২০১৫ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বঙ্গ বিশ্ব বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলন (বেঙ্গল গ্লোবাল বিজিনেস সামিট বা বিজিবিএস) শুরু করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা ৫টি বিজিবিএস’এর পরে মাঝে কোভিডের জন্য দু’বছর স্থগিত থাকার পরে গত এপ্রিলের ২০-২১ তারিখে ষষ্ঠটি অনুষ্ঠিত হল নিউটাউনে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের কিছু আগে পঞ্চম বিজিবিএস’এ মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন মুকেশ আম্বানি, আর এবার ষষ্ঠটিতে শিরোমণি হিসেবে উপস্থিত হলেন গৌতম আদানি। ভারতে শাসক দল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিরা সাধারণত বিজেপি’র দোসর হিসেবে আম্বানি-আদানির নাম একসাথেই উচ্চারণ করে থাকে। যদিও মমতা ব্যানার্জীর মুখে সাধারণত তাদের বিজেপি’র সাথে একসাথে জড়িয়ে বিরোধিতা দেখা যায় না। তবুও পরপর দু’দুটি বিজিবিএস’কে ‘মহিমান্বিত’ করলেন বিজেপি’র দোসর পুঁজির দুই মালিক। ২০১৯’র সম্মেলনে মুকেশ আম্বানি পশ্চিমবঙ্গে ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবছরের সম্মেলনে গৌতম আদানি সম পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তবে কথাই তো আছে, ‘কেউ কথা রাখেনি’। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছেন যে ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সম্মেলনগুলিতে প্রতিশ্রুত সাড়ে ৯ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রকল্পের ৫০ শতাংশের বেশি কার্যকরী হয়ে গেছে ও ২০১৯ সালের প্রতিশ্রুত ২৮৪ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কার্যকরী হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও শিল্প সহায়তাকারী দফতরের কাগজপত্র অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৯’র মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে যারমধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা কার্যকরী হয়েছে। গত দু’বছরের অতিমারির মধ্যে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৩৫ গুণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ফলে ২০১৯ সালে আম্বানির দেওয়া কথার ১০ হাজার কোটির বিনিয়োগ কোথায় গেল জানতে ইচ্ছে করে।
যাক গিয়ে সেসব পুরোনো কথা (যদিও পুরানো সে দিনের কথা ভোলা কি আর যায়), এবারের বিজিবিএস’এর মুখ্য শিল্পপতি আদানির কথায় আসা যাক। উনি দুটি কথা বলেছেন। প্রথমে বলেছেন, তাঁর কোম্পানিগুলি আগামী দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ও তাতে ২৫,০০০ মানুষের কাজ জুটবে। দ্বিতীয়টি বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজিবিএস শেষ হওয়ার একদিন বাদে ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক কনক্লেভে। সেখানে বলেছেন ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে কোনো অভুক্ত থাকবে না ও দেশের জিডিপি ৩০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। ভারতের তথা এশিয়ার এক নম্বর সম্পদশালী ব্যক্তি যা বলেছেন তাকে অমান্য করে কার সাধ্যি। তেমনটা হলে চাই কি তিনি গুজরাটের আদালতে মানহানির মামলা করে দেবেন। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (ভারতীয় টাকায় ৯.৫ লক্ষ কোটি) মালিকের মান একটুও হানি হলে তার খেসারত তো কয়েক হাজার কোটি টাকা হবেই। অতিমারির সময়কালে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আদানির সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার (৩ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা)। ওই সময়কালে ভারতের জিডিপি একই স্তরে রয়ে গেছে। ভারতে দারিদ্রও বেড়েছে, ২০ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে নেমে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে কাকে বলে কারুর পৌষমাস কারুর সর্বনাশ। এও বোঝা যাচ্ছে আত্মনির্ভর ভারত তথা রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র বেসরকারিকরণের লাভের গুড় কারা খাচ্ছে, কারা দোসর মোদীজীর।
পুঁজির মালিকদের এদেশে অতিধনী হওয়ার মধ্যে একটা প্যাটার্ন দেখা যায়। তাঁরা প্রথমে বিভিন্ন অনীতিনিষ্ঠ উপায়ে কিছুটা ধনবান হন, তারপরে সেই ধন ব্যবহার করে ক্ষমতার অলিন্দে থাকা কোনো রাজনীতিবিদদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নীতি, বাণিজ্য নীতি বিষয়ে আগাম জানতে পারেন যাকে ব্যবসায়ীর ভাষায় বলে ‘ইনসাইডার স্টোরি’ এবং সেই অনুযায়ী ফাটকা লেনদেন করেন, বা অর্থ লগ্নি করেন। ধীরুভাই আম্বানির উত্থান নিয়ে ‘পলিয়েস্টার প্রিন্স’ বলে একটি বই আছে। একবার অতিধনীর কাতারে পৌঁছে গেলে আগে দুর্নীতি কারচুপি করা শিল্পপতি ‘দেশপ্রেমিক’ হয়ে যান। ‘দেশই প্রথম’ গোছের শ্লোগান জামার বুকে লাগিয়ে নেন। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম তো একদম ঝকঝকে বিদ্বান, বুদ্ধিমান উদ্যোগী শিল্পপতি হয়ে ওঠেন, সরকারগুলিও তাঁদের কাছে নতজানু হয়ে পড়েন প্রকাশ্যে। রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পগুলিকে বেচে দেওয়া হয় জলের দরে। সম্প্রতি টাটার কাছে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি, দু’দশক আগে অনিল আগরওয়ালের বেদান্তের কাছে ভারত এ্যালুমিনিয়াম, ইন্ডিয়া জিঙ্ক, বাইলাডিলা মাইনস বিক্রি এসবই সেই দোসর পুঁজির নিদর্শন।
গৌতম আদানির সঙ্গে সরকারগুলির খাতির বন্ধুত্ব কেমন সেটা একটু খুঁজে দেখা যেতে পারে। কোন সুবাদে কলেজ ড্রপ আউট একজন ছোট ব্যবসায়ী দেশজুড়ে, এমনকি দেশের বাইরেও কয়লা খনি কিনতে পারে, দেশের বড় বড় বিমান বন্দর কব্জা করতে পারে, ১০-১২টা সমুদ্র বন্দরকে নিজের মালিকানায় আনতে পারে, একদিকে কয়লা খনি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক হয়েও অপরদিকে পরিবেশ বান্ধব শক্তিক্ষেত্রে বিপুল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সর্বোপরি দেশ ও জাতির অন্যতম নায়কের মতো দেশের দারিদ্র ও ক্ষুধা দূরীকরণের ভবিষ্যৎ এজেন্ডা মায় দেশকে ৩০ ট্রিলিয়ন জিডিপি’তে পৌঁছানোর টার্গেট বছর নির্দিষ্ট করতে পারেন। কেবল কি গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন মোদীর হয়ে গুজরাটে শিল্প সম্মেলন সংগঠিত করা বা ২০১৪’র নির্বাচনী প্রচারের নরেন মোদীকে বিমানের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার মধ্য দিয়েই এই উত্থান না অন্য সরকারগুলির সঙ্গেও বোঝাপড়া রয়েছে! যেমন এরাজ্যে মমতা সরকারের সঙ্গে আপাতভাবে তা দেখা যাচ্ছে। নাকি আদানির সঙ্গে সখ্যতার মধ্য দিয়ে মমতা মোদীর কাছে বার্তা পৌঁছাতে চাইছেন! এসব জটিল ও গোপন কথা অবশ্যই ঝানু সাংবাদিকরা বিবেচনা করবেন। আমরা কেবল উত্থানের প্রক্রিয়াকে একটু খুঁটিয়ে দেখতে চেষ্টা করতে পারি।
আদানি গোষ্ঠির মোট কেনাবেচার পরিমাণ প্রায় ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা, বাজারী মূলধন সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা, সামগ্রিক মুনাফার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে। মোট ঋণের পরিমাণ ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকার মতো। এই ঋণের অনেকটা বিদেশ থেকে নেওয়া, অনেকটা দেশের মধ্যেও, শেয়ার ও সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণ। এগুলির অনেকটাই বৃত্তাকার ধরণে ঘুরছে, সম্পর্কিত লেনদেনের মধ্য দিয়ে। বিষয়টি জটিল। একটু সহজ ভাবে বললে এমনটি। ক কোম্পানী খ কোম্পানীর কিছু শেয়ারের মালিক, তারা সেই শেয়ার বন্ধক দিয়ে ঋণ নিল। তারা আবার সেই টাকা দিয়ে গ কোম্পানীকে ঋণ দিল বা গ’এর শেয়ারে বিনিয়োগ করল। যদিও গ কোম্পানী ও ক কোম্পানী একই ধরনের ব্যবসায় নেই। এবং ক, খ, গ সবকটি কোম্পানীই একই গোষ্ঠি, এক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত। ‘দ্য স্ক্রোল’ এব্যাপারে একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছিল। ফলে বাজার থেকে অর্থ ও ঋণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠির স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিবিআই আদানি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ আদানিকে ৮০ লক্ষ টাকা কর ফাঁকির জন্য গ্রেফতার করেছিল। ২০১৭ সালে ভারতীয় কাস্টমস অভিযোগ করে যে আদানি গোষ্ঠি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য করমুক্ত স্থানের আদানি পরিবারের দুবাই’এর খোলস (শেল) কোম্পানিকে ব্যবহার করছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা ওইরূপ ২৩৫ মিলিয়ন ডলার বা ১,৮০০ কোটি টাকা সরানোর একটি খবর প্রস্তুত করে। ২০১৪ সালে ভারত সরকারের রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দুবাই হয়ে মরিসাসের একটি সংস্থায় অর্থ পাঠানোর একটি জটিল বন্দোবস্তকে খুঁজে বের করে। ওই সংস্থাটির মালিক গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ শান্তিলাল আদানি।
কয়লা খনি ও বিদ্যুতে আদানি
ঝাড়খন্ডের রাঁচি থেকে ৩৮০ কিমি দূরত্বে মালি সমেত ১০টি গ্রামের ৫১৯ একর জমি আদানি পাওয়ারের হাতে তুলে দেয় ওখানকার তৎকালীন বিজেপি সরকার। গোড্ডায় ১,৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ যাবে বাংলাদেশে। মোদীজী আদানির ব্যক্তিগত বিমানে চড়েই বাংলাদেশ যান, সঙ্গে নিয়ে যান শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবে গৌতম আদানিকে। ওই সময়েই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি হয়। তার আগে আগস্ট মাসেই ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্রীয় অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে ২০১৬ সালে জমি চায় আদানি, ২০০০ একর। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ঝাড়খন্ডের সরকার আদানির জন্য ৫১৯ একর আদিবাসীদের এবং তপশিলি সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহন করে আদানিকে হস্তান্তর করে।
এরপর আদানি সংস্থা তাদের অবস্থান বারে বারে পাল্টাতে থাকে। যেমন, কোম্পানি যখন পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল, তখন তারা বলেছিল যে তারা এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জল সংগ্রহ করবে গোড্ডা’র সন্নিকটের চির নদী থেকে। পরে বলে যে তাদের অতিরিক্ত জল লাগবে, সেই জল তারা নেবে সংলগ্ন জেলা সাহেবগঞ্জের গঙ্গা থেকে; তারজন্য অতিরিক্ত ৪৬০ একর জমি লাগবে। কয়লা আনার জন্য তাদের রেল লাইন পাততে ৭৫ একর জমি লাগবে, এবং এই কাজটি আদানির হয়ে ভারতীয় রেলকেই করে দিতে হবে।
২০১৭’র মার্চ’এ ঝাড়খন্ড সরকার নোটিশ দিয়ে বলে যে আদানির এই প্রকল্প ‘জনস্বার্থে’ হচ্ছে, অতএব জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হবে। দেশের আইন অনুসারে রপ্তানির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে, যে রাজ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে, সেই রাজ্যকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ঝাড়খন্ড সরকার ও আদানির কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যেখানে ঝাড়খন্ড সরকার মেনে নেয় যে আদানির কোম্পানী ‘অন্য সূত্র’ থেকে ঝাড়খড রাজ্যকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে। আদানির কাছ থেকে এই বিদ্যুৎ ঝাড়খন্ড সরকারকে বাজারের দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হবে; এই মর্মে রাজ্য সরকার তার আইন পরিবর্তিত করে নিয়েছে। এরফলে আদানির কোম্পানীর বছরে অতিরিক্ত ৭ হাজার ৪১০ কোটি টাকার বাড়তি মুনাফা হবে।
এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘জনশুনানী’র সময়ে পুলিশ আচমকা কাঁদানে গ্যাস ফাটিয়ে সবাইকে হটিয়ে দেয় এবং ঘোষণা করে যে গণশুনানি শেষ, গ্রামবাসীরা ‘স্বেচ্ছায়’ এই প্রকল্পে সায় দিয়েছে। এই মিটিং’এর নোটিশে বলা হয়েছিল যে গ্রামবাসীরা যেন এই মিটিং’এ উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পে সায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও স্থানীয় গ্রামসভা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এই প্রকল্পের বিরোধী, কেননা এখানে আদিবাসীরা তাদের বাসস্থান ও জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। এই ‘গণশুনানী’র পর গোড্ডা জেলার কালেক্টার ঘোষণা করেন এই প্রকল্পে একজনও উচ্ছেদ হচ্ছেন না। ২০২০’র কোভিডকালে এসে দেখা যায় যে আদানি গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, তারা ঐ জমি এবং জলের দখল অন্যভাবে ব্যবহার করতে চায়, যাকে এমনকি ঝাড়খন্ড সরকারের পক্ষেও ‘জনস্বার্থ’ বলে ঘোষণা করা মুশকিল।
অস্ট্রেলিয়ার কয়লার সমস্যার কথা বলে আদানি গোষ্ঠী মোদী সরকারের কাছ থেকে অন্যায্য উপায়ে নতুন ‘কোল ব্লক’গুলির বেশ কয়েকটা এখনই হাতিয়ে নিয়েছে। মোদী সরকার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে চাপ দিয়ে আদানি গোষ্ঠীকে বিপুল পরিমাণ ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সেই ঋণ এখন ক্রমাগত খেলাপি হয়ে চলেছে, অচিরেই হয়তো সেই ঋণ মকুব করা হবে। যে চৈনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে আদানি গোষ্ঠী এই কেন্দ্রের পরিকল্পনা করেছিল, সেই প্রযুক্তি দূষণের দায়ে এখন সারা পৃথিবীতে প্রত্যাখ্যাত।
দেউচা-পাঁচামীতে খোলামুখ কয়লাখনির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠেপড়ে লেগেছেন। মনে হয়, আদানিও সেটিকে পাখির চোখ করেছেন। তবে ছত্তিশগড়ে অনুরূপ কয়লাখনি যা বিগত বিজেপি সরকার ২০১১ সালে আদানিদের দিয়েছিল তার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অরণ্যের একেবারে ধার ঘেঁষে বেসরকারি দুটি খোলামুখ খনির কাজ শুরু হয়। এরফলে প্রতিবেশের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ অরণ্য একেবারে ধংস হয়ে যায়, জলের উৎসের বারোটা বাজে, ধোঁয়া, ধূলো, তাপ এবং শব্দ দূষণে পুরো অঞ্চলটির অপূরণীয় ও অপ্রত্যাহারযোগ্য ক্ষতি হয়। হাতিদের বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা অনেক আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং মানুষের সঙ্গে তাদের অনভিপ্রেত সংঘাত বাধে। এরসঙ্গে যোগ করতে হবে হাজার হাজার বৃক্ষ-নিধন, যারা অনেকেই প্রায় শতাব্দী-প্রাচীন।
(ক্রমশ)
- অমিত দাশগুপ্ত
(ঋণ স্বীকারঃ শুভাশীষ মুখার্জি; পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস ও দোসর-পুঁজি)