আয়ারলা জাতীয় কমিটি তিন মাসব্যাপী গণসংযোগ অভিযান চালিয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে গ্রামীণ দরিদ্রদের রাজ্য জমায়েতের ডাক দিয়েছে। ৯ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির প্রথমপর্ব শেষে আগামী ১৮ নভেম্বর (১লা অগ্রহায়ণ) কলকাতায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়েছে।
এই সময়পর্বে হুগলি জেলার গ্রামাঞ্চলে লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও উল্লেখযোগ্য গণসংযোগ ও গণ উদ্যোগ চলে। নতুন বহু এলাকায় বৈঠক সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে গণ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন ব্লক দপ্তরে শয়ে শয়ে মানুষের সমাবেশে বিডিও ঘেরাও কর্মসূচী সফল হয়। এরও পরবর্তীতে তুমুল বর্ষাকে অস্বীকার করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর চুঁচুড়া শহরে দীর্ঘ, প্রাণবন্ত, সুসজ্জিত এক মিছিল শেষে জেলাশাসকের দপ্তরে ডেপুটেশন সংগঠিত হয় যা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আগামী ১৮ নভেম্বরের কলকাতা বিক্ষোভ সমাবেশকে সফল করে তুলতে উৎসবের মরশুমের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন জেলা সংগঠকরা। বলাগড় ব্লকের বড়াল, মহীপালপুরের কামারপাড়া, বাকুলিয়া-ধোবাপাড়ার ছোট নেকো, আলিসাগড়-ময়রাপুকুর ইত্যাদি গ্রামে বৈঠকের পর গত ১০ অক্টোবর কামারপাড়া স্কুলে সংগঠিত হয় ব্লক কর্মী বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন ৮/১০টি গ্রামের শতাধিক কর্মী। বৈঠককে সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন আয়ারলা জেলা নেতা সেখ আনারুল, মহীপালপুরের আয়ারলা নেতা সুভাষ বাউল দাস, আদিবাসী মঞ্চের জেলা নেতা কমলাকান্ত কিস্কু, শুকুমনি মান্ডি, ব্লকের আদিবাসী মঞ্চের নেতা বালক হাঁসদা, পঙ্কজ টুডু প্রমুখ। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত থেকে আগামী কর্তব্যকর্ম তুলে ধরেন জেলা নেতৃত্বের পক্ষে গোপাল রায়, বিশ্বনাথ সরেন। পরবর্তীতে কামারপাড়াতে পুনরায় বৈঠক সংগঠিত হয়।
৮ অক্টোবর পোলবা-দাদপুরের গোস্বামী- মালিপাড়াতে বৈঠক করেন ব্লক সংগঠনের পক্ষে গোপাল রায়, সজল দে। ২২ অক্টোবর এঁদের নেতৃত্বে বৈঠক হয় হারীটে। ইতিমধ্যে ১৪ অক্টোবর ধনেখালির মল্লিকপুরে সংগঠিত হয় জেলা কর্মিসভা। বলাগড়া, পান্ডুয়া, মগরা, পোলবা-দাদপুর, ধনেখালি ছাড়াও তারকেশ্বর, হরিপাল ব্লক সহ জেলার শতাধিক গ্রাম থেকে নেতৃত্ব উপস্থিত হন। কর্মিসভা শেষে কলকাতা সমাবেশকে সফল করার ডাক দিয়ে মল্লিকপুর থেকে ফিডার রোড পর্যন্ত মিছিল সংগঠিত হয়। ১৮ নভেম্বরের কলকাতা সমাবেশকে সফল করতে এই বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে পান্ডুয়ার ইলছোবা-দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দেপাড়াতে একটি এলাকা বৈঠকে গঠিত হয় এলাকা কমিটি। বৈঠক সংগঠিত করতে জেলা নেতা মুকুল কুমার ছাড়াও বিশেষ ভূমিকা রাখেন আদিবাসী মঞ্চের জেলা কমিটির সদস্য শিবলাল মান্ডি, আরতি হাঁসদা প্রমুখ। ২২ অক্টোবর রবীন বাস্কের নেতৃত্বে ধনেখালির দশঘড়াতে সংগঠিত হয় গ্রাম বৈঠক। ২৭ অক্টোবর পান্ডুয়ার তিন্না ইলামপুরে ময়না কিস্কু, নিরঞ্জন বাগ প্রমুখদের নেতৃত্বে বৈঠক হয়।
২২ অক্টোবর হরিপালের দ্বারহাটা ও তারকেশ্বরের মোজপুরে সজল অধিকারী, সজল দের উপস্থিতিতে দুটি বিশেষ বৈঠক হয়। এই ব্লক দুটি আমাদের কাজের সম্পূর্ণ নতুন এলাকা। এলাকার কমরেডদের উৎসাহ, উপস্থিতি ছিল উৎসাহব্যঞ্জক।
এই সমস্ত বৈঠকগুলি অধিকাংশই নতুন নতুন এলাকায় সংগঠিত করা গেছে। এই প্রক্রিয়ায় সামনে এসেছেন অসংখ্য গ্রাম স্তরের গণসংগঠন-কর্মী। বৈঠকগুলিতে এই পর্বে মূল আলোচনার বিষয় হয়েছে লোকপ্রসার প্রকল্প। তার পাশাপাশি সমবেত মানুষ সমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ১০০ দিনের কর্মসূচী ও এনআরসি নিয়েও। বহু জায়গায় ১০০ দিনের কাজ চেয়ে ৪(ক) ফর্মে স্বাক্ষর করেন গ্রামবাসীরা। কয়েকটি জায়গায় পঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে ফর্ম জমা দেওয়া হয়। ইলছোবা দাসপুর পঞ্চায়েত প্রধান পূজার পর কাজ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। বৈঁচি হালদার দিঘিতে আমাদের ডেপুটেশন পরবর্তীতে একটি নলকূপ রিসিঙ্ক হয়েছে। ধনেখালির ও পোলবা-দাদপুরে ১০০ দিনের কাজ চেয়ে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচী স্থির হয়েছে। এই সময়ে মল্লিকপুর ও বৈঁচিতে এনআরসি বিরোধী দুটি পথসভা সংগঠিত করা হয়েছে।