আবেদন
২২ এপ্রিল ২০২২’র শপথ
Oath of April 22

২২ এপ্রিল ২০২২ সিপিআই(এমএল) প্রতিষ্ঠার ৫৩তম বার্ষিকী। এই উপলক্ষে, কেন্দ্রীয় কমিটি সিপিআই(এমএল)-এর সমস্ত সদস্য ও সমর্থকদের উষ্ণ বিপ্লবী অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের জন্য সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পার্টির অঙ্গীকারকে পুনর্ঘোষণা করছে। এবছর লেনিনের ১৫২তম জন্ম বার্ষিকী। আমরা কমরেড লেনিন এবং আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত নেতা এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। এবছরের পরের দিকে, ২৮ জুলাই আমরা কমরেড চারু মজুমদারের ৫০তম শহীদ দিবস পালন করব এবং ১০ ডিসেম্বর কমরেড জগদীশ মাস্টার ও কমরেড রামায়ণ রামের ৫০তম শহীদ বার্ষিকী উদযাপন করব। গত দু’বছর কোভিড-১৯ অতিমারী ও তার মোকাবিলার নামে রাষ্ট্র কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া নিষ্ঠুর লকডাউনে আচ্ছন্ন থেকেছে। তৎসত্ত্বেও, ভারতের জনগণ ও আমাদের পার্টি জনগণের বিভিন্ন বুনিয়াদী দাবি এবং অধিকারের প্রশ্নে সফলতার সঙ্গে ধারাবাহিক সংগ্রাম গড়ে তুলেছে। ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন মোদী সরকারকে কর্পোরেটমুখী কৃষি-আইনগুলি প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে। ভাগচাষি সমেত কৃষকদের সকল অংশের জন্য সমস্ত ফসলের উপযুক্ত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আদায় ও শ্রমজীবী জনগণের সমস্ত ধরনের ঋণমুক্তি, নিশ্চিত কর্মসংস্থান ও সমস্ত শ্রমিক এবং কর্মপ্রার্থীদের জীবন ধারনের উপযোগী মজুরি আদায় ও মুষ্টিমেয় কর্পোরেশনগুলির হাতে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর রোধে এখন লড়াই জারি রয়েছে। নির্বাচনে প্রতিটি বিজয় বিজেপি ও সঙ্ঘ বাহিনীকে তাদের ফ্যাসিবাদী আক্রমণকে তীব্র করতে সাহস জুগিয়েছে।

২০১৯’র জয়ের পর, মোদী দ্রুত ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটান ও জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নামিয়ে আনা হয় এবং নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, গোয়া ও মণিপুরে বিজেপি’র জয়লাভের পর তারা অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও এতাবৎকাল বিজেপি যেখানে তাদের মুখ কিম্বা মুখোশ হিসেবে নীতীশ কুমারকে ব্যবহার করে এসেছে সেই বিহারেও তারা তাদের নিয়ন্ত্রণকে আঁটোসাঁটো করতে সচেষ্ট। জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও পরিষেবার বিপুল মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোর সাথে সাথে তারা জনগণকে সাম্প্রদায়িকভাবে মেরুকৃত করে তোলার জন্য ঘৃণা ও ত্রাস সৃষ্টি ও হিংসায় প্ররোচনা দিয়ে চলেছে। এমনকি সঙ্কট যখন তীব্রতর হচ্ছে, তখনও জনগণের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া এবং বিজেপি শাসন ও আরএসএস’এর মতাদর্শ মেনে নেওয়ার জন্য ত্রাসের আবহ সৃষ্টিই যেন ভারতের অনিবার্য নিয়তি। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ৭৫তম বার্ষিকী আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শক্তিশালী, বিপ্লবী ঐতিহ্য এবং এক মুক্ত, প্রগতিশীল ও সমানতাবাদী ভারতের যে স্বপ্ন ভগৎসিং, আম্বেদকার ও পেরিয়ার এবং আরও পূর্ববর্তীতে উপনিবেশবাদ বিরোধী, জাতপাত বিরোধী যোদ্ধারা প্রজ্বলিত করেন তার ঊজ্জ্বল স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে। সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা এবং স্বাধীনতা, ন্যায় ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে তীব্র করার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে ভারতকে মুক্ত করার দায়িত্ব এখন আমাদের কাঁধে। এই ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনের জন্য আমাদের প্রয়োজন পার্টির আরও বিস্তার ঘটানো ও শক্তি বৃদ্ধি করা। আগামী বছরের শুরুতে পাটনায় আমরা পার্টির ১১তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করতে চলেছি আর ২০২৪-এর গোড়ায় আমরা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছি। সত্যিকারের নিষ্ঠা নিয়ে সমগ্র পার্টিকে এই কর্তব্যগুলি পালনের জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন নতুন এলাকায় ও জনগণের নতুন নতুন অংশের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যায় প্রার্থী সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে পার্টির বিস্তার ঘটানো, পার্টি কমিটি ও ব্রাঞ্চসমূহের উন্নততর অনুশীলনের মাধ্যমে পার্টির ঐক্য ও সংগ্রামী শক্তির বৃদ্ধি করা এবং পার্টি শৃঙ্খলাকে কঠোরভাবে মেনে চলা ও পার্টি মুখপত্রগুলি ও মার্কসীয় সাহিত্যের সযত্ন অধ্যয়নের মাধ্যমে পার্টির মতাদর্শগত রাজনৈতিক উৎকর্ষসাধনের মধ্য দিয়েই গণসংযোগ ও গণসংগ্রামের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন করেও এই অভিমুখে আমাদের অবশ্যই অগ্রসর হতে হবে।

আমাদের সমস্ত প্রিয় নেতা ও শহীদদের প্রতি বিপ্লবী অভিবাদন। ভারতজুড়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিরোধের এক প্রাণবন্ত, দায়বদ্ধ ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে সিপিআই(এমএল)-কে প্রতিষ্ঠিত করুন।

- কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিআই(এমএল)

খণ্ড-29
সংখ্যা-16