কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ গরিব মধ্য চাষিদের দিতে হবে। সমবায় ব্যাংকগুলিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের দায়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, সমবায় ব্যাংকগুলিকে কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে।

৬) ভূপৃষ্ঠ সেচের ব্যবস্থা গড়ে তোলো, সমস্ত চাষের খেতে জল চাই

নদী, খাল, বিল প্রভৃতি জলাশয়গুলিকে সংস্কার করে ভূপৃষ্ঠ সেচের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমস্ত বন্ধ আরএলআই-গুলিকে চালু করতে হবে ও নতুন করে স্থাপন করতে হবে। চাষের মরসুমে ক্যানেলে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, জলাধারগুলিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। জলাশয়গুলি ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। শিল্পের নামে বা উন্নয়নের নামে কৃষি জমির চরিত্র বদল করা যাবে না। “জল ধরো, জল ভরো” প্রকল্পের ফলে চাষের কি উন্নতি হয়েছে তার বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করতে হবে।

৭) কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে কৃষিকাজকে যুক্ত করো

১০০ দিনের কাজকে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে। ফসল রোপন ও কাটার কাজকে ১০০ দিনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১০০ দিনের কাজে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। গ্রামের জনগণের সাথে আলোচনা করে প্রকল্প প্রস্তুত করতে হবে, “এ্যানুয়াল এ্যাকশন প্ল্যান” জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে,সেগুলি ছাপিয়ে বিলি করতে হবে। প্রকল্পের অভাব – এই অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখা চলবে না। কেন্দ্র রাজ্য বুঝি না অবিলম্বে বকেয়া মজুরি দিতে হবে।

৮) সার ও বীজের আমদানি নির্ভরতা বন্ধ করো

এ রাজ্যের সরকারি বীজখামারগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া চলবে না। অবিলম্বে সরকারী উদ্যোগে দেশীয় বৈচিত্রমূলক বীজ তৈরি, সংরক্ষণ ও প্রয়োজন অনুসারে সরবরাহ করতে হবে। নিম্ন মানের সার আমদানি বন্ধ করো,ভর্তুকি দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষকদের সার দিতে হবে। জৈব সার তৈরি ও ব্যবহারে সরকারকে সহায়তা করতে হবে।

৯) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মৌজা ভিত্তিক নয়, চাষিদের জোত ভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, মালদহ-মুর্শিদাবাদে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সুন্দরবন বাঁচাও প্রকল্প অবিলম্বে কার্যকরী করতে হবে।

১০) কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ ডিজেল সরবরাহ করো

এক টাকা ইউনিট দরে কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করো, ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ করতে হবে।

১১) কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলো

জেলায় জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে আখ ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে শিল্প গড়ে তুলতে হবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে।

১২) আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা করো

আদিবাসীদের বনের জমির পাট্টা পরচা দিতে হবে, কোনোরকমভাবেই উচ্ছেদ করা চলবে না।

পাট্টা পেলেও পরচা হয়নি বা পরচা পেলেও জমির চরিত্রে জঙ্গল লেখা থাকার দরুণ সরকারী সাহায্য বা সরকারি দরে ধান বিক্রি করতে পারছে না, তাই অবিলম্বে পরচা দিতে হবে। বনাধিকার আইন বদলে দিয়ে আদিবাসীদের সম্মতি ছাড়া বনের জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা চলবে না। দেউচা থেকে অয্যোধ্যা বা তিলাবনি – উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ চলবে না। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের কাজের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

১৩) চা শ্রমিকদের বাঁচাও – চাই উত্তর বঙ্গের সার্বিক উন্নয়ন

চা শ্রমিকদের বাস্তু জমির পাট্টা দিতে হবে। উত্তরবঙ্গের চাষের জমির রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে নদীগুলোর সংস্কার করতে হবে। তিস্তা সেচ প্রকল্পকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রূপায়িত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সেচ প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে।

১৪) বাগিচা চাষিরা সংকটে, তাঁদের পাশে দাঁড়াও

ফল ফুল সহ নানাবিধ বাগিচা চাষে সরকারকে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে। বিশেষত এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র মধ্য চাষিদের পুঁজি ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। রেশম চাষ, তাঁত শিল্পের পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারকে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। মৎসচাষিদের কেবল কার্ড দিলেই চলবে না, এদের জন্য ব্যাংক ও সমবায়ের ঋণ সহায়তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

-- এ আই কে এম

খণ্ড-29
সংখ্যা-33