খবরা-খবর
কয়েক হাজার মিড-ডে-মিল কর্মীর বিক্ষোভ সমাবেশ : মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ

২৯ আগস্ট দুপুর ১টা কলকাতার মানুষ দেখলেন হাজার হাজার মিড-ডে-মিল কর্মীর দৃপ্ত মিছিল এগিয়ে চলেছে। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিছল বেরিয়ে কলকাতার রাজপথে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল। মিছিলে দাবি উঠেছে “শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে, মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করতে হবে, ১২ মাসের ভাতা চাই, মিড-ডে-মিল কর্মীদের উপর হয়রানি বন্ধ কর, উৎসব ভাতা দিতে হবে ইত্যাদি”। মুশল ধারা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মিছিল এগিয়ে চলেছে। মিছিল কলকাতা কর্পোরেশনের সামনে সমাবেশ স্থলে প্রবেশ করার পর মিছিলে অংশ গ্রহণকারিদের সংগ্রামী মেজাজ তখন আরও তুঙ্গে ওঠে।

শুরুতে পুলিশ প্রশাসন নিউ মার্কেটের পাশের রাস্তার একটা রো-তে মিটিং-এর জন্য অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু লোক যত বেড়েছে পুরো রাস্তা জুড়ে মিটিং করতে দিতে প্রশাসন বাধ্য হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেই সভার কাজ শুরু হয়।

বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা জয়শ্রী দাস, নদীয়া জেলা মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মী ইউনিয়নের সভাপতি কৃষ্ণগোপাল দাস এবং এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু। খবর আসে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করবেন। সভার দুই ইউনিয়ন থেকে ৫ জনের প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়নের সভানেত্রী ও সম্পাদিকা যথাক্রমে মীনা পাল ও জয়শ্রী দাস, নদীয়া জেলা রন্ধনকর্মী মিড-ডে-মিল ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদিকা যথাক্রমে কৃষ্ণগোপাল দাস ও চায়না শেখ এবং এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু। তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর হাতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি তুলে দেন

স্মারকলিপিতে যা আছে তা হল ‘পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়ন’ ও ‘নদীয়া জেলা মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মী ইউনিয়নের’ পক্ষ থেকে গণ ডেপুটেশনে আপনার কাছে আমরা এসেছি।

কেন্দ্রীর সরকার প্রাথমিকে ৪.৪৮ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৬.৭১ টাকা বরাদ্দ করেছে। এতো কম অর্থ বরাদ্দ আসলে শিশুদের পুষ্টির নামে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কর্মীরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অথচ মাসে সাম্মানিক হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার মিলিয়ে মোট ১৫০০ টাকা কর্মীদের ভাতা দেন। কর্মীদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি নেই। ফলে ন্যূনতম মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ কমাচ্ছে এবং প্রকল্পকে অ-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী (এনজিও) সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আপনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি করছি মিড-ডে-মিল প্রকল্পে শিশু খাদ্য এবং কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের। প্রকল্পকে অ-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়ারও আমরা তীব্র বিরোধীতা করছি।

mdi day meal

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমরা নিম্নলিখিত দাবিগুলি পেশ করছি

(১)  কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে মাসে মোট ১৫০০ টাকা মাত্র সাম্মানিক ভাতা কর্মীদের দেন। প:ব: সরকারের কাছে আবেদন কর্মীদের মাসিক ন্যূনতম ৫০০০ টাকা ভাতার ব্যবস্থা করলে আমরা খুবই উপকৃত হব।

(২)  উৎসব ভাতা/অনুদান/বোনাস যে নামেই হোক কিছু ব্যবস্থা করা।

(৩)  সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।

(৪)  গ্রীষ্মকালীন ও পুজোর ছুটিতে ভাতা বন্ধ করা চলবে না। বছরে ১২ মাসের ভাতা চালু করা।

(৫)  রন্ধন কর্মীদের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা।

(৬)  স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি থেকে কর্মী নিয়োগ করা হয়। ফলে কাজ গোষ্ঠী সদস্যদের মধ্যে বন্টন হয়ে একজন কর্মী মাসে মাত্র ২৫০/৩০০ আয় করেন। মাঝেমাঝেই রন্ধনকর্মীদের অন্যায় ভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

(৭)  শিশু খাদ্যে রাজ্য সরকার কিছু বরাদ্দ বাড়াক।

দাবি সনদ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রী বলেন আপনাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত, তিনি রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীকে জানান অন্য বেশ কিছু রাজ্য আছে যারা পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি ভাতা দিচ্ছে। মন্ত্রী এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে কিছু করার আশ্বাস দেন। উৎসব ভাতা দেওয়ার ব্যাপারেও তিনি একমত হন। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজ্য সরকার বহু ক্ষেত্রে অনুদান দেয়, তা হলে রন্ধন কর্মীদের জন্য কেন এতদিন উৎসব ভাতা দেওয়া হল না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রন্ধন কর্মীদের বিভিন্ন সময়ে অকারণে কাজ থেকে বসিয়ে দিয়ে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী তা বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে সার্কুলার জারি করার আদেশ দেন। রন্ধনকর্মীদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম যুক্ত করার কথা বলা হয়। সর্বোপরি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয় শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতির জন্য তারা যেন কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করেন। এনজিও দিয়ে এই প্রকল্প চালানোর যে অপচেষ্টা শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানানো হয়।

স্মারকলিপি জমা দিয়ে ফিরে এসে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বাসুদেব বসু সহজ ভাবে মন্ত্রীর সাথে কথোপকথন শ্রমিক সমাবেশে তুলে ধরেন। বক্তব্য শোনার পর রন্ধনকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

প্রতিনিধিদলের ডেপুটেশনে যাওয়া ও ফিরে আসার মধ্যে রাজ্য, জেলা, ব্লক ও এলাকা স্তরের ৩০ জনের অধিক সংগঠক এবং রন্ধনকর্মীরা বক্তব্য রেখেছেন।

বৃষ্টির মধ্যে রন্ধনকর্মীদের গণসংগীত গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেন পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের নেতা নীতীশ রায় ও বাবুনি মজুমদার। সভা পরিচালনা করেন এআইসিসিটিইউ’র অন্যতম রাজ্য সম্পাদক নবেন্দু দাশগুপ্ত।

খণ্ড-26
সংখ্যা-27