তদন্তকারী সংস্থার দায় সংবিধানের প্রতি, বললেন প্রধান বিচারপতি
The investigating agency is accountable to the constitution

পুলিশ কার — কেন্দ্রের না রাজ্যের? কেন্দ্রের পুলিশ আছে, যথা সিবিআই; আবার, বিভিন্ন রাজ্যেরও পুলিশ বাহিনী রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় পুলিশের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এই প্রসঙ্গে চর্চিত বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে সিবিআই’এর এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার কিছু তীক্ষ্ণ মন্তব্য যা অবশ্যই সম্যক আলোচনার দাবি রাখে।

বিচারপতি রমণাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সিবিআই প্রতিষ্ঠা দিবস ১ এপ্রিল ডি পি কোহলি স্মারক বক্তৃতায় বক্তব্য রাখার জন্যে এবং বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘গণতন্ত্র : তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা ও দায়িত্ব’। প্রসঙ্গত, ডি পি কোহলি ছিলেন সিবিআই’এর প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা। বিচারপতি রমণা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, গঠনের পর প্রথম দিকে সিবিআই’এর ওপর জনগণের যথেষ্ট আস্থা ছিল এবং তদন্ত সিবিআই’এর কাছে হস্তান্তর করার জন্য আদালতের কাছে বহু আবেদন জমা পড়ত। প্রসঙ্গত, আজ পশ্চিম বাংলায় বেশ কিছু তদন্তের ভার সিবিআই’এর হাতে দেওয়ার দাবি উঠছে এবং সিবিআই বেশ কয়েকটি ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে। তবে, এই দাবির পিছনে সম্ভবত ন্যায় লাভের প্রত্যাশার চেয়ে শাসকের মদতে পুষ্ট নিপীড়কদের সিবিআই’এর হাতে হেনস্থা ঘটা ও নাস্তানাবুদ হওয়ার আকাঙ্খাই ক্রিয়াশীল হয়ে থাকবে। আমাদের ভুললে চলবে না যে, এই রাজ্যে নোবেল চুরি, নন্দীগ্ৰাম ও নেতাই গণহত্যার মতো ঘটনার নিষ্পত্তি সিবিআই করতে পারেনি এবং সারদা ও অন্যান্য চিটফান্ড কাণ্ডে তদন্তে সমাপ্তির কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও সিবিআই’এর কার্যধারা ক্রমেই প্রশ্নের মুখে পড়ছে। রমনার বক্তৃতার কথায় ফিরে আসা যাক। রমনা জানান, আগে সিবিআই তদন্তের জন্য চাহিদা এই জন্যই ছিল যে সিবিআই তখন ছিল ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রতীক’। বিচারপতির কথা থেকে অতএব স্পষ্ট, সিবিআই এক সময় আদর্শ তদন্তকারী সংস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো লালন করলেও বর্তমানে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো, অর্থাৎ, ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ থেকে তারা অনেকটাই বিচ্যুত। আজ সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তরকে ব্যবহার করে বিরোধীপক্ষের নেতাদের লাঞ্ছনা ঘটানো, জেলে পোরা এবং সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়াটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন এমন হল? তার বিকাশের ধারায় রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে যে চরিত্র অর্জন করতে থেকেছে, বলা ভালো, সিবিআই’এর জন্য যে ভূমিকা শাসকরা নির্দিষ্ট করেছেন, সেটাই যে সিবিআই’কে আজ শাসকের এমন ধামাধরা করে তুলেছে তা সহজেই বোধগম্য। কংগ্রেসও কেন্দ্রের শাসনে থাকার সময় সিবিআই’কে বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানায় সুপ্রিম কোর্ট কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই’কে ‘খাঁচাবন্দী তোতাপাখি’ বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু সেসময় ছাড়িয়ে সিবিআই’এর বশ্যতা আজ অনেক গভীরে, তাকে পরানো বেড়ির নেপথ্য নিয়ন্ত্রণক্ষমতা রাখেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, সেখান থেকে নাড়ালে তবেই যেন সিবিআই নড়ে। ফলে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা আজ পুরোপুরি সংশয়িত। প্রধান বিচারপতির ব্যাখ্যায়, “সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে অন্যান্য প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মতো সিবিআই’ও আজ জনগণের বিচারের মুখে। তার সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা প্রায়শই তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্নকে তুলে ধরছে।” বিচারপতির এই মন্তব্যে ‘সক্রিয়তা’ ও ‘নিষ্ক্রিয়তা’ শব্দ দুটো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। শব্দ দুটো এটাই বোঝাচ্ছে যে, তদন্তের সিদ্ধির চেয়ে শাসকের প্রয়োজনেই সিবিআই বা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা তৎপর হয়; আর সাধারণ জনগণের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে নিষ্ক্রিয়তাই তাদের অবলম্বন হয়। এর নিদর্শন হিসাবে উল্লেখ করা যায় যে, সরকারের বহু সমালোচক, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্তদের নিগ্ৰহে ও গ্ৰেপ্তারে মোদী-শাহদের পুলিশ যত তৎপরতা দেখায়, বিজেপি নেতাদের, অন্য দল থেকে বিজেপি’তে যোগদান করা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্তকারী পুলিশ হাত গুটিয়ে থাকে। শাহিনবাগে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অমিত শাহর অধীনস্থ দিল্লী পুলিশকে চূড়ান্ত সক্রিয়তা দেখাতে দেখা গিয়েছিল, তাদেরই আবার সেই সমস্ত বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে চোখ বুজে থাকতে দেখা গেল — যাদের প্ররোচনামূলক মন্তব্যই ২০২০’র দিল্লীর দাঙ্গাকে উস্কিয়ে তুলেছিল। পশ্চিম বাংলাতেও আনিস খানের মৃত্যুতে পুলিশি সক্রিয়তাই নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছিল, আর বগটুই গণহত্যা আটকাতে সক্রিয় হওয়ার কোনো তাগিদই পুলিশ অনুভব করতে পারেনি।

