উড়িষ্যার মঞ্চেশ্বরে রেলে চুক্তি প্রথায় নিয়োজিত সাফাই কর্মীদের লাগাতার সংগ্রামের পর তাৎপর্যপূর্ণ জয়লাভ হয়েছে। ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের (ই-কোর) মঞ্চেশ্বর রেল ক্যারেজ রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপে জানুয়ারির শেষে ৬৫ জন চুক্তি সাফাই কর্মীকে হঠাৎ কর্মচ্যুত করে চরম দারিদ্র্য ও অনাহারের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। রেলের টেন্ডারের প্রকৃতি পরিবর্তন করে এই কর্মচ্যুতি করা হয়েছে। ১০ বছরের বেশি কর্মে নিযুক্ত ছিলেন এই শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের স্থায়ী কর্মীতে রূপান্তরিত না করে মুখ্য নিয়োজক ই-কোরের রেল প্রশাসন এঁদের ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। তাই ই-কোরের প্রশাসকরা তাঁদের ‘পরিষেবা’ টেন্ডার (সার্ভিস টেন্ডার) বদলে ‘ওয়ার্ক’ টেন্ডারে পরিণত করেন। এই বেআইনি স্বেচ্ছাচারী আদেশের বিরুদ্ধে কর্মীরা ওয়ার্কশপের সামনে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্ণায় বসেন — এআইসিসিটিইউ অন্তর্ভুক্ত ‘ঠেকা সাফাই কর্মচারী ইউনিয়ন’এর ব্যানারে।
টেন্ডারের প্রকৃতি পরিবর্তনের ফলে রেল প্রশাসন চেয়েছিল সমাজের অত্যন্ত নিপীড়িত, দরিদ্র শ্রেণী থেকে আসা এই সাফাই কর্মীদের জীবনের বিনিময়ে অতিরিক্ত ৬৩ লক্ষ টাকা মুনাফা করতে। আগের টেন্ডার অনুযায়ী রেল প্রশাসনের খরচ হত ১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা প্রতি বছরে, নতুন টেন্ডারের ফলে খরচ কমে গিয়ে দাঁড়াতো বছরে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় — যা আগের তুলনায় বিবেকহীনভাবে ৩৩ শতাংশ কম। ফলস্বরূপ কর্মী সংখ্যাও ৬৫ থেকে কমে গিয়ে ঠেকেছিল ২০ জনে। ৪৫ জন কর্মী কর্মচ্যুত হতেন। ঐ ২০ জন সাফাই কর্মী মাসপ্রতি ২১ দিন যে কাজ পেতেন তাও সরকার নির্ধারিত দিনপ্রতি ন্যূনতম ৫৪৬ টাকার কম মজুরিতে।
এআইসিসিটিইউ’র তরফে কেন্দ্রীয় শ্রম দপ্তরে এই ব্যপারে যোগাযোগ করা এবং লাগাতার আন্দোলনের চাপ দেওয়া হয়। এরফলে শ্রম দপ্তর রেল প্রশাসনকে এই বেআইনি কর্মচ্যুতির অবসান ঘটিয়ে ও পুরাতন টেন্ডারের মাধ্যমে কর্মীদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। তবে প্রশাসন তা মেনে নিলেও দু’মাস সময় চেয়ে পুনর্বহালের আশ্বাস দেয়। ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে এবং অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যায়। অবশেষে মুখ্য ওয়ার্কশপ ম্যানেজার কর্মচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি মেনে নেন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট প্রত্যাহৃত হয়।