পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট-ইসলামপুর পার্টির পুরনো কাজের জায়গা। কিন্তু এখানে মূলত কৃষিমজুর, কৃষকদের মধ্যেই কাজ রয়েছে। ‘গ্রামে চলো’ অভিযানের মধ্য দিয়ে একদম দরিদ্র পিছিয়ে পড়া (যারা আমাদের পার্টির সন্নিধ্যে আছে) এরকম কয়েকজন মহিলার সাথে অঞ্চলের কমরেডরা আলোচনায় বসেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধন কর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়নের সভানেত্রীকে ইসলামপুরে ঐ অঞ্চলের মহিলাদের সাথে আলোচনার জন্য নিয়ে যায়। ২০০-র উপর মহিলা ঐ বৈঠকে হাজির হন। এলাকাটা মুসলিম প্রধান হওয়ায় এই বৈঠকে তাদের সংখ্যাই বেশি ছিল। এছাড়াও হিন্দু, আদিবাসী মহিলারাও ছিলেন। বৈঠকে মহিলাদের সংগঠিত করে নিয়ে আসা এবং সভা পরিচালনা করা সবটাই একজন মুসলিম মহিলা (যিনি এখন ওখানকার মূল সংগঠক) দায়িত্ব নিয়ে করেন।
বৈঠকে মূল যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহল, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং মিড-ডে-মিল দুটিই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self-Helf Group) প্রকল্পটির কাজ হল পঞ্চায়েত স্তরে পিছিয়ে পড়া বিপিএল তালিকাভুক্ত মহিলাদের কমপক্ষে ১০ জন নিয়ে গোষ্ঠী গঠন করে সরকারী প্রকল্প অনুযায়ী তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা। নানা ধরনের কুটিরশিল্প গড়ে তোলার ট্রেনিং দেওয়া এবং সরকারী ব্যবস্থাপনায় তা ক্রয়-বিক্রয় করা। এই অঞ্চল জুড়ে এধরনের কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেইনি। এই প্রকল্পের মহিলাদের মিড-ডে-মিল প্রকল্পের কাজের মধ্যে ঢুকিয়ে সেখানে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আর স্বনির্ভর প্রকল্পের কাজ গড়ে তোলার জন্য আসা অর্থ আত্মসাৎ করছে পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরের ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় কর্মকর্তা। এইসব নিয়ে মহিলাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভগুলিকে সংগঠিত করে বিডিও-তে ডেপুটেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই প্রথম এতো মহিলা ঘর থেকে সংগঠিতভাবে বাইরে আসেন। তৃণমূল গ্রামে গিয়ে রটাতে থাকে এটা নকশালরা করছে, কোথাও বলে বিজেপির ইন্ধনে এটা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় এবং ভয় দেখাতে থাকে। কিন্তু মহিলারা দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে ডেপুটেশনে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকেন। এমনকি তৃণমূল পরিবারের মহিলারাও এই প্রোগ্রামের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান। তৃণমূলের হুমকিতে ভয় পেয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন মূল সংগঠককে আটকে রাখলেও মহিলাদের চাপে তারা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তৃণমূল পরিবারের মহিলারাও এই কর্মসূচীতে যোগ দেন। অটো, টোটো, মোটরভ্যানে দলে দলে মহিলারা আসতে থাকেন। বিডিও অফিস চত্বর ভরে ওঠে। অনেকক্ষণ ধরে বিডিও-র সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বেরিয়ে এসে ব্লক অফিস চত্বরেই মিছিল করে পথসভা করা হয়। মহিলারা লড়াই করার এক মানসিকতা নিয়ে ফিরে যান। আগামী নভেম্বরে নাদনঘাট অঞ্চলে বড় করে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিড-ডে-মিল সংগঠনের সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।