কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সাম্প্রদায়িক কর্পোরেট ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের সামনে এক চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। প্রতিদিন নিত্যনতুন কূটকৌশলে হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচিকে তথা ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। দেশের সংবিধানকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি বিচার বিভাগের ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে! অপরদিকে কর্পোরেট লুন্ঠনকে লাগাতার তীব্রতর করে তোলার ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ঘাড়ে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারী সর্বোচ্চ রেকর্ডে পৌঁছেছে। ফ্যাসিবাদের এই সর্বব্যাপী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বামপন্থার এক আক্রমাত্মক অভিযান আজ সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে ৫টি বামপন্থী দল মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে ২৫-৩১ মে এক সপ্তাহব্যাপী সর্বভারতীয় প্রচার অভিযানের আহ্বান জানিয়েছে, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন যার অন্যতম অংশীদার। অন্য দলগুলির মধ্যে রয়েছে সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। এই প্রচারাভিযান অবশ্যই বুলডোজার রাজ এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ (জ্ঞানবাপী, তাজমহল, কুতব মিনার, মান্ডা এবং আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে) উভয়ের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হবে। প্রচার অভিযানকে এক রাজনৈতিক অভিযান হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বর প্রশ্নে যে দাবিগুলি নির্দিষ্ট হয়েছে তা হল — পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে হবে, আয়কর যারা দেন না তাদের সকলকে রেশন থেকে চাল-ডাল-ভোজ্য তেল ও নগদ ৭,৫০০ টাকা দিতে হবে, ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, শহরাঞ্চলে ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকারকে বেকার ভাতা দেওয়ার আইন করতে হবে। দেশ এবং রাজ্যে সমস্ত শূন্য পদে সুষ্ঠু নিয়োগ পদ্ধতি মেনে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে।
এরাজ্যে ৫টি বামপন্থী দল ছাড়াও অন্যান্য বাম ও সহযোগী দলসমূহের আহ্বানে এই শিরোনামে প্রচার অভিযান সংগঠিত হবে। পারস্পরিক সমতা ও মতামত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরে ঐকমত্য গড়ে তুলে যৌথ কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। রাজ্যস্তরে এক বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। প্রচারের সূচনাপর্বে একেবারে নীচুতলায়, হাটে-বাজারে, গঞ্জে বা পুরসভা এলাকায় বিকেন্দ্রীভূতভাবে নিবিড় প্রচার অভিযান চালানো হবে।
২৫ মে ছিল বিকেন্দ্রীভূতভাবে পথসভা করার দিন। ২৬ মে ছিল বাজার-হাটগুলিতে প্রচার। ২৭ মে ছিল ব্লকে প্রচার। ২৮ মে মহকুমা স্তরে প্রচার। ২৯ মে রবিবার জেলা শহরে সমাবেশ। ৩০ মে সর্বত্র মশাল মিছিল। পরিশেষে ৩১ মে জেলাগুলোতে অবস্থান/বিক্ষোভ মিছিল ইত্যাদি। একইসাথে কলকাতায় বিকাল ৩টে থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অবস্থান। এই কর্মসূচিতে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির শহরের কর্মীদের অংশগ্রহণ করতে হবে। জেলাগুলি বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্মসূচির পরিবর্তন করতে পারে।
বামপন্থী নেতৃবৃন্দ আরও যে রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় পৌঁছায় হয় তা হল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের বর্শামুখ রেখে এরাজ্যের পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও আমাদের সোচ্চার হতে হবে। বেকারত্বের প্রশ্নে এরাজ্যে শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ করে রাখা, নিয়োগে চরম অস্বচ্ছতা, সরকার-প্রশাসন ও শাসকদলের যোগসাজসে উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতি, ব্যাপক হারে ঠিকাচুক্তির ভিত্তিতে অমর্যাদাকর নিয়োগ প্রভৃতি জ্বলন্ত বিষয়গুলি প্রচারে তুলে ধরা হবে। এরাজ্যে সরকারি মদতে চলা সিন্ডিকেট রাজ, ক্রমবর্ধমান মজুতদারী, কালোবাজারি, আলু সহ কৃষি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠার মতো বিষয়গুলিও প্রচারে তুলে ধরা হবে।