শিল্প বিপ্লবের আগের বিশ্বের তুলনায় বর্তমান বিশ্বের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি হয়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ইতিমধ্যেই আগের সময়ের তুলনায় অনেক তীব্র ও অনিয়মিত চেহারা নিয়ে বন্যা, ঝড়, খরা, ভূমিধ্বস ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুততর হারে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। সব দেশেই এর প্রকোপ পড়ছে। ভারতের মত বিপুল উপকূল এলাকা সম্পন্ন এবং জনবহুল অথচ দরিদ্র দেশে এর প্রভাব অনেক মারাত্মক চেহারা নেবে, ভারতের চারটি উপকূলবর্তী নগরী — মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা ও ভুবনেশ্বর — জলমগ্ন হয়ে যেতে পারে ২০৫০ সালের মধ্যে।
গ্লাসগো শহরে ২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে সিওপি ২২ জলবায়ু সম্মেলনে ভারত সরকার জলবায়ু সম্পর্কিত দায়বদ্ধতায় স্বাক্ষর করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পাঁচটি মূল করণীয় ঘোষণা করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। সেগুলি হল,
• ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য নামিয়ে আনবে।
• ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে অ-জীবাশ্মজাত শক্তি উৎপাদন ৫০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।
• ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার অর্থনীতির কার্বন-তীব্রতা ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে।
• ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার শক্তি চাহিদার ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দ্বারা পূরণ করবে।
• বর্তমান হিসেবের প্রজেকশনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ভারতে মোট সম্ভাব্য কার্বন নিঃসরণ যা হওয়ার কথা তার তুলনায় ১০০ কোটি টন কম নিঃসরণ ভারত করবে ২০৩০ সালের মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রী এই পাঁচটি কর্তব্যকে ‘পঞ্চামৃত’ বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই পঞ্চামৃত ঘোষণাও কি ‘বছরে দুই কোটি চাকরি’ বা ‘একাউন্টে পনের লাখ টাকা’র মতোই জুমলা মাত্র? নইলে দেউচা-পাঁচামী-দেওয়ানগঞ্জ-হরিণসিঙ্গা সহ ডজন দুয়েক নতুন কয়লাখনি কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র পায় কী করে? জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির মধ্যে পেট্রল, ডিজেল বা গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি কার্বন নিঃসরণ হয় কয়লা পোড়ালে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রথম ও প্রধান অপরিহার্য পদক্ষেপ হল বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা নির্ভরতাকে দ্রুত হারে কমিয়ে আনা। আগামি ৫০ বছরে (২০৭০ সালের মধ্যে) নিঃসরণ শূন্য করে ফেলার অমৃতবাণী শোনানো হল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, আর এখানে এসে মানুষকে বলা হচ্ছে আগামী একশ বছর কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মহান কর্তব্যে ২১ হাজার গ্রামবাসীকে ভিটেমাটি ছেড়ে সরে পড়তে হবে! আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলা হচ্ছে, আগামি আট বছরে (২০৩০ সালের মধ্যে) দেশের সমগ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেকটাই হবে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে, আর এখানে একটি রাজ্য সরকার, যে কিনা ইতিমধ্যেই লক্ষ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত, তরুণ প্রজন্মের কাজ জোটাতে পারেনা, শিক্ষক সহ সমস্ত সরকারি নিয়োগ বন্ধ, শিক্ষকদের পেনশনও নাকি আর দিতে পারবেনা, সেই সরকার ৩৫ হাজার কোটি টাকা (১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে কেবল তথাকথিত পুনর্বাসনের জন্য) খরচ করবে বলছে, কোনও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসে নয়, সেই কয়লাতে! গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে ১৩৭টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে অরণ্য সংকোচন সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু সেই রেজোল্যুশনে সই করতেও অস্বীকার করে মোদী সরকার!