রাশিয়া, ইউক্রেনের উপর হামলা বন্ধ করো! আমেরিকা-ন্যাটো সম্প্রসারণ বন্ধ করো!
Stop-Russia's-War-on-Ukraine

ইউক্রেন রাশিয়ার বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ। সেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এক বড় রকমের আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি করেছে। রাশিয়ার বোমাবর্ষণে সাধারণ নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির এবং নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক ইউক্রেনীয়দের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ আসছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ-এ রাশিয়ার বোমাবর্ষণে অন্তত একজন ভারতীয় ছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন, আর দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ছাত্রদের, ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে বা সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করলে, বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক ও ডোনেস্ককে স্বাধীন গণ প্রজাতন্ত্র হিসাবে রাশিয়ার কূটনৈতিক স্বীকৃতির ঘোষণা এবং ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী’ হিসাবে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের পরপরই ইউক্রেনের উপর এই হামলা হল।

যুদ্ধ শুরু হতেই গোটা বিশ্ব প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে, রাশিয়ার মধ্যেও প্রতিবাদ চলছে, এমনকি মূলত রুশ-ভাষাভাষী লুহানস্ক ও ডোনেস্কের স্বীকৃতিকে আগে যারা সমর্থন জানিয়েছিলেন, তারাও সামিল হয়েছেন এই বিক্ষোভে। রাশিয়ার ও ইউক্রেনের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বন্ধন রয়েছে, পুলিশি দমন পীড়ন আর ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও রাশিয়ার মানুষ অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানাতে রাস্তায় নেমেছেন। রাশিয়ার বহু বিশিষ্ট মানুষ প্রকাশ্যে যুদ্ধ বিরোধিতায় নেমেছেন। ৪০০০-এরও বেশি রুশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান-সাংবাদিক যুদ্ধবিরোধী এক খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

মাত্র এক শতাব্দী আগে, এই ভূখণ্ড এক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে বিপ্লবে পরিণত করেছিল! দুনিয়া কাঁপানো রুশ বিপ্লবের দশ দিন সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খলের দুর্বলতম জোড়ে আঘাত হেনে জারের রাশিয়াকে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত করেছিল! বিজয়ী বিপ্লব জারের সাম্রাজ্য যা প্রকৃত অর্থেই ছিল জাতিসত্তাগুলির কারাগার, তাকে পরিণত করছিল এক সমাজতান্ত্রিক সংঘে — গড়ে উঠেছিল সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ইউনিয়ন। জাতিসত্তা প্রশ্নে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণও একটি মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নিয়েছিল — প্রত্যেকটি জাতিসত্তার সদস্যপদে ইস্তফা দেওয়ার অধিকারসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছিল বহুজাতিক ঐক্যের এক আদর্শ। এটা সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র নভেম্বর বিপ্লব জারের স্বৈরতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল বলেই নয়, ভীষণ উগ্র জাতীয়তাবাদ/ উৎকট স্বাদেশিকতাকেও অতিক্রম করতে পেরেছিল বলেও।

বেশ কয়েক বছর হল, সোভিয়েত সমাজবাদ তার পথ হারিয়েছে।আজ সমাজবাদের আমলাতান্ত্রিক অধঃপতন এবং জাতিসত্তাগুলোর সমাজতান্ত্রিক সংঘের ঐক্যের ক্ষয় সম্পূর্ণ পতন ডেকে নিয়ে এলো আর সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ইউক্রেন ১৯৯১-তে সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল। বেশ কয়েক বছর ইউক্রেন একদিকে রাশিয়া অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিল। সেই ভারসাম্য টলে গেল ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে ইয়ানুকোভিচ সরকারের পতন এবং তারপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে রণকৌশলগত মিত্রতার খোঁজে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর।

