কলকাতা কর্পোরেশন থেকে শুরু করে রাজ্যের জেলায় জেলায় ৯৯ শতাংশ পৌরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল। পরিষেবা সংস্কারের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ভাবমূর্তির দৌলতে, আবার এইসব প্রশ্নেই দুর্নীতি-দলতন্ত্রের শিকার হওয়া হয়রানি-বৈষম্য-বঞ্চনার প্রচুর প্রতিক্রিয়া সত্বেও যে সুকৌশলে অসম্ভব ‘জনপ্রিয়তাবাদ’কে সম্ভব করে তোলা হয়েছে তার নজির মেলা ভার। তবু তাড়া করে চলছে বকেয়া প্রশ্ন। মহানগরীর কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার পরদিনই প্রভাতী দৈনিকে প্রকাশ হয়েছিল এক অদ্ভুত খবর। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিদের গরিষ্ঠাংশের পেনশন বন্দোবস্ত পড়ে রয়েছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার আবর্তে। বিশেষ করে ২০২১-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে যারা অবসর গ্রহণ করে আসছেন তাদের। কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের সূত্রের তথ্য হল, রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা খুব খারাপ। রাজ্য সরকার যে পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে তা অতি অল্পাংশের অবসরকালীন প্রাপ্য মেটাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রতি মাসেই কয়েকশো করে কর্মচারি অবসর নেবেন। তাদের আশি শতাংশের অবসরকালীন মোট প্রাপ্য মিলছে না। তার ওপর পেনশন চালু করা আরও অনির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে। কবে এসব সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শুরু হবে কোনও খবর নেই। নিয়মবশত আগে মেটানো দরকার অবসরকালীন প্রাপ্য, তার পেছন পেছন চালু হওয়া প্রয়োজন পেনশন। মেয়র আশ্বস্ত করতে বলছেন, যতই কোষাগারের টান পড়ুক, দরকার হলে ঠেকিয়ে রাখা হবে ঠিকাদারদের পাওনা, আগে চালু করা হবে পেনশন। এটা নাকি তাঁদের অগ্রাধিকারের নীতি! তা এতই যখন ঢাক পেটানো তাহলে তাঁদের রাজ্য সরকার কি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না? নাহলে মোট যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা তার মাত্র পনেরো-বিশ শতাংশ ঠেকিয়ে হাত গুটিয়ে থাকছে কেন? মেয়র সাহেব তো দলনেত্রীর ঘনিষ্ট বলয়ে থাকা এবং মন্ত্রীসভায়ও মুখ্যমন্ত্রীর খুব কাছের, তো উপরোক্ত সমস্যার সমাধানে কোন কাজের কাজটা করছেন?
কর্পোরেশন সূত্রে অন্যরকম অশনি সংকেত নাকি পাওয়া যাচ্ছে! সেটা হল, অবসরকালীন প্রাপ্যর বড় অংশ আটকে রেখে পেনশন চালু করে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার কবলে পড়া দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রিতার ফন্দি আঁটা হচ্ছে! এরকম শ্রমিক-কর্মচারিদের পাওনা টাকা আটকে রাখা, হিসাবে তালগোল পাকিয়ে দেওয়া — কারচুপি করা, টাকা মেরে দেওয়ার মতো বেআইনি ও ক্ষমাহীন অপরাধ করার রেওয়াজ আছে চটকল বা চা বাগান মালিকদের। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকার বা কর্পোরেশন এসব করে কী করে? সংবিধানের পরোয়া না করে! আরও অভিযোগ আছে। কলকাতা কর্পোরেশনে যে হারে অবসর হচ্ছে সেই তুলনায় পদ ভরাট বা নিয়োগ হচ্ছে না। একেবারে কর্পোরেট মডেলে কাজ উধাও নীতি অনুসৃত হচ্ছে। যার অনিবার্য পরিণাম নিরন্তর কর্মসংকোচন। আর কাজের লোক ক্রমাগত কমে যাওয়ার অবাঞ্ছিত পরিণতি গড়াবে দুরকম। একদিকে যে শ্রমিক-কর্মচারিরা বহাল তাদের ওপর কাজের বোঝা আরও বাড়বে এবং পরিষেবা প্রদান আরও বিলম্বিত দীর্ঘসূত্রী হবে। কারও জানতে বাকি নেই, কলকাতা কর্পোরেশনে তৃণমূল আমলে হাজার হাজার অবসর গ্রহণ হয়ে আসছে। কিন্তু সহজে শূন্যপদ ভরানো হচ্ছে না। নিয়োগ নেই, অবসরকালীন প্রাপ্য মিটছে না, পেনশনও অনিশ্চিত।