এ গ্রামে রাস্তায় আলো নেই। জল আনতে মেয়েদের যেতে হয় নিজের গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে। এখানে নেই সার্বিক শিক্ষার মুক্তির পথ। এখানে মেয়েরা জীবনের একটি মাত্র ধরণই জানে, তা হল সর্বোপরি বিবাহ। খুশবু, প্রিয়া, সুমৈয়ারা হারিয়ে যায় অন্ধকারে।
কিন্তু তবু শহুরে ক্ষয়িষ্ণুতা ওদের পাট চাষের আবাদ জমিকে দখল করতে পারেনি এখনো। তাই হয়তো বনস্পতিই ওদের শিল্পের প্রতি উদার হতে শিখিয়েছে।
দেশ কি বা কেন সে অনেক পরের কথা, “আমি” বলে যে কিছু হয় তাই ওদের বোধ করতে দেওয়া হয়নি কখনো।
স্বাধীনতা দিবসে উত্তর ২৪ পরগণার আইপোয়ার উদ্যোগে এই গ্রামে নতুন কিছু ঘটলো। নিষিদ্ধতায় আটকে পড়া মেয়েরা প্রথমবার নাচ শিখল, গাইল গান মন খুলে। ছেলেরা আবার মেয়েদের সাথে নাচবে নাকি? এই মিথ ভেঙে কিশোর-কিশোরীরা রোকেয়া, আম্বেদকর, সাবিত্রী, ফাতিমার ছবি নিয়ে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ নাচলো। ১০ বছরের সুমাইয়া আর নেহা নেচে উঠলো অন্নদাশংকর রায়ের বুড়ো খোকাদের ভারত ভেঙে ভাগ করার গানে। পঞ্চকের দল সব হো হো করে বেরিয়ে এসে ভাঙল অচলায়তন। গ্রামের গৃহবধূ সাবিনা খাতুন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলল স্বাধীনতা সংগ্রামে রেজিয়া, রোকেয়া, অরুনা আসফ আলির লড়াইয়ের ইতিহাস।
আইপোয়ার পক্ষ থেকে তিথি দত্ত শোনালো সাবিত্রী বাই ফুলে আর ফাতিমা শেখের গল্প, বেখৌফ আজাদী গানের সাথে নাচ করলেন স্নেহ নন্দি। আবৃত্তি করেন শোভনা নাথ। বক্তব্য রাখেন জেলা সভাপতি অর্চনা ঘটক ও নাট্যকার প্রশান্ত গাঙ্গুলি। সিপিআইএমএল পার্টির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ দত্ত। নৃত্য পরিচালনায় স্নেহ নন্দি ও সমগ্র অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন জেলা সম্পাদিকা মিতালি বিশ্বাস।
ধর্ম যখন বলছে এসব হারাম, ওরাও তখন বলছে আমরা বন্ধ নই, আমরা গাইব, নাচব, বলব যা ইচ্ছে তাই করব, আমরা বাঁধনহীন। একপাল ঝড়ের মতন দাপটে ওরা সেদিন বাঁচল, সীমাহীন আনন্দে, এই কি স্বাধীনতা নয়?
বর্তমান কালের যখন হিংসা বিদ্বেষ ও বিভেদের রাজনীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি-আরেসএস সরকার, তখন কালসারায় এই গ্রামে গড়ে উঠছে যৌথতার সম্প্রীতি, একত্রিত হচ্ছে মানুষ।
- স্নেহ নন্দি