২০১৪-র সংকট ও সংঘাতের সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানে মধ্যস্থতায় এগিয়ে এসেছিল ফ্রান্স ও জার্মানি। তার ফলশ্রুতিতে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে এক শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়া, ইউক্রেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং লুহানস্ক ও ডোনেস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা মিনস্ক-১ মিনস্ক-২ চুক্তি (সেপ্টেম্বর ২০১৪ ও ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ) নামে পরিচিত। এর ফলে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হয় ও বৈরিতা খানিকটা কমে। কিন্তু রাশিয়ার হস্তক্ষেপে তৈরি হওয়া শক্তির ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন ঘটল চুক্তিতে, তাছাড়া চুক্তিগুলো কখনোই সম্পূর্ণ রূপায়িত হয়নি। ফলে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছালো। পুতিন ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে, “লেনিনের ইউক্রেন” বলে অভিহিত করলেন এবং লেনিনের উত্তরাধিকার ধ্বংসের জন্য উঠে-পড়ে লাগলেন। আর ইউক্রেন ইইউ ও ন্যাটোর মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎ খুঁজতে লাগলো।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান এখনও হতে পারতো সুষ্ঠু বোঝাপড়ার মাধ্যমে এমন কোন চুক্তিতে যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের বিষয়টির সঙ্গে আভ্যন্তরীণ বিকেন্দ্রীকরণ ও রুশ জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারের নিশ্চয়তার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু ন্যাটোর বিরামহীন পূর্বমুখী সম্প্রসারণ ও ইউক্রেনের রণকৌশলকগত জোটের জন্য ই ইউ এবং ন্যাটোর সঙ্গে থাকার জেদও এ পথে একটা অন্তরায়। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর্বে এক সামরিক জোট সঙ্গী হিসেবে ন্যাটোর উপস্থিতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া এবং ওয়ারশ প্যাক্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিরর্থক হয়েছে। ন্যাটো শুধু একটা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধই শুরু করেনি, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ১৯৪৯-য়ে বারো থেকে ২০২০-তে ত্রিশ করার মাধমে ইউরোপে গভীরতর অনুপ্রবেশ চালিয়ে যাচ্ছে।

যদিও ন্যাটো এখনও ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়নি আর সেই কারণে ইউক্রেনের সমর্থনে প্রকাশ্য সামরিক প্রতিশ্রুতি থামিয়ে রেখেছে, কিন্তু ই ইউ, যা আদতে একটি ব্যবসায়িক ব্লক, ইউক্রেনকে অস্ত্র কেনায় টাকা যোগানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে যথার্থ সামরিক জোটসঙ্গীতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। যেহেতু রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্য কথা শুরু হয়েছে, এখন দেখার সত্যিই দু’টি দেশ সমরাভিযান বন্ধ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারে কিনা।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যেকার সংঘর্ষের বিশ্বব্যাপী তাৎপর্য ও প্রভাব নিয়ে ভীষণ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নতুন করে গোটা পৃথিবী জুড়ে সংঘাত এবং ন্যাটো ও রাশিয়া-চীন জোটের অস্ত্র-দৌড়ের অভ্রান্ত ইঙ্গিত রয়েছে। ইউরোপে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশ রাশিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপের সম্ভাব্য সহযোগের মূল্যে মার্কিন সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স-এর স্বার্থকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে। রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপলাইন ইতিমধ্যেই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্ব এখনও কোভিড-১৯ অতিমারীর ভয়াবহ ধ্বংসের যন্ত্রণা, বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দা এবং লাফিয়ে বেড়ে চলা জলবায়ু পরিবর্তনের কষ্টের মধ্যে রয়েছে; এখন আবার আমরা এক ভয়ানক যুদ্ধের ভ্রূকুটিরও সম্মুখীন হয়েছি।

