২ অক্টোবর ২০১৯ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কার্যালয় উদ্বোধন হয়।
প্রায় চার দশক আগে বজবজে জুট শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার সাথে সাথে সংগ্রামী শ্রমিকদের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে বজবজ পার্টি অফিস গড়ে ওঠে। অফিসটা আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্যই বারংবার শাসক দলের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের মাঝের সময় শাসকদল তৃণমূলের দ্বারা একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বিনা প্রতিরোধে দখল অভিযান চলছিল। ১৫ মার্চ আমাদের অফিস তৃণমূল কর্মীরা দখল করে তালা লাগিয়ে দেয়। সকালে অফিস দখলের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই জেলা সম্পাদকের নেতৃত্বে গুটিকয়েক কমরেড প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধ হয়। জনগণের ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যায়। কয়েকদিন ধরে অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচী চলতে থাকে। শাসকদল রাজনৈতিক চাপে পড়ে যায় এবং শেষমেষ থানার মাধ্যমে অফিসের চাবি ফিরিয়ে দেয়।
অফিস পুনরুদ্ধার হওয়ার পর কমরেডদের সাহস ও তেজ আরও বেড়ে যায়। যে সমস্ত কমরেডরা দীর্ঘদিন ধরে অফিসকে লালন পালন করতেন তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন অফিসকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে। একদিকে অর্থসংগ্রহ, পরিকল্পনা রচনা করা, অন্যদিকে সকাল-সন্ধ্যা নির্মাণকার্যে সহযোগিতা দুটোই তালমিলিয়ে চলতে লাগল। যুদ্ধকালীন উদ্যোগ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৬০০ বর্গ ফুটের একটি সুসজ্জিত অফিস নির্মিত হল। আমাদের সাহসিকতা ও সংগ্রামকে এলাকার মানুষ দুহাত তুলে সমর্থন করেছেন, সাধ্যের বেশি অর্থপ্রদান করার মধ্য দিয়ে তার পরিচয় পাই। আমরাও তাদের সহযোগিতা স্বীকার করে অভিনন্দন বার্তা পাঠাই।
৭০ দশকের ধাক্কার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে বজবজ শ্রমিক অঞ্চলে পার্টি গঠনে যে জুট শ্রমিক কমরেড এবং তাঁর পরিবার সাহসী ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি শহীদ কমরেড মনোরঞ্জন নস্কর। তাঁর নামেই জেলা পার্টি অফিসের নামকরণ করা হয় “মনোরঞ্জন নস্কর ভবন”।
২ অক্টোবর পার্টি অফিস উদ্বোধনের দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাল ঝাণ্ডায়, অফিসের গেট ফুলে ও লালবাতিতে সুসজ্জিত ছিল। বিকাল ৪-১০ মিনিটে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন জেলা সম্পাদক ও রাজ্য সম্পাদক, রক্তপতাকা উত্তোলন করেন বর্ষীয়ান পার্টি কর্মী গুনধর মণ্ডল। অফিসের দ্বারোদ্ঘাটন করেন রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ।
দ্বারোদ্ঘাটনের পর উপচে পড়া ভিড়ে অফিস ঘরে ও বাইরে সমস্ত চেয়ার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাইকের আওয়াজ বহুদূর ছড়িয়ে পড়ে। মঞ্চ আলোকিত করেন অতীতে এই অঞ্চলে পার্টি গঠনে ভূমিকা নেওয়া কমরেডরা। উপস্থিত ছিলেন পার্থ ঘোষ, অতনু চক্রবর্তী, অনিমেষ চক্রবর্তী, বাসুদেব বসু, নবেন্দু দাশগুপ্ত, অমলেন্দুভূষণ চৌধুরী, ধীরেশ গোস্বামী, মলিনা বক্সী এবং জেলা নেতৃত্ব সহ আরও অনেকে।
আলোচনার শুরুতেই উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে বজবজ চলার পথে সাংস্কৃতিক সংস্থা, কবিতা আবৃত্তি করেন মিতা চ্যাটার্জী, স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন মোহন মণ্ডল।
পার্টি অফিসের ইতিকথা ও কমরেড মনোরঞ্জন নস্করের জীবনী তুলে ধরেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার। রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী বিজেপির দ্বারা সংঘটিত কাশ্মীর, এনআরসি ও চরম অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে আমাদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। লাল রাজনৈতিক অফিসগুলোকে আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠতে হবে। এই কর্মসূচী পালিত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মধ্যে এরকম একটি সংগ্রামী লাল পার্টি অফিস মানুষের মধ্যে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।