বিবৃতি
দিল্লির গার্গি কলেজ ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রীদের উপর বিজেপির কর্মীবাহিনী ওদিল্লি পুলিশের দলবদ্ধ যৌন নির্যাতন ও অত্যাচারকে ধিক্কার

ক্ষমতাসীন বিজেপি একদিকে “বেটি বাঁচাও” বলছে, অপরদিকে তার ব্যবস্থাপনাতেই তার নিজস্ব সমর্থক এবং পুলিশ বাহিনী ভারতের রাজধানী শহরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে বারবার নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করে চলেছে। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে দিতে সিএএ সমর্থনে আয়োজিত এক মিছিল থেকে দিল্লীর গার্গী কলেজ ক্যাম্পাসে আক্রমণ চালানো হয়। সেখানকার ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন চালান হয়। ছাত্রীরা কলেজের অধ্যক্ষ’র কাছে অভিযোগ জানালে তিনি বলেন যদি ছাত্রীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করে তবে তাদের বাড়িতেই থাকা উচিত ছিল। কলেজের কাছাকাছি থানাগুলি বিজেপির গুন্ডাদের এই  হিংসাত্মক হামলা রোখার জন্য কিছুই করেনি। চারদিন কেটে গেছে এখনো পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

একইভাবে দিল্লি পুলিশ আবারও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রছাত্রীদের সিএএ-বিরোধী শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার উপর নির্মম ও হিংসাত্মক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। পুলিশ কর্মীরা ছাত্রীদের গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে যৌন হেনস্থা করেছে এবং অজানা কোনো অবৈধ গ্যাস স্প্রে করেছে যার ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী চেতনা হারায় এবং পেটের ব্যথায় প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়ে।

দিল্লির পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন। কেন এই পুলিশ সিএএ সমর্থক বিজেপিপন্থী গুন্ডাদের মহিলা কলেজে প্রবেশ করতে এবং মহিলাদের শ্লীলতাহানি করতে ছাড় দেয়? কেন গত মাসে দিল্লি পুলিশ জেএনইউ-র ভিতরে এবিভিপির গুন্ডাদের হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছিল যেখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক আহত হয় এবং ছাত্রীদের পাশাপাশি একজন অধ্যাপিকা সহ মুসলিম, দলিত এবং রূপান্তরকামী মানুষের উপর নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়? কেন সেই একই দিল্লি পুলিশ এত নিস্ক্রিয় ভুমিকায় থাকে যখন জামিয়াতে এবিভিপি সংগঠিতভাবে যৌন নিপীড়ন এবং আক্রমণ চালায়?

gargi

 

বেশিদিনের কথা নয় যখন এই দিল্লী পুলিশই বাস পোড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে অবৈধভাবে ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছিল এবং লাইব্রেরির ভিতরে পড়াশোনা করা এক ছাত্রকে অন্ধ করে দিয়েছিল। কেন এই পুলিশ নীরব দর্শকের ভুমিকা নিয়েছিল যখন এক সন্ত্রাসবাদী সিএএ-র পক্ষে সাম্প্রদায়িক শ্লোগান দিতে দিতে জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল? কেন আজ এই একই দিল্লি পুলিশ জামিয়ার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর  অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে এবং জামিয়ার ছাত্রীদের যৌন আক্রমণ করে?

প্রশ্নের পাহাড় জমেছে। এবং উত্তরটাও অজানা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মদতেই ছাত্রদের উপর বারংবার সঙ্ঘী বাহিনী ও দিল্লি পুলিশের হিংসাত্মক আক্রমণ সংঘটিত হয়ে চলেছে।

সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, দিলীপ ঘোষ এবং জ্ঞানদেব আহুজার মতো বিজেপি নেতারা বারবার ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা মুলক ভাষা ব্যবহার করেছেন, স্লাট শেমিং করেছেন (“ফ্রি সেক্স”, “৩০০০ কনডম” “বেশ্যা” ইত্যাদি)। নিজেদের কর্মীদেরকে নারী তথা ছাত্রীদের উপর যৌন আক্রমণে প্ররোচিত করার বার্তা হিসেবেই তো কাজ করে এসব ভাষা ও বক্তব্য। গার্গি কলেজের ছাত্রীদের উপর বিজেপির গুন্ডাদের এই নির্লজ্জ কুৎসিত আচরণ বিজেপি নেতাদের দ্বারা সমগ্র ভারতবর্ষের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে সৃষ্ট ঘৃণার মনোভাবেরই প্রত্যক্ষ ফলাফল।

আজ ভারতে ফ্যাসিবাদের প্রতিরোধের লড়াইয়ে নারী ও কুয়্যার সমাজ সামনের সারিতে রয়েছেন। এটাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে এদের উপরেই ফ্যাসিস্টদের বেশি বেশি আক্রমণ নেমে আসবে, এবং এরাই রুখে দাঁড়াবে, লড়াই করবে এবং এরাই জিতবে!

- সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি

খণ্ড-27
সংখ্যা-3