আঞ্চলিক স্তরে সর্বাঙ্গীণ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ (আরসিইপি) চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে মোদী সরকারকে পিছিয়ে আসতে হল। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে তাঁদের উৎপন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তেন এবং তাঁদের দুর্দশা আরো বাড়ত। দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রির ব্যবসায় ভারতের কৃষকদের স্বার্থকে বিপন্ন করে ভারতের বাজারে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর অনুপ্রবেশকে গভীরতর করার পথ এই চুক্তি সুগম করত। ভারতীয় কৃষকদের মোর্চা সংগঠন এআইকেএসসিসি ৪ নভেম্বর দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দেয় যে দিনটিতেই ঐ চুক্তি কার্যকরী হওয়ার কথা ছিল। সারা ভারত কিসান মহাসভা সহ ২৫০টিরও বেশি কৃষক সংগঠন সমস্ত রাজ্যেই প্রতিরোধ যাত্রা এবং প্রতিবাদ সমাবেশ সংগঠিত করে এবং অবশেষে আরসিইপি চুক্তিতে স্বাক্ষর ব্যাহত হয়। সারা ভারত কিসান মহাসভার সভাপতি রুলডু সিং এটাকে মোদী সরকারের সাম্রাজ্যবাদপন্থী এবং কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে কৃষকদের বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন।
তথাকথিত “পূব দিকে তাকাও” নীতি অনুসরণ করে ভারত সরকার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ সহ ১৬টি দেশের সঙ্গে ২০১৯-এর ৪ নভেম্বর ব্যাঙ্ককে আরসিইপি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছিল, যে দেশগুলোর মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াও ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে লেনদেন হওয়া ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পণ্যের আমদানি শুল্ককে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হবে এবং অবশেষে তাকে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হলে ভারতের বাজার আমদানি হওয়া সস্তার পণ্যে ভরে যেত। এই পণ্যগুলো, বিশেষভাবে দুগ্ধজাত দ্রব্য নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে অত্যন্ত কম খরচে উৎপন্ন হয়, কেননা, ঐ সমস্ত দেশের সরকার কৃষকদের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেয়।
এই চুক্তিতে ভারতের জন্য বিশেষ বিপদ নিহিত রয়েছে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, মশলাপাতি, গম, ডাল, রান্নার তেল, রবার, তুলা, মাছ, কাপড়, পোশাক, ইত্যাদি পণ্যের মধ্যে। গুরুতর বিপদটা হল — পশু পালন এবং ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদনে নিযুক্ত ১০ কোটিরও বেশি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আমুল-এর মতো সমবায়ী প্রতিষ্ঠান সহ অনেক শিল্প গোষ্ঠীই আরসিইপি-র বিরোধিতা করেছে।
আরসিইপি চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিরোধিতা করে সারা ভারত কিসান সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি(এআইকেএসসিসি) নিম্নলিখিত দাবিগুলো জানিয়েছে :
১। আরসিই পিনিয়ে রাজ্য বিধানসভাগুলোতে এবং সংসদে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
২। কৃষকদের এবং অভ্যন্তরীণ বাজারকে ধ্বংস করতে পারে এমন বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো করা যাবে না। ভারতে যথেষ্ট মাত্রায় উৎপন্ন হয় এমন শস্যগুলোর আমদানিকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। প্রয়োজন হলে তবেই আমদানি করতে হবে।
আরসিইপি-র বিরুদ্ধে এআইকেএসসিসি প্রতিবাদের যে ডাক দেয় নাগরিক সমাজও তাতে সমর্থন জানায় ও অংশ নেয়।