হোস্টেলের ফী ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে যে নতুন হোস্টেল ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে এবং যে পিতৃতান্ত্রিক পোশাক বিধি চালু করা হয়েছে এবং যে ভাবে কারফিউ জারি করা হয়েছে, জেএনইউ-র হাজার-হাজার ছাত্র-ছাত্রী তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ ম্যানুয়াল বাতিল করা এবং প্রতিবাদরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পরিবর্তে উপাচার্য ক্যাম্পাসে সিআরপিএফ বাহিনীকে ডেকে আনেন। জেএনইউ-র সমাবর্তন হচ্ছিল ক্যাম্পাসের বাইরে এআইসিটিই কনভেনশন হলে এবং সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। জেএনইউ-র সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে দাবি জানায়। মন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু আশ্বাস পাওয়ার পর পুলিশ তাদের উপর জল কামান চালায় এবং লাঠি চার্জ করে, যাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরাই গত দু-বছর ধরে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তার থেকে জানা যাচ্ছে, জেএনইউ-তে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ৪০ শতাংশই এমন পরিবার থেকে আসে যাদের আয় মাসে ১২০০০ টাকার কম। জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীদের ৬০ শতাংশই হল নিপীড়িত, পশ্চাদপদ এবং একেবারে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের। হোস্টেল ফী মাসে ৩০০০, অর্থাৎ বছরে ৩৬০০০ টাকা বাড়ানো হলে এই ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
জেএনইউ ছাত্র-ছাত্রীদের এই ৪০ শতাংশ পরিবারের বার্ষিক আয় ১৪৪০০০ টাকার কম। ফী বৃদ্ধি খুব কম করে হলেও বছরে হবে ৩০০০০, যার অর্থ হল এই পরিবারগুলোর বার্ষিক আয় ২১ শতাংশ কমে যাবে। একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে এখন ফী ও মেস খরচ বাবদ বছরে কম করে ৩২৬২০ টাকা দিতে হয়। একজন সন্তানের পড়াশোনার জন্য একটি পরিবারকে তার বার্ষিক আয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি ব্যায় করতে হচ্ছে, এটা হওয়া কি উচিত?
এই জন্যই জেএনইউ লড়াই করছে। দরিদ্রতম ভারতবাসীদের জন্য সরকারি অর্থে শিক্ষা — এই ধারণার রূপায়নের লক্ষ্যেই জেএনইউ লড়ছে।
জেএনইউ-তে কি এমন “অর্থ সংকট” চলছে যার জন্য ফী বাড়াতে হবে? জেএনইউ কি জনগণের টাকা অপচয় করছে?
এই তথ্যগুলো বিবেচনা করুন:
কেন্দ্রীয় বাজেটে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর জন্য পরপর কয়েক বছর কর ছাড়ের পরিমাণ ছিল এই রকম :
কেন একদিকে অতি ধনী কর্পোরেটদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, আর অন্যদিকে ভারতের দরিদ্র ও বঞ্চিত যুবক-যুবতীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে একটু সুবিধা পেলে তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে?
আসল সত্যিটা হল, গুটিকয়েক কর্পোরেট পরিবারই ভারতের সমস্ত সম্পদ হস্তগত করছে: অক্সফ্যাম-এর একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারতের সবচেয়ে ধনীরা যদি তাদের সম্পদের ওপর মাত্র ০.৫ শতাংশ কর বেশি দিত তবে সরকার স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারত। আর কর্পোরেটদের কর ছাড় দেওয়া বন্ধ করলে সরকার অনায়াসেই ২৫০টিরও বেশি জেএনইউ-কে অর্থ যোগাতে পারত।
জেএনইউ-র ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বজনীন, ভালো গুণমানের, সাধ্যায়ত্ত শিক্ষার দাবি জানিয়েছিল। আর সে কারণে মোদী-শাহ সরকারের নির্দেশে দিল্লী পুলিশ ১১ নভেম্বর তাদের লাথি-ঘুষি মারে, তাদের ওপর লাঠি ও জলকামান চালায়। জে এন ইউ-র ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য হল দরিদ্র, প্রান্তিক এবং সাধারণ পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকারের বাস্তবায়ন। এআইএসএ এই আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এবং জেএনইউ-র প্রতি সংহতিতে ১৪ নভেম্বর সে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সংগঠিত করে।