on-Ukraine-End-US-NATO-Expansionism

রাশিয়া এবং গোটা বিশ্বের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান-অভিযান এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ইতিহাস এক কঠিন শিক্ষা তুলে ধরে। আফগানিস্তান আক্রমণ ও দখল, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ভেঙে পড়াকে পথ করে দিয়ে ত্বরান্বিত করেছিল। আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপোষকতা সেখানে কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাস এবং দখল ও লুঠের যুদ্ধকে স্থায়ী করেছিল। আর সে যুদ্ধ চালিয়েছিল আমেরিকা। ইউক্রেনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমী দেশগুলোর প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট আধা সামরিক দলগুলোকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মদত দেওয়ার সংবাদ যথেষ্ট অশুভ ইঙ্গিতবাহী। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে, ইউক্রেনের জন্য রাশিয়া ও পশ্চিমী দেশগুলোর কপট জোর-গলার সমর্থন অন্য সংঘর্ষগুলোর ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানের একেবারে উল্টো। সে সব ক্ষেত্রে পশ্চিমী প্রচারে প্রতিরোধগুলিকে গৎ বাঁধা ছকে ‘শয়তানি চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করা হয়, যেমন প্যালেস্টিনীয়দের সংগ্রাম; আর যুদ্ধ-দীর্ণ দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হওয়া ভীত সন্ত্রস্ত শরণার্থীদের, যেমন সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মানুষদের ‘মানুষ’ বলেই গ্রাহ্য করা হয়নি, হয় না। এগুলো কারও নজর এড়াতে পারে না! আমরা এটাও ভুলতে পারি না যে পুতিন নিজে ‘পরম মিত্র’ হিসেবে বুশ এবং ব্লেয়ারের সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলেন, আদতে চেচনিয়ায় বর্বর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ! এই সমস্ত ভণ্ডামির পিছনে শুধু উগ্র বর্ণবাদ নয়, তার সঙ্গে আছে পশ্চিমী স্বার্থের ইউক্রেনকে ব্যবহার করে গোটা অঞ্চলে আধিপত্য কায়েমের সূক্ষ্ম চাতুরী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব মানবতার কারণে ইউক্রেন এবং রাশিয়া একযোগে হিটলারের ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের মোকাবিলা করে তাকে পরাস্ত করেছিল। আজ সেই অঞ্চল জুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী চরম দক্ষিণপন্থী শক্তি নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, শক্তি বাড়াচ্ছে, এই সংকটে এবং তার মানুষজনের আরও দীর্ঘকালীন যন্ত্রণাভোগের হুমকির মধ্যেই। সময়ের কী বিচিত্র পরিহাস! আমেরিকায় ট্রাম্প আগাগোড়াই পুতিনের ‘'স্মার্টনেসের'’ প্রশংসা করে গেছেন। আর ভারতে? আমরা দেখতে পাচ্ছি — কীভাবে ভারতের নিজস্ব উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা পুতিনকে একজন ‘রোল মডেল’ হিসেবে দেখছে! সেইসঙ্গে কীভাবে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত, ইউক্রেন যুদ্ধের নিরিখে তা শিখে নিতে চাইছে! অর্থাৎ এই যুদ্ধ এই প্রশ্নে এক আদর্শ মানদণ্ড হয়ে উঠেছে তাদের কাছে! শুধু তা-ই নয়, মোদী এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা এখন ইউক্রেন যুদ্ধের আবাহনে ব্যস্ত কারণ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপি’র ভোটের ঝুলি ভরা চাই! তাই একই ফাটা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে — একটা শক্তিশালী সরকারের কত দরকার আর মোদী কত বড় বিশ্বমাপের নেতা! ওদিকে ইউক্রেনে আটক ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা যে চরম নিরাপত্তাহীনতা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা নিয়ে সরকারের মাথা ঘামানোর সময় নেই। ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ইউক্রেন থেকে সময়মত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মোদী সরকার কার্যত কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। বরং সীমান্ত পার হতে গিয়ে ভারতীয় পড়ুয়ারা যে বর্ণবাদী আক্রমণের মুখে পড়েছে সেটা নিয়ে বাজার গরম করছে।

পৃথিবী জুড়ে শান্তিকামী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে দাবি জানাতে হবে — অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করো! ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও সেখানকার জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারগুলিকে সম্মান জানিয়ে এবং ঐ অঞ্চলে শান্তি ও সুস্থিতিকে সুনিশ্চিত করে সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান করো! প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তির জন্য মার্কিন-ন্যাটো সম্প্রসারণবাদও বন্ধ হোক! ন্যাটোকে ভেঙে দেওয়া হোক!

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয় ১ মার্চ, ২০২২)

খণ্ড-29
সংখ্যা-10