নিজেদের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি কোথায় দাঁড়িয়েছে তার বর্ণনায় বিচারপতি রমনা বলেছেন, “পুলিশের ভাবমূর্তি দুঃখজনকভাবে কালিমালিপ্ত হয় দুর্নীতি, পুলিশের বাড়াবাড়ি, নিরপেক্ষতার অভাবের এবং রাজনৈতিক শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আঁতাতের অভিযোগে।” এই অভিযোগগুলোর সঙ্গে আপামর জনগণ সমধিক পরিচিত এবং বিশেষ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তবে, বিরোধী নেতাদের নাস্তানাবুদ করে বিজেপি তথা হিন্দুত্বের পক্ষে পরিস্থিতিকে অনুকূল করে তুলতে মোদী সরকার অনুসৃত কৌশল ও তার প্রয়োগে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ব্যবহারের সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা। তামিলনাড়ুতে নির্বাচনের আগে ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের মেয়ের বাড়িতে তদন্তকারী সংস্থার হানাদারি, পশ্চিম বাংলায় নির্বাচনের আগে অভিষেক ব্যানার্জি ও তার স্ত্রীকে কয়লা পাচার তদন্তে ডেকে পাঠানো, কর্ণাটকে নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার ও তার ভাই সুরেশের বিরুদ্ধে সিবিআই’এর হানাদারি, অখিলেশ সিং, মায়াবতী — বিরোধী শাসিত রাজ্যের ও বিজেপি শাসিত রাজ্যের বিরোধী পক্ষের নেতারা বলতে গেলে কেউই তদন্তকারী সংস্থাগুলোর নিষ্পেষণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রশ্নটা অতএব খুব স্বাভাবিক ভাবেই উঠবে যে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে তারা কি দুর্নীতির কালিমা থেকে মুক্ত এবং অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন? বিচার্য এখানে সেটা নয়, প্রশ্নটা বরং হল – হয়রানি ও অপদস্থ করা ছাড়া তদন্তকে তার যুক্তিসম্মত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো আগ্ৰহ কি তদন্তকারী সংস্থাগুলোর থাকছে? বিজেপি নেতারা দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তদন্তকারী সংস্থাগুলো কি দুষ্কর্মের উন্মোচনে আদৌ উৎসাহী হয়? কর্ণাটকে বি এস ইয়েদুরাপ্পা, রেড্ডি ভাইদের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে সত্য উন্মোচনের কোনো যথার্থ আগ্ৰহ কি সরকারের ছিল? লোহা খনিজ খননে রেড্ডি ভাইদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পরিমাণ ছিল বিপুল, কিন্তু সিবিআই তাদের ‘ক্লিন চিট’ দেওয়ায় সেই তদন্ত নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ কম হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক গতবছরের ১৭ অক্টোবর অভিযোগ করলেন – তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় তাঁকে দুটো ফাইলে অনুমোদন দিতে বলা হয়েছিল, বিনিময়ে ঘুষের প্রস্তাব ছিল ৩০০ কোটি টাকার। ফাইল দুটোর একটা ছিল ‘আম্বানি’র (অনিল) এবং আর একটা ছিল ‘আরএসএস ঘনিষ্ঠ’ এক ব্যক্তির যিনি পিডিপি-বিজেপি মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’। ফাইল দুটোতে অনুমোদন তিনি দেননি। এই অভিযোগের পর প্রশাসন ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কোনো হেলদোল দেখা গেলনা। অভিযোগ নিয়ে কিছু আলোড়ন উঠলে ছ’মাস পর এবছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়েছেন যে অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হবে। তবে, সেই তদন্তে সত্য উন্মোচনে নিষ্ঠা কতটা দেখানো হবে তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়।

