উপেক্ষার শিকার সর্বজনীন মৌলিক আয়ের অধিকার
Victims of neglect

এতোদিন প্রায় সমস্ত বেসরকারি সামাজিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা সুপারিশ করে এসেছে — সর্বজনীন মানবিক মৌলিক আয়ের সংস্থান করতেই হবে। এটা জীবন-জীবিকার অধিকারের প্রশ্নে ভীষণভাবেই প্রয়োজন। বিশেষ করে অতিমারী-উত্তর বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটা বাঁচা-মরার শর্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এবিষয়ে মোদী সরকার এতটুকু আগ্রহ দেখায়নি, বরং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-উপেক্ষা-বঞ্চনা-কারসাজি-ছলনা-প্রতারণা করে আসছে। তবে এখন মোদী-ঘরের ভেতর থেকে বেরোচ্ছে বে-সুরের তাল-মিল। অন্যকথায়, শোনা যাচ্ছে বাইরের সমালোচনা ও প্রতিকারের উপায় বাৎলানো সুপারিশের সমস্বর। মুখ খুলতে হচ্ছে মোদী-কেন্দ্রের গঠন করা 'অর্থনৈতিক উপদেষ্টামন্ডলী’র চেয়ারম্যান বিবেক রায়'দের। গুরুগাঁও ভিত্তিক এক সংস্থার তৈরি সমীক্ষার বলছে ‘ভারতরাষ্ট্রে তীব্র হচ্ছে অসমতা’। ওই রিপোর্ট চিহ্নিত করেছে, শ্রমে অংশগ্রহণ করতে পারার প্রশ্নে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। আর, সুপারিশ করেছে প্রতিকারের কিছু উপায়ের। রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, যে অসমতার রেখাচিত্র ধরা পড়েছে তা কিছুতেই সর্বাঙ্গীন হতে পারে না। কারণ, প্রাসঙ্গিক সরকারের তথ্যাগারে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। বিশেষত, পর্যায়ক্রমিক শ্রমে অংশগ্রহণের হার, তার তুলনামূলক চিত্র, ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির অনুপাতে সর্বজনীন ন্যূনতম ভোগব্যয় হ্রাসের হার, সেসবের তুলনীয় পর্যবেক্ষণ, উল্লেখ, বিবৃতি, বিশ্লেষণ কোনটাই সুসংবদ্ধ পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা ২০১১-১২-র পর থেকে আর তেমন করাই হয়নি। বিগত এক দশক যাবত একই তথ্যপরিসংখ্যান বহু ব্যবহারে পুরানো সেকেলে হয়ে গেছে। তবু পরবর্তীতে বিক্ষিপ্ত যা তথ্যসমূহ মেলে তাতেই মিলছে অসাম্য বৃদ্ধির ছবি। আজকের ভারতে বেকারি বৃদ্ধির ছবিটা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। কর্মহীনতার স্থিতিস্ফীতির এহেন সময়ে স্বাভাবিকভাবেই শ্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ যৎসামান্য। তার ৯০ শতাংশই কেবল অপ্রচলিত অসংগঠিত ক্ষেত্রে, যেখানে ন্যূনতম সংবেদনশীল বা সম্মানজনক আয়ের সামাজিক সুরক্ষা নেই। অতিমারীর ঘা খাওয়া বিশ্ব অর্থাবস্থায় আইএমএফ তিনটি ভয়াবহ বৃদ্ধির পরিঘটনা চিহ্নিত করেছে — বেকারি, দারিদ্র, অর্থনৈতিক অসমতা। ২০১৯-২০-র পর্যায়ক্রমিক শ্রমে অংশগ্রহণ ও ভোগব্যয়ের নিম্নগামী হার অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টামন্ডলীর চেয়ারম্যানের টানা উপসংহার মূলত অনুরূপ। সেইসঙ্গে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন, এমএনআরইজিএ প্রকল্প রূপায়ণে জোর দেওয়া, নিঃশর্তে কাজের চাহিদা ও নিশ্চয়তা পূরণ, যাতে উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তির হাতে কাজ ও কাজের বিনিময়ে মজুরি তুলে দেওয়া যায়, সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি করা, যাতে দারিদ্র কমানোর অবস্থা তৈরি হতে পারে, এপ্রশ্নে গ্রাম ও শহরের সুযোগের ব্যবধান কমানোয় তীব্রতা ও ব্যাপকতা বাড়ানো। সর্বজনীন বুনিয়াদি আয়ের ব্যাপারে আরও কয়েকটি বাধ্যতা মানতেই হবে। যেমন, সময়ের মজুরি সময়েই মিটিয়ে দিতে হবে, পরে এককালীন দিয়ে দেওয়ার নামে ফেলে রাখা যাবে না, মজুরি দিতে হবে জনে জনে ব্যক্তিগতভাবে, মজুরি দিতে হবে নগদে, কোনও ভাউচারে নয়, কোনও শর্তের বিনিময়ে নয় — মেটাতে হবে নিঃশর্তে, পর্যায়ক্রমে মূল্যবৃদ্ধি পরিমাপ করে সঙ্গত করতে হবে মজুরি মান।

এরকম এক গুরুতর বিষয় নিয়ে মোদী সরকারের বিশেষ কোন হেলদোল নেই। অথচ বেকারি আর মূল্যবৃদ্ধির চাপে গরিব নিম্নবিত্ত জনগণ ক্রমশ নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অতএব মাঠে নেমে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অধিকার আদায় করার উপায় করে নিতে হবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-20