সমস্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে লিঙ্গ সাম্যের লড়াইকে জোরদার কর
৭ই আগস্ট নারী স্বাধীনতা হরণকারী আরএসএস- বিজেপিকে পরাস্ত করুন-তৃণমূলের রাজত্বে দুর্নীতি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোট বাঁধুন- এই স্লোগানকে সামনে রেখে খড়দহের রবীন্দ্রনাথ কমিউনিটি হলে ১০০ জন মহিলা প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ৭ম জেলা সম্মেলন সংগঠিত হল।
সম্মেলন মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছিলো নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত রোকেয়ার নামে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পর্যবেক্ষক কাজল দত্ত, আইপোয়ার রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত, এবং শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী কমরেড মীনা পাল।
শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও শহীদ-স্মরণের পর মেহুলি চক্রবর্তীর ‘এই আকাশে আমার মুক্তি’ গানের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে পরিচালনা করেন বিদায়ী জেলা সভাপতি জয়শ্রী দাস। শুরুতেই বিদায়ী রাজ্য সম্পাদিকা খসড়া প্রতিবেদন পড়ে শোনান। তিনি বলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশজুড়ে যেভাবে সাধারণ মানুষের উপর হামলা নামিয়ে আনছে, একদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরির বেহাল অবস্থা অন্যদিকে চারিদিকে শুধু ঘৃণা বিদ্বেষের হাওয়া, এই রাজ্যেও দুর্নীতি-খুন-সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-তোলাবাজির পাশাপাশি বেড়েছে নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা। এর বিরুদ্ধে আইপোয়ার জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূচি, এবং মেয়েদের সমানাধিকার, স্বাধীনতার দাবিতে সংগঠনকে মজবুত করে তোলাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য।
পর্যবেক্ষক কাজল দত্ত তার বক্তব্যে রাখেন কিভাবে ১০০ দিনের কাজ থেকে শিক্ষা-চাকরি সমস্ত ক্ষেত্রে মেয়েদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
মীনা পাল বলেন, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের ধর্মের নানা বেড়ি পরিয়ে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি করে রাখতে চায়, তার বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে আসছে মেয়েরা।
এরপর প্রতিনিধিরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মিড ডে মিলের নেত্রী সুলেখা মন্ডল বলেন পরিবারের ভিতরে এবং কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যেতে হয়।
শিখা গুহ রায়, বর্ষীয়ান কমরেড মৈত্রেয়ী বিশ্বাস, পুস্প দাস, রেজিয়া বিবি সহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের বক্তব্য থেকে ১০০ দিনের কাজের মজুরি না পাওয়া, মিড ডে মিলের কর্মীদের প্রতি বঞ্চনা,অসম্মান, এবং পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে মেয়েদের দৈনন্দিন লড়াইয়ের কথা উঠে আসে।
সম্মেলনে আইপোয়ার রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন কেন্দ্র ওব্রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। সেনাবাহিনী থেকে ব্যাংক সর্বত্র চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেবার কথা বলছে। তার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে। অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে যুবক সম্প্রদায় পথে নেমেছে। ধর্মতলায় ৫০০ দিনের বেশি চলছে এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের ধর্না। আমাদের মহিলা সংগঠন তাদের পাশে থেকে লড়াই করেছে। কেন্দ্রের ফ্যাসিবাদী সরকার মেয়েদের সব অধিকার কেড়ে নিতে চায়, এরা বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া আমাদের আশু কর্তব্য।
শেষ বক্তা মিতালি বিশ্বাস বলেন কোভিড কালে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন শ্রমজীবি নারী, যৌন কর্মী ও ট্রান্সজেন্ডার মেয়েরা. কিন্তু রোকেয়া থেকে প্রিতীলতা আমাদের শিক্ষা দেয় মেয়েরা অন্যায় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে। আজ পর্যন্ত যা আইন হয়েছে মেয়েরা লড়াই করেই পেয়েছে। শাহীনবাগ থেকে দেউচা পাচামি সর্বত্র মেয়েরা লড়াইয়ের সামনের সারিতে। আগামীদিনেও আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মেয়েদের অধিকারের উপর যে মৌলবাদী ও রাষ্ট্রীয় হামলা নেমে আসছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জোরদার করতে, এবং এই রাজ্যে তৃনমূলের শাসনে যে ব্যপক দুর্নীতি , ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ঘটছে তার বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে, নারী শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, সম্মানজনক মজুরির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার শপথ নেয় জেলা সম্মেলন কক্ষ।
জেলা সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতভাবে ৩১ জনের জেলা কাউন্সিল বডি ও ৭ জনের জেলা কমিটি তৈরি হয়। এবং সভানেত্রী পদে অর্চনা ঘটক, সম্পাদক পদে মিতালী বিশ্বাস ও কোষাধ্যক্ষ হিসাবে তিথি দত্ত নির্বাচিত হন।