আবার, শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়দের মত নেতারা তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে যাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত একরকম গতিহীন হয়ে গেছে। আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কংগ্ৰেসে থাকার সময় বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে গলা চড়িয়েছিল। কিন্তু বিজেপি’তে যোগদানের পর সেই অভিযোগ নিয়ে বিজেপি’র আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। একইভাবে, মায়াবতীর বিজেপি-বিরোধী ধার সম্পূর্ণরূপে ভোঁতা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিজেপি কোনো রা কাড়ে না, আর তদন্তকারী সংস্থাগুলো অভিযোগ ভুলে থাকে। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি কথা হয়েছিল তা সাংবাদিকদের জানালেন – “কিসের ভিত্তিতে সঞ্জয় রাউতের (শিবসেনা নেতা) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল? এটা অবিচার। রাউতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পিছনে কোন প্ররোচনা কাজ করছে — তিনি কিছু বিবৃতি দিচ্ছেন বলে?” মহারাষ্ট্রে শাসক জোটের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই তদন্তকারী সংস্থাগুলো লেগে রয়েছে – শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার, অনিল দেশমুখ, হাসান মুশরিফ ও অন্যান্য নেতা, এবং নবাব মালিক ও অনিল দেশমুখকে গ্ৰেপ্তারও করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে মহারাষ্ট্রে এনসিপি-শিবসেনা-কংগ্ৰেস জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করার দুরভিসন্ধি কাজ করছে বলছেন ভাষ্যকাররা। এইভাবে, মোদী জমানায় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর তদন্তসমূহ দুর্নীতি বিরোধী অভিযান না হয়ে বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিপ্রায়ে নিয়োজিত বলে আমাদের বোধ হলে তাকে খুব একটা অমূলক বলা যাবে না।

এর থেকে নিষ্কৃতির, তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে কাঙ্খিত পথে ফিরিয়ে আনার উপায় কি কিছু আছে? প্রধান বিচারপতি তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তাদের আনুগত্য “সংবিধানের প্রতি এবং কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি নয়”। তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন, “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে এবং শক্তিশালী করে তুলতে হবে”। আর, “আমাদের মতো বহুত্ববাদী সমাজের পক্ষে এটাই উপযুক্ত”। তিনি আরো পরামর্শ দিয়েছেন, “স্বেচ্ছাচারী প্রবণতাকে চুপিসারে ঢুকতে দেওয়া যাবে না”, কেননা, “একনায়কতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা”। এখন যেটা সবচেয়ে জরুরি, তাঁর অভিমতে সেটা হল, “আজকের দিনে প্রয়োজন সামাজিক বৈধতা ও জনগণের আস্থার পুনরুদ্ধার। এই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপটা হবে রাজনৈতিক প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত ছিন্ন করা।” তাঁর প্রস্তাব, এটা করতে গেলে আইন করে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে একটা ছাতার তলায় নিয়ে এসে একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। একটা কমিটি এই সংস্থার অধিকর্তা নিয়োগ করবে। অধিকর্তার অধীনে কয়েকজন উপ-অধিকর্তা থাকবেন যাঁরা ভিন্ন-ভিন্ন বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করবেন।

প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন তার অনেকটাই তাক করা কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদের দিকে। সেই শাসক এই বক্তব্যকে কি চোখে দেখেছে? এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, “একটা সময় ছিল যখন সরকারে থাকা লোকজন তদন্তে বাধা দিত। কিন্তু এখন সেরকম কিছু ঘটে না। সিবিআই এখন আর ‘খাঁচায় বন্দী তোতাপাখি’ নয়। ভারতে অপরাধ তদন্তের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে সে তার কাজ করে চলেছে।” রিজিজু যা বললেন সেটা মোদী-শাহদেরই বক্তব্য। যে সরকার প্রতিদিন সংবিধানের নিয়মগুলো লঙ্ঘন করে চলেছে, রাষ্ট্রের চরিত্রে আমূল পরিবর্তনের অভিপ্রায়েই প্রশাসনকে চালিত করছে, যার প্রতিটি মজ্জায় স্বৈরাচারের অবস্থান, স্বভাবগতভাবেই যে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে — সেই সরকারের কাছে প্রধান বিচারপতির অভিমত ও পরামর্শ একেবারে অপ্রীতিকর হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে, প্রধান বিচারপতি আজকের তুঘলকি রাজত্বের, প্রশাসনিক অপশাসন ও অরাজকতার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেশের জনগণকেই সতর্ক করেছেন। জনগণকে যেমন এই প্রশাসনিক অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, আদালতের কার্যকরী নজরদারিও সমান জরুরি।

- জয়দীপ মিত্র

খণ্ড-29
সংখ্যা-16