সংগঠকের ডায়েরি : রন্ধন কর্মীদের সংগঠিত করতে
organize the culinary staff

পশ্চিমবাংলায় মিড-ডে-মিল প্রকল্পের রন্ধনকর্মীদের ভাতা ২০১৩ সালের পর বাড়েনি। অন্যান্য প্রকল্পগুলির কর্মীদের ভাতা বেশ কয়েকবার বৃদ্ধি পেয়েছে কিংবা রাজ্য সরকার অবসরের পর এককালীন টাকা ঘোষণা করেছে। ফলে রন্ধন কর্মীদের বেশিরভাগ তৃণমূল প্রভাবিত হলেও, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে গোষ্ঠী মারফত এই কাজকে যুক্ত করার দরুন, অনেক কর্মী কম ভাতায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এখানে কিছু পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে ইউনিয়নে রন্ধন কর্মীদের সংগঠিত করা যায়। বেশিরভাগ কর্মী মহিলা। পার্টি যেখানে নারী শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য জোর দিতে বলেছে সেখানে আমাদের সংগঠনগতভাবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট অবহেলা আছে। যেখানে ইউনিয়ন গড়ে তোলা গেছে, সেখানে নেতৃত্বের তদারকির অভাবের ফলে, উত্তর ২৪ পরগণা বাদে অন্য জেলাগুলিতে ইউনিয়ন নেই বললেই চলে। এআইসিসিটিইউ নেতৃত্বকে সামিল করে সংগঠন আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। ১২ মাসের ভাতা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র ইত্যাদি দাবিগুলি নিয়ে কর্মী ইউনিয়নের আগামী রাজ্য ডেপুটেশনের প্রচার পার্টির জেলা কমিটিগুলিকে রন্ধন কর্মীদের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য রাজ্যে যেখানে ভাতা বেড়েছে তার তালিকা, প্রচারে যুক্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন রন্ধন কর্মীদের ভাতা বাড়াতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেনা। অন্যান্য রাজ্যের মতো গোষ্ঠী মারফত নয়, রন্ধন কর্মীদের সরাসরি নিযুক্ত করতে হবে। কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় রন্ধন কর্মীদের মধ্যে সংগঠিত হবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। ২০১৯ সালের রাজ্য জমায়েতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরে রন্ধন কর্মীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ শুরু হয়। পরবর্তীতে ধারাবাহিক যোগাযোগ ও উদ্যোগে শ্যামনগর, জগদ্দল, কাঁকিনাড়ার প্রায় অধিকাংশ প্রাইমারি ও হাইস্কুলে রন্ধন কর্মী ইউনিয়ন গড়ে উঠে। অনেকগুলি স্কুল ধরে লাগাতার সরাসরি কর্মীদের সাথে কথা বলে, প্রথম বৈঠক করা হয় রাজ্য সম্পাদিকাকে নিয়ে। প্রায় ১০০ জন কর্মী উপস্থিত হয়েছিল। এটা হতে পেরেছিল রন্ধন কর্মীদের নিজস্ব উদ্যোগে প্রচারের দরুণ। উল্লেখ করা যেতে পারে একজন সংগঠকের উদ্যোগেই এ অঞ্চলে রন্ধন কর্মী ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন করতে গেলে রন্ধনকর্মী ইউনিয়নগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার যা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। ফলে এত বঞ্চনা সত্ত্বেও প্রয়োজন অনুযায়ী আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। কর্মীদের একটা অংশ যখন ধর্মঘটের কথা বলে, সংগঠকরা তাকে বাস্তবায়িত করার কথা ভাবতে পারেন না। আজকের পরিস্থিতিতে ইউনিয়নকে নেতৃত্বকারী ভূমিকা নিতে গেলে চিন্তা এবং উদ্যোগের ক্ষেত্রে গতিশীল হতে হবে। এভাবেই সংগ্রাম ও সংগঠনকে লাগাতার শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় ইউনিয়নকে সামনের সারিতে হাজির করা সম্ভব হবে।

- নারায়ণ দে

খণ্ড-29
সংখ্